বছরে বার দুয়েক মেরামতি হয় রাস্তা। কিন্তু কখনওই আমূল সংস্কার হয় না। ফলে কয়েক দিনের মধ্যে তাপ্পি উঠে গিয়ে ফের আগের দশা। বর্ষায় খানাখন্দে জল জমে বিপজ্জনক হয়ে পড়ে সড়ক। তার উপর দিয়েই যানবাহন চলাচল করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। দুর্গাপুরে দু’নম্বর জাতীয় সড়কের দুবচুড়ুরিয়া থেকে ভিড়িঙ্গি মোড় পর্যন্ত অংশের এমনই হাল বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
কেন্দ্রীয় সরকারের স্বর্ণ চতুষ্টয় প্রকল্পে প্রায় দেড় দশক আগে পুরনো জি টি রোড সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে গড়া হয়েছিল চার লেনের ঝাঁ চকচকে রাস্তা। আসানসোল থেকে দুর্গাপুর, বর্ধমান হয়ে কলকাতা পর্যন্ত যাতায়াতের প্রধান রাস্তা এটি। কিন্তু এই রাস্তার দুবচুড়ুরিয়া থেকে ভিড়িঙ্গি মোড় পর্যন্ত অংশ রীতিমতো বেহাল। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় সারা বছরই রাস্তার এই অংশ খানাখন্দে ভরা থাকে। বর্ষায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। |
মরণফাঁদ। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্গাপুরের ওল্ডকোর্ট সংলগ্ন এলাকায় ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বনাথ মশান। |
জাতীয় সড়কের ওল্ড কোর্ট, ভিড়িঙ্গি বরাবর গড়ে উঠেছে বিভিন্ন গাড়ি সংস্থার শো-রুম, দোকানপাট, হোটেল ইত্যাদি। রয়েছে সিআইএসএফ ব্যারাক ও আবাসন। দুর্গাপুরের প্রাচীন বেনাচিতি বাজারে ঢুকতে হয় ভিড়িঙ্গি মোড় হয়েই। শুধু দুর্গাপুর নয়, অন্ডাল, উখড়া থেকেও বাসিন্দারা জাতীয় সড়ক ধরে কেনাকাটা করতে আসেন এই বাজারে। কিন্তু বেহাল রাস্তার জন্য তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। বেনাচিতি বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আসানসোল-রানিগঞ্জ থেকে জিনিসপত্র আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।
বাসিন্দারা জানান, বর্ষায় সেই রাস্তায় খন্দে জমা জলের উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে বহু যানবাহন। মালবাহী ট্রাক চলার ফলে রাস্তা আরও উঁচু-নীচু হয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দা গৌতম সাউ, কানু শেখরা বলেন, “রাস্তার এমন অবস্থার জন্য আমরা পারাপার করতে ভয় পাই।” ব্যস্ত সময়ে অফিসযাত্রী ও স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের ভিড়ে বাসগুলিতে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। সেই অবস্থাতেই বেহাল রাস্তার উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকে বাসগুলি। স্কুলপড়ুয়া নীলম পণ্ডিত, মিনা বাদ্যকরেরা জানায়, এই রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে তাদের বুক কাঁপে। রাস্তার এমন দশার জন্য যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয় বলে অভিযোগ গাড়ির চালক ও মালিকদেরও। বরাকর-দুর্গাপুর রুটের একটি বাসের চালক গুরবচন সিংহের কথায়, “আস্তে বাস চালালেও গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়।” বাসে আসানসোল থেকে প্রায়শয়ই কলকাতা যাতায়াত করেন চিত্রা মোড়ের বাসিন্দা তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “দুর্গাপুরের এই দু’কিলোমিটার রাস্তা না পেরোনো পর্যন্ত স্বস্তি পাই না।”
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাটির গুণমান যাচাই করে সেই অনুযায়ী রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এর আগে রাজবাঁধের কাছে কিলোমিটার দুয়েক রাস্তা বেহাল ছিল। বারবার তাপ্পি দিলেও দিন কয়েকের মধ্যেই তা উঠে যেত। শেষ পর্যন্ত রাস্তার এক দিক বন্ধ করে সেই অংশের নির্মাণ পুরো তুলে ফেলে দিয়ে মাটি পরীক্ষার পরে রাস্তার পুননির্মাণ করা হয়। সে ভাবেই দুবচুরুলিয়া থেকে ভিড়িঙ্গি পর্যন্ত রাস্তা নতুন করে নির্মাণের দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের চিফ জেনারেল ম্যানেজার অজয় অহলুওয়ালিয়া অবশ্য বলেন, “কেন রাস্তা বারবার ভাঙছে তা খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |