মালদহ জেলার দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তীয় অংশে গঙ্গা নদীর প্রবাহপথে বেশ কিছু চর জেগে উঠেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে হামিদপুর, নারায়ণপুর, গদাধরপুর, গোপালপুর চর ইত্যাদি। গঙ্গার বক্ষে চরগুলির গঠন ক্রিয়া এখনও চলছে। তাই তারা সক্রিয়। বর্তমানে গঙ্গার বক্ষে ২০-২৫টি’র মতো ছোট-বড় চর আছে।
১৯৬৮ থেকে গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়েছে। সেই ভাঙনে মালদহ জেলার গঙ্গার পূর্ববর্তী বেশ কিছু গ্রামকে গঙ্গা গ্রাস করে নেয়। সেই সব গ্রামগুলির বসত বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে যায়। এখন তাদের স্থায়ী ঠিকানা গঙ্গা বক্ষে জেগে ওঠা চরগুলিতে। এই চরবাসীরা বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত।
|
গঙ্গা নদীর প্রবাহমান জলধারার মধ্যে নারায়ণপুর চরের উৎপত্তি। চরের পশ্চিম প্রান্তে আছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য। পূর্ব দিকে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা। এই হল নারায়ণপুর চরের ভৌগোলিক অবস্থান। চরবাসীরা বর্তমান সময়ের থেকে বেশ কিছু সময় পিছিয়ে রয়েছেন। এমনকী জেলার অন্য প্রান্তের মানুষের থেকে চরবাসীরা অনেক অনেক পিছিয়ে। এঁরা ভারতীয় হলেও এঁদের নেই কোনও প্রমাণপত্র। রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, জব কার্ড কিছুই নেই। এখানে পোলিও টিকাকরণ, একশো দিনের কাজ কোনও কিছুর সুব্যবস্থা নেই। শিক্ষার একমাত্র ব্যবস্থা হল একটি ঠিকানাহীন জরাজীর্ণ প্রাথমিক স্কুল। স্কুলটিতে আছেন দু’জন শিক্ষক। যাঁরা প্রায়ই অনিয়মিত থাকেন।
স্কুলের মিড ডে মিল নিয়ে চরবাসীদের বহু অভিযোগ রয়েছে। নেই কোনও চিকিৎসাব্যবস্থা। চিকিৎসার জন্য যেতে হয় মানিকচক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পানীয় জল, সেচ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, কৃষিকাজ কোনও কিছুতেই সরকারি সাহায্য খুঁজে পাওয়া যায় না। রয়েছে কেবল মিথ্যে প্রতিশ্রুতি। |
চরবাসীদের একটি বিশেষ সমস্যা, এঁদের নির্দিষ্ট জীবিকা নেই। মাছধরা, কৃষিকাজ, দিনমজুরি, নৌকাপারাপারের কাজ করে এখানকার মানুষ কাজ করেন। কেউ কেউ কাজ না পেয়ে অসামাজিক কাজেও যুক্ত হয়ে পড়েন। ফলে চরবাসীদের সামাজিক পরিবেশ সার্বিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এঁদের কেউ পঞ্চায়েত সদস্য নন। তাই হয়ত এঁদের কথা কেউ ভাবেন না।
এঁরা মধ্যযুগীয় পরিকাঠামোয় বাস করছেন। এটা আমাদের এক অপরাধ। আমার বিনীত অনুরোধ, মালদহ জেলার প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা যদি এঁদের কথা একটু ভাবেন, তবে এঁদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা উন্নত হতে পারে। আর ভৌগোলিক অবস্থান যদি তাঁদের পিছিয়ে পড়ার কারণ হয় তবে দোষ তাঁদের নয়।
চৌধুরী আসগর আলি। মালদহ
|