ভাই মিড-ডে মিলের খাবার খাচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে দাদা কিংবা দিদি। ভাইয়ের খাওয়া শেষ হলে সেই থালা ধুয়ে সে খেতে বসবে। আবার কেউ কেউ গাছের পাতা পেতে খাবার খায়।
বাঘমুণ্ডি ব্লকের অনেক প্রাথমিক স্কুলেই এই ছবি দেখা যায়। বাড়িতে বাড়তি থালা না থাকায় গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা এ ভাবেই এত দিন মিড-ডে মিলের খাবার খেত। এ বার সেই ছবিটা বদলাচ্ছে। বদলালেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো। শনিবার তিনি বাঘমুণ্ডি হাইস্কুলে ব্লকের ১৩৮টি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের ডেকে ১২ হাজার ৪২৮ জন খুদে পড়ুয়ার খাবার জন্য থালা দিলেন। বললেন, “বিধায়কের এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকেই থালাগুলি দেওয়া হল। রাজ্যের পরিকল্পনা দফতর প্রথমে এই কাজের জন্য টাকা বরাদ্দ করতে চায়নি। পরে এলাকার ছেলেমেয়েদের সমস্যার কথা জানাতে সম্মত হয়।” |
প্রায় গোটা অযোধ্যা পাহাড় নেপালবাবুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে। তাঁর অভিজ্ঞতা, “এই এলাকার অনেক অভিভাবকের একাধিক ছেলেমেয়ে প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। কিন্তু তাদের সবার জন্য আলাদা থালা কিনে দেওয়া গরিব অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব নয়। একজন যখন খেত তখন অন্য জন পাশে দাঁড়িয়ে থাকত।”
বিধায়ক দলের প্রতিনিধি হয়ে গোয়ার কয়েকটি স্কুলের মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা দেখে নেপালবাবুর সম্প্রতি অন্য অভিজ্ঞতা হয়। তিনি বলেন, “গোয়ায় দেখি প্রাইমারি স্কুলের ক্যান্টিনে চেয়ার-টেবিলে ছাত্রছাত্রীদের খাবার দেওয়া হচ্ছে। আমার এলাকায় এখনই তা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রত্যেককে একটা করে থালা দেওয়ার পরিকল্পনা তখনই আমার মাথায় আসে।’’ বিধায়ক জানান, পড়ুয়ারা বাড়িতে থালা নিয়ে যেতে পারবে না। খাবার পড়ে স্কুলেই থালা রাখা হবে। সে জন্য স্কুল পিছু একটি করে বড় বাক্স ও তালা দেওয়া হয়। ঝালদা সত্যভামা বিদ্যাপীঠের গণিত শিক্ষক নেপালবাবু জানান, অনেকে বাড়ি থেকে থালা বাজিয়ে স্কুলে আসত। এতে স্কুলের পড়াশোনার পরিবেশও নষ্ট হত। এ বার আর ওসব হবে না।
বাঘমুণ্ডির বিডিও শুভঙ্কর রায় বলেন, “বিধায়কের এই উদ্যোগ অভিনব। পড়ুয়া তো বটেই শিক্ষকদেরও এতে সুবিধা হবে।” বাঘমুণ্ডি ২ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুমিতকুমার রায় বলেন, “থালাগুলি পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে পড়ুয়াদের সতর্ক করাও দরকার।” শিক্ষক হিরাধর কুইরি, স্বপনকুমার ঘোষ জানান, পড়ুয়াদের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতন করা হবে। |