|
|
|
|
পশ্চিম মেদিনীপুর |
গ্রাম উন্নয়ন সমিতির জন্য বরাদ্দ কোটি টাকাই পড়ে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ঘোষিত লক্ষ্য। সেই ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ প্রকৃতই তৃণমূলস্তরে পৌঁছতে ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতে আরও একটি স্তর যুক্ত হয়েছিল। সেই চতুর্থ-স্তর বা গ্রাম সংসদ-পিছু গ্রাম উন্নয়ন সমিতি থাকারও কথা। সেই সমিতির জন্য অর্থ-বরাদ্দেরও ব্যবস্থা রয়েছে। যে অর্থে কুয়োর পাড় বাঁধানো, নিকাশি নালা তৈরির মতো তৃণমূলস্তরের প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু কাজ করা যায়। সে জন্যই বরাদ্দ। অথচ, পশ্চিম মেদিনীপুরে গত এক বছরে গ্রাম উন্নয়ন সমিতির জন্য বরাদ্দ টাকার পুরোটাই প্রায় পড়ে রয়েছে। মানে ন্যূনতম প্রয়োজনের কাজটুকুও হয়নি!
২০১১-’১২ আর্থিক বছরে জেলায় গ্রাম উন্নয়ন সমিতি-র খাতে ১ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও এক টাকাও খরচ হয়নি! যদিও জেলা-প্রশাসনের বক্তব্য, কিছু ক্ষেত্রে কাজ হলেও সময়ে কাজের শংসাপত্র বা ইউ-সি (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) জমা পড়ে না। তাই পরিসংখ্যানে টাকা পড়ে থাকার ছবি উঠে আসছে। তবে সমিতির জন্য বরাদ্দ টাকার সিংহভাগই যে পড়ে রয়েছে, তা মানছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “কেন এমন হল তা খতিয়ে দেখছি।” সেই সঙ্গেই তাঁর অনুযোগ, “কাজ এগোতে গেলে প্রশাসনের সব-স্তরে সমন্বয় প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে তা থাকছে না। ফলে সমস্যা হচ্ছে।” এ ক্ষেত্রে নজরদারিরও অভাব রয়েছে বলে মনে করেন জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা অরুণ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ক্লোজ মনিটরিং করা প্রয়োজন। না হলে এ ভাবেই বরাদ্দ টাকা পড়ে থাকবে।”
গত এক বছরে রাজনৈতিক ‘অস্থিরতার’ জেরে বহু গ্রামেই ‘গ্রাম উন্নয়ন সমিতি’-র বৈঠক করাই যায়নি। তার ফলেই সমিতির জন্য বরাদ্দ অর্থও খরচ করা সম্ভব হয়নি। কেননা, কাজের পরিকল্পনা সমিতির বৈঠকে অনুমোদিত হতে হয়। বছর দেড়েক আগেও পশ্চিম মেদিনীপুর ছিল সিপিএমের ‘দুর্গ’। জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৯টি বাদ দিয়ে বাকি সবই সিপিএমের দখলে। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যেও ২টি বাদে ২৭টিই সিপিএমের। জেলা পরিষদও তাদের। জেলায় ৩ হাজার ৮৬টি গ্রাম-সংসদ রয়েছে। সবথেকে বেশি সংসদ রয়েছে কেশপুরে, ১৮৫টি। আর সবথেকে কম সংসদ চন্দ্রকোনা-২ ব্লকে। গপ্রায় সবক’টি গ্রাম সংসদেই ছিল সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের ‘একক নিয়ন্ত্রণ’। বিধানসভা ভোটে রাজ্যে পালাবদলের জেরে সেই অবস্থাটাই পাল্টেছে। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি’র স্তরেও সিপিএম প্রতিনিধিদের অনেকে এলাকাছাড়া হন। অনেক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। ফলে, উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
বহু প্রকল্পের কাজই সময় মতো এগোনো সম্ভব হয়নি। গ্রাম উন্নয়ন সমিতি-র জন্য বরাদ্দ টাকা খরচের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জেলা প্রশাসনের অনেকে। ২০০৮-’০৯ আর্থিক বছরে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি-র জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ২ কোটি ২২ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। খরচ হয়েছিল ১ কোটি ৮৪ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। ২০০৯-’১০ আর্থিক বছরে বরাদ্দ হয় ২ কোটি ৪৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। খরচ হয় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৭৮ টাকা। ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে বরাদ্দ হয় ৩ কোটি ২ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা। খরচ হয়েছিল ৭১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। অন্য দিকে, ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে বরাদ্দ ১ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার প্রায় পুরোটাই পড়ে রয়েছে (চার বছর মিলিয়ে মোট পড়ে রয়েছে ৪ কোটি ৬৩ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫২২ টাকা)!
রাজনৈতিক ‘অস্থিরতা’র বাইরে প্রশাসনিক-স্তরে সমন্বয়ের অভাবকেও অবশ্য দায়ী করছেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে জেলাস্তরের বৈঠকে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কাউকে ডাকাই হয় না। তার উপরে আবার এখন বিডিওদের ক্ষমতা বাড়িয়ে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা খর্ব করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ জেলা পরিষদের এক কর্মাধ্যক্ষের। তাঁর বক্তব্য, “প্রশাসনিক কেন্দ্রিকতা পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ আদর্শটাকেই তো এখন আঘাত করছে। গ্রাম উন্নয়ন সমিতি-কে অপ্রাসঙ্গিক করা হলে তার জন্য বরাদ্দ অর্থই বা কী করে খরচ হবে!” জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতারও বক্তব্য, “সমিতিগুলো সচল থাকলে এই অবস্থা হত না।” |
|
|
|
|
|