হাওড়া শহরে এমন অনেক সমস্যা রয়েছে যা সব সময় প্রচারের আলো পায় না। হাওড়ার অত্যন্ত প্রাচীন ‘ক্ষুদ্র ও কুটীর শিল্প’ হল হোসিয়ারি শিল্প। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের শিল্প ভীষণ শব্দ ও বায়ুদূষণ সৃষ্টি করছে। তীব্র শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী বডি মেশিন বসানো হচ্ছে যত্রতত্র। এমনকী বসবাসের জন্য নির্মিত বহুতলের দোতলা বা তিন তলায় এই সব বডি মেশিন বসিয়ে উৎপাদন চলছে। হাওড়ার সালকিয়ার ত্রিপুরা রায় লেন, কালীতলা লেন, মদন বিশ্বাস লেনের বাসিন্দারা এই সমস্যায় জর্জরিত। কারখানাগুলিতে উৎপাদন চলে সকাল সাতটা থেকে রাত এগারোটা/ সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত। এই সব কারখানায় সারা দিন রেডিয়ো বাজানো হয়। কারখানার একটানা শব্দে ক্ষতি হচ্ছে আশপাশের বাড়ির শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও অসুস্থদের। পড়ুয়ারা পড়াশোনা করতে পারছে না। স্থানীয় কাউন্সিলর, হাওড়া পুরসভা ও প্রশাসন সব জেনেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
অথচ আধুনিক শব্দবিহীন মেশিন পাওয়া যায়। খরচ বাঁচানোর জন্য এই সব হোসিয়ারি কারখানার মালিকরা মানুষের ক্ষতি করে মান্ধাতার আমলের মেশিনে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। হাওড়ার মতো ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে তীব্র শব্দ ও বায়ুদূষণ সৃষ্টিকারী এ ধরনের কারখানা থাকাই উচিত নয়। হাওড়া শহরের আরও অনেক অনিয়মের মতো এটাও নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ সব কারখানার ক্ষতিকর দিক নিয়ে এত দিন কিছুই ভাবা হয়নি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কারখানাগুলি কী ভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে, তা সরেজমিনে দেখা দরকার। ‘কুটীর ও ক্ষুদ্র শিল্পে’র তকমা নিয়ে এরা দিনের পর দিন তিলে তিলে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিনীত আবেদন, হোসিয়ারি শিল্পে দূষণ সৃষ্টিকারী মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক ভাবে বন্ধ করুন। এতে হাওড়া শহরের মানুষ নিত্য যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচবেন।
সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। সালকিয়া, হাওড়া-৬
|
সব স্কুলেই বাংলা পড়ানো দরকার |
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘এ রাজ্যের পাহাড়ে বাংলা ভাষা থাকবে না?’ শীর্ষক নিবন্ধে (১৮-৭) ঠিকই প্রশ্ন তুলেছেন দার্জিলিঙের নেপালিরা এক বর্ণও বাংলা জানবেন না? আসলে তাঁদের বাংলা ভাষা জানার আগ্রহ বা ইচ্ছে আদৌ নেই। পাঁচ-ছ’ বার দার্জিলিঙে বেড়াতে যাওয়ার সুবাদে দেখেছি, সেখানে এক পেয়ালা চা খেতে হলেও হিন্দি কিংবা ইংরেজি ভাষায় দোকানদারের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হয়।
সবচেয়ে করুণ অবস্থা দার্জিলিঙ সরকারি মহাবিদ্যালয় এবং সরকারি বিদ্যালয়ে। দার্জিলিঙ সরকারি কলেজে এক জন বাংলার অধ্যাপক ম্যালে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করছিলেন এই বলে যে, তাঁদের কলেজের বাংলা সাম্মানিক বিভাগে একটি ছাত্রও বাংলা নিয়ে পড়ে না। দু’জন অধ্যাপক আছি। কলেজে গিয়ে মাছি তাড়াই। আর সন্ধেয় ম্যালে আসি বাঙালি পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলব বলে। এই পাহাড়বাসী হয়ে নির্বাসনে কত দিন থাকতে হবে জানি না! এই ঘটনা বছর পাঁচেক আগের। সেই অবস্থা বোধ করি এখনও পাল্টায়নি।
দার্জিলিঙের কথা না-হয় বাদই দিলাম। এখন খোদ কলকাতায়ও চা খেতে চাইলে হিন্দিতে কথা বলতে হয়। বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের কাছে সম্প্রতি এক চা-বিক্রেতার কাছে এক ভাঁড় চা চাইলে সে প্রশ্ন করল, বাবু, চায়ে বিনা চিনি কে লিয়ে অর চিনি কি লিয়ে। বাংলা ভাষা (মাতৃভাষা) ভুলে আমাকেও বলতে হল, চিনি কে লিয়ে। ইদানীং মধ্য কলকাতার সর্বত্র দোকানে-বাজারে-রাস্তাঘাটে বাংলা ভাষায় কথাবার্তা কমে যাচ্ছে। এক জন রিকশাচালকও বলছে, বাবু রাস্তা ছোড়কে। এই সব দেখেশুনে মনে হয়, তিরিশ-চল্লিশ বছর পরে কলকাতা থেকেই বাংলা ভাষা উবে যাবে। বিশেষত দোকানপাট, রাস্তাঘাট, বাজারহাট থেকে।
ইদানীং মফস্সল বাংলায়ও যে ভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল গজিয়ে উঠছে, তাতে বাংলা ভাষা অদূর ভবিষ্যতে আরও বিপন্ন হয়ে পড়বে বলেই মনে হয়। ইংরেজি ভাষার স্কুলগুলিতে হিন্দিকে দ্বিতীয় মাতৃভাষা হিসাবে না-পড়িয়ে বাংলা ভাষাকেই দ্বিতীয় মাতৃভাষা হিসেবে পড়ানো আবশ্যক। এতে বাঙালি ছাত্রছাত্রীরা বাংলা ভাষাটা অন্তত কিছুটা শিখবে। নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা বাংলা ভাষা না-শিখলে এই বাংলায় মাতৃভাষাই দুয়োরানি হয়ে যাবে বলে মনে হয়।
তুষার ভট্টাচার্য। কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ
|
শ্রদ্ধেয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনা ‘এ রাজ্যের পাহাড়ে বাংলা ভাষা থাকবে না?’ (১৮-৭) প্রসঙ্গে জানাই যে, গত ১২-১৪ জুলাই আমি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ‘রিফ্রেশার্স’ কোর্সে বক্তৃতা দিতে গিয়ে জানলাম যে, ইদানীং নেপালিভাষী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই কৃতিত্বের সঙ্গে বাংলায় অনার্স, এম এ পাশ করছে এবং শিক্ষকতায় নিযুক্ত হচ্ছে। নেপালিভাষী ওই ছাত্রছাত্রীদের বাংলা নিয়ে পড়তে আসাটা স্বতঃস্ফূর্ত। তবে, সুনীলদার সঙ্গে সকল বঙ্গভাষী আশা করি একমত হবেন যে, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি স্কুলে বাংলা ভাষা পড়ানো আবশ্যিক হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, আমার অবস্থানকালে ১৩ জুলাই নেপালি কবি ভানুভক্তের জন্মদিন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ছিল। ওই দিন নিকটবর্তী আঠারোঘাই অঞ্চলে একটি সংস্থা ‘রবীন্দ্রনাথ ও গ্রামবাংলা’ বিষয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে। সেখানে আলোচনা শুরু হওয়ার আগে কবি ভানুভক্তের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।
শিশির মজুমদার। প্রাক্তন অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ইউনিভার্সিটি-কলেজ, রায়গঞ্জ |