জল চুরির দাপটে ভুগছে দক্ষিণ শহরতলির একটা বড় অংশ। হয় পুরসভার জলের সংযোগ নেই, থাকলেও চাপ কম। গভীর নলকূপের জলে আর্সেনিক-দূষণের আতঙ্ক। বাধ্য হয়েই আবাসিকদের অনেকে জল কেনার রাস্তায় হাঁটছেন। তাঁদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ার সুযোগে ব্যবসা ফেঁদেছেন জল সরবরাহকারীদের একাংশ। অভিযোগ, পুরসভার অনুমতি ছাড়াই তাঁরা ‘এয়ার ভালভ’ থেকে জল বার করে নিচ্ছেন। ফলে পাইপে জলের চাপ ক্রমশ কমছে।
দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন অংশে পরিস্রুত পানীয় জল যায় গার্ডেনরিচ থেকে। বাইপাসের দু’ধারে সম্প্রতি যে সব প্রকল্প হয়েছে, বেশির ভাগেরই এই জলের সংযোগ নেই। এমনকী, বহু বছর আগে মোটা টাকায় ফ্ল্যাট কিনে ও চড়া হারে পুরকর দিয়েও জল পাচ্ছেন না হাইল্যান্ড পার্কের বাসিন্দারা। সুপ্রিয় চৌধুরী নামে এক বাসিন্দা বলেন, “গভীর নলকূপের জল শোধন করে আমাদের ফ্ল্যাটে আসে। কবে থেকে শুনছি ধাপা পাম্পিং স্টেশন হলে পুরসভার জল পাব। ভূগর্ভের জলে আর্সেনিক-দূষণের জন্যেও চিন্তা বাড়ছে।” |
চলছে এয়ার ভাল্ভ থেকে ‘জল চুরি’। —নিজস্ব চিত্র |
পুরসভার জল আগে যে পরিমাণে আসত, এখন আসে না বলে অভিযোগ সার্ভে পার্কের বাসিন্দা অলকেশ দে ভৌমিকের। স্থানীয় আর এক বাসিন্দা মন্টু প্রামাণিক বলেন, “জলের জোগান এত কম যে বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।”
বাড়তি জলের চাহিদা মেটাতে নেমে পড়েছেন বুলা মণ্ডল, হারু নস্করের মতো অসংখ্য জোগানদারেরা। সকাল সাড়ে ছ’টায় গার্ডেনরিচের জল আসা শুরুর আগেই ওঁরা ঠেলা-ভ্যান নিয়ে জড়ো হয়ে যান খালপাড়ের এয়ার ভালভের সামনে। কৌশলে যন্ত্রাংশ নিয়ন্ত্রণ করে ত্রিমুখী জলধারা ভরতে থাকে ২০ লিটারের জেরিক্যানে। একটি ভ্যানে এরকম ২০টি জেরিক্যান নিয়ে বাড়ি বাড়ি বিক্রি চলে। যোগেন দাস নামে এক রিকশাওয়ালাও জানান, ‘পরিচিত’-দের বাড়িতে জল বিক্রি করে বাড়তি আয় হচ্ছে।
পাইপের জলের চাপে সমতা রাখতে নির্দিষ্ট অংশে থাকে এয়ার ভালভ। এগুলিতে চাপ দিয়ে জল বার করে নিলে সমস্যা হবে-- এ কথা মানছেন কলকাতা পুরসভার জল-সরবরাহ বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল বিভাস মাইতি। তিনি বলেন, “আমরা অসহায়। কী ভাবে চুরি আটকাব? পুরসভার পক্ষে সর্বত্র পানীয় জল জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যাঁরা জল পাচ্ছেন না তাঁরা যে ভাবেই হোক চাইছেন। তাই যাঁরা এই উপায়ে জল জোগাড় করে বিক্রি করছেন, তাঁরাও যে কোনও ভাবে কাজটা চালাবেন।” |