সব্জির বাজারে আঁচ কমলেও ফলের বাজার আগুন!
ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানি করা আপেল, নাশপাতি, বেদানার মতো ফলের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনই বেশি এ রাজ্যে উৎপাদন হওয়া শসা, পেয়ারা, কাঁঠালি কলা, আমের দামও। ফল-বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, সার্বিক ভাবেই এ বার ফলের উৎপাদন কম হয়েছে। কোনও কোনও জায়গায় উৎপাদন একটু দেরিতেও হয়েছে। ফলে, ঠিক সময়ে ফল আসছে না কোনও বাজারে। তবে শুধু উৎপাদন কম হওয়াই এর কারণ, না কি এর পিছনেও রয়েছে সব্জি-বাজারের মতো এক শ্রেণির ফড়ে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। ফল-বিক্রেতারা জানান, সব্জি-বাজারের তুলনায় ফল-বাজারে ফড়েদের দাপট কম হলেও এখন পেয়ারা, কলার মতো ফলও সরাসরি না এসে হাত ঘুরে বাজারে আসছে। ফলে দামের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বাজারে কিছুটা তো পড়েই।
বড়বাজারের মেছুয়া ফলপট্টিতে শিমলার আপেলের পাইকারি বাজারেই দাম কিলো প্রতি ১০০ টাকার মতো। বিদেশি আপেলের দাম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। খোলা বাজারে আপেল বিক্রি হচ্ছে কিলো প্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। খোলা বাজারে একটি আনারসের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেদানার দাম বেড়ে হয়েছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। কলার মতো সহজলভ্য ফলের দামও এখন অনেক বেশি। মেছুয়ার পাইকারি বাজারে ১০০টি কলা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা অন্যান্য বারের তুলনায় প্রায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি। |
আমদানি করা ফলের ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের যুক্তি, এ বার ভিন্ রাজ্যেও ফলের উৎপাদন হয়েছে অনেক কম। সেই সঙ্গে ট্রাকের ভাড়া গত বারের তুলনায় বেশ কিছুটা বেশি হওয়ায় তারও প্রভাব পড়েছে বাজারে। যেমন, মেছুয়া বাজারের এক পাইকারি আপেল-বিক্রেতা বলেন, “এখনও পর্যন্ত শিমলা থেকে আপেলের জোগান বেশ কম।” মেছুয়ার অধিকাংশ নাশপাতিই আসে ঝাড়খণ্ডের রাঁচি অথবা উত্তরপ্রদেশ থেকে। কিন্তু রাঁচির নাশপাতির জোগানও এ বার অন্য বারের তুলনায় বেশ কম।
মেছুয়া বাজারের ‘কলকাতা ফ্রুটস্ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যেরা জানালেন, এ বার রাজ্যে কলার উৎপাদনও যথেষ্ট কম। হিমসাগর আম অন্য বারের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম হয়েছে। এ বার অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র থেকেও কলা আসছে। ‘কলকাতা ফ্রুটস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সেক্রেটারি শাহিদ আহমেদ খান বলেন, “আগে বাগানের মালিক বা বাগানের লিজ যারা নিচ্ছেন, তাঁরা সরাসরি পাইকারি বাজারে আসতেন। এখন মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের বিক্রি করেন। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা পাইকারি বাজারে বিক্রি করলে দাম কিছুটা বেড়ে যায়।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব্জি-বাজারে আচমকা পরিদর্শন করার পরে সব্জির দাম কমে গিয়েছিল। এ বার ফলের বাজারে মুখ্যমন্ত্রীর আচমকা সফর ছাড়া কি ফলের দাম কমবে না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। মেছুয়ার ফল-বিক্রেতাদের মতে, সব্জি-বাজারের মতো মুখ্যমন্ত্রী ফলের বাজারে আচমকা এলে তার প্রভাব পড়বেই। শাহিদ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মেছুয়ার ফল-বাজারে এলে বাজারের পরিকাঠামোর উন্নতির বিষয়েও আর্জি জানাব। পরিকাঠামোর অভাবে অনেক ফল নষ্ট হয়ে যায়।”
পরিকাঠামোর উন্নতির যে দরকার, সে কথা কবুল করেন কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। অরূপবাবু বলেন, “এটি ঠিক, হিমঘরের অভাবে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফল নষ্ট হচ্ছে। প্রতি ব্লকে মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ তৈরির যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” |