উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা শ্রী অগ্রসেন মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক মানস জানাকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলল একাধিক সংগঠন। বৃহস্পতিবার মানসবাবুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েবকুটা, করণদিঘি সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধ কমিটি ও এসইউসি। এদিন দুপুরে ওয়েবকুটার একদল সদস্য রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় বিক্ষোভ দেখান। পরে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। পাশাপাশি, কমিটি ও এসইউসির তরফেও মানসবাবুর মুক্তির দাবিতে রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করা হয়। অবিলম্বে মানসবাবুকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া না হলে প্রতিটি সংগঠনের তরফেই জেলা জুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে নামার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “আন্দোলনের নামে একাধিকবার জাতীয় সড়ক অবরোধ ও পুলিশকর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে মানসবাবুর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার পর বর্তমানে তিনি আদালতের নির্দেশে জেল হেফাজতে রয়েছেন।” ঘটনার সূত্রপাত নবম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের পরে সেই দৃশ্য মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে। করণদিঘির পারগাঁও এলাকার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ ও উত্যক্ত করার মামলায় অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে ওই আন্দোলন চলছে। গত মঙ্গলবার এসইউসির জেলা কমিটির সদস্য মানসবাবুর নেতৃত্বে সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা করণদিঘি বিডিও অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। সেই সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়ার পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভ দেখান বলে অভিযোগ। ইটের আঘাতে তিনজন পুলিশকর্মী জখম হন বলে পুলিশের অভিযোগ। ঘটনাস্থল থেকেই মানসবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মীদের ওপর হামলা ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করার অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা শুরু করে পুলিশ। বুধবার তাঁকে ইসলামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে আগামী ৭ অগষ্ট পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওয়েবকুটার ডালখোলা ইউনিটের সদস্য অসিত বিশ্বাস বলেন, “অবিলম্বে মানসবাবুকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া না হলে জেলা জুড়ে শিক্ষকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন।” মানসবাবুর স্ত্রী তথা ওই কলেজেরই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা জয়িতাদেবী এদিন রায়গঞ্জে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, “আমার স্বামী পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। সে জন্য দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজশে পুলিশ তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ আমার স্বামীকে গ্রেফতার করলেও তাঁকে রাতভর কোথায় রাখা হয়েছিল তা আমাদের জানানো হয়নি। বিষয়টি জানতে গেলে করণদিঘি থানার পুলিশকর্মীরা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার পাশাপাশি আমাকে থানা থেকে বাইরে বার করে দেন। পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার স্বামীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া না হলে চার বছরের মেয়েকে নিয়ে থানা চত্বরে আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য হব।” সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধ কমিটির নেতা ওই স্কুল ছাত্রীর দাদা ওবাইদুর রহমান জানান, করণদিঘি থানা এলাকার বাসিন্দা দুই যুবক চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁর বোনকে ধর্ষণ করে কিছু অশ্লীল ছবি মোবাইলে ছড়িয়ে দিয়েছিল। তা জানার পরে ১২ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়। মঙ্গলবার মানসবাবুর নেতৃত্বে তাঁরা দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে করণদিঘি বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা প্রকাশ্যে চলে আসায় আন্দোলনকে দমন করতে মানসবাবুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য থানা ঘেরাও হবে। |