ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দাবি
৩ বছর থমকে ১৮ কিমির কাজ
জাতীয় সড়কের মাত্র ১৮ কিলোমিটার অংশের জট ছাড়ল না তিন বছরেও!
৪৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ অনেকটা হয়ে গেলেও উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের সন্তোষপুর থেকে আমডাঙার রাজবেড়িয়াএই ১৮ কিলোমিটার অংশের বাধা টপকানো যায়নি তিন বছরের চেষ্টায়। জমি অধিগ্রহণে বাধা এসেছে স্থানীয় স্তরে। ২০০৯ সাল থেকে পরের পর প্রশাসনিক বৈঠকেও সেই জট কাটেনি। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) এখন কার্যত হালই ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভ, জাতীয় সড়কের আর কোনও অংশে এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি।
বুধবারও ওই ১৮ কিলোমিটার অংশে জমি জরিপ ও মাপজোকের কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় দোকান মালিক এবং বাসিন্দাদের একাংশের বাধায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন সরকারি কর্মীরা।
জট কোথায়?
কলকাতা থেকে ডালখোলা পর্যন্ত এই জাতীয় সড়ক চার লেন করার প্রস্তাব হয় বছর তিনেক আগে। কয়েকটি পর্যায়ে ওই কাজ হচ্ছে। এনএইচএআই সূত্রে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ জায়গাতেই এই কাজে খুব একটা সমস্যা হয়নি। এই পর্যায়ে উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ায় সম্প্রসারণের কাজ হওয়ার কথা। নদিয়ার জমি মালিকেরা ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকাও নিয়ে নিয়েছেন। যত গোল বারাসত-আমডাঙা ওই ১৮ কিলোমিটার অংশ নিয়েই। ওখানে প্রায় ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু তিন বছর ধরে স্থানীয় বাধায় সেই কাজ কার্যত একচুলও এগোয়নি।
পথের কাজে বাধা দিতে পথেই নামা। ছবি: শান্তনু হালদার
ইতিমধ্যে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও চাকরির দাবিতে সেখানে তৈরি হয়েছে ‘ভূমি ও ব্যবসা রক্ষা কমিটি’। প্রথম দিকে রাস্তার কাজ আটকে গিয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূলের বাধায়। এখন তারাই শাসকদল। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় সড়কের উন্নতি চাইলেও দলের কিছু নেতা-কর্মীই প্রশাসন এবং এনএইচএআইয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে। ‘ভূমি ও ব্যবসা রক্ষা কমিটি’ও মূলত তৃণমূল প্রভাবিত। কমিটির সদস্যদের যুক্তি, রাস্তার পাশে একটি পান-বিড়ির দোকানেরও মাসে ৬ হাজার টাকার মতো আয় আছে। সেই হিসেবে অন্তত ২০ বছরের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যাঁরা দোকান ভাড়া নিয়েছেন তাঁদেরও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। উঠছে চাকরির দাবিও। কমিটির সম্পাদক সুব্রত ঘোষ বলেন, “ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন না দিয়ে কাজে হাত দেওয়া যাবে না।”
প্রশাসন বলছে, জমি মাপজোক বা জরিপ করতে না দিলে ক্ষতিপূরণের হিসাব করাই তো সম্ভব নয়! তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে ২০ বছরের ক্ষতিপূরণ বা চাকরি দেওয়ার সুযোগ নেই।
মাস ছয়েক আগে কোন-কোন জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তা নিয়ে ফের নোটিস দেয় এনএইচএআই। তার পরে সীমানা মেপে খুঁটি পুঁতে দেওয়া হলেও সেই খুঁটি তুলে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বুধবার ফের সরকারি কর্মীরা রাস্তা মাপজোক করতে গেলে হাজার খানেক লোক তাঁদের ফিরিয়ে দেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনেক বার বৈঠক হয়েছে। সমস্ত সরকারি নীতি মেনেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। টাকা তো রয়েছেই। কিন্তু জমির মাপজোক বা সীমানা নির্ধারণের কাজ করতে না দিলে বাকী কাজ হবে কী ভাবে?”
বাধার জটে জাতীয় সড়ক
• মোট দৈর্ঘ্য: ৪৫৩ কিমি (কলকাতা থেকে ডালখোলা)
• চার লেনের কাজে বাধা: ১৮ কিমি অংশে (বারাসতের সন্তোষপুর থেকে
আমডাঙার রাজবেড়িয়া)
• অধিগ্রহণ করতে হবে: ১০০ একর।
• দোকান ও বাড়ি রয়েছে: কয়েক হাজার।
• বাধা কোথায়: স্থানীয় দোকান মালিকদের তরফে
• কবে থেকে বাধা: ২০০৯ সাল থেকে
সুব্রতবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “আগে ক্ষতিপূরণ নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসতে হবে প্রশাসনকে। তার পরে মাপজোকের প্রশ্ন।”
এই চাপান-উতোরেই কেটে গিয়েছে তিন বছর। যাঁদের মধ্যস্থতা করার কথা, সেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল পরিচালিত আমডাঙা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কালিদাসী প্রামাণিক বলেন, “দোকানি ও জমি মালিকদের দাবি মানতে হবে।” সমিতি জট কাটাতে মধ্যস্থতা করছে না কেন? তাঁর জবাব,
“আমরা কী করব? আমরা কিছুই জানি না। রাস্তার কাজ তো প্রশাসন করছে।”
অথচ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বৈঠকে হাজির ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। সেই বৈঠকেও জট কাটেনি। এনএইচএআইয়ের কর্তাদের ক্ষোভ, প্রতিটি বৈঠকে জনপ্রতিনিধিরা
আশ্বাস দিলেও কাজের সময় বারবারই বাধা আসছে। তিন বছর আগে প্রশাসনিক বৈঠকে রাস্তা সম্প্রসারণ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। আজ তিনিই রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী। এখন তিনি বলছেন, “জমি মালিকদের বোঝাতে হবে। উন্নয়নের কাজে কেউ বাধা দেবে না। ঠিক মতো ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।”
বোঝানোর জন্য কি উন্নয়ন অনির্দিষ্টকালের জন্য থমকে থাকবে? জ্যোতিপ্রিয়বাবুর বক্তব্য, “প্রয়োজনে ১০ বার বসতে হবে। জোর করে জমি নেওয়া বা উচ্ছেদ করা যাবে না।
কেউ স্বেচ্ছায় জমি দিলে তবেই কাজ হবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.