সম্পাদকীয় ২...
বন হইতে নির্বাসন
ন্যেরা বনে সুন্দর, মানুষেরা বনের বাহিরে। অন্তত বন্যেরা যদি হয় ব্যাঘ্রের মতো শ্বাপদ, তবে জঙ্গলের ‘কোর এরিয়া’ অর্থাৎ গভীর অঞ্চলেই তাহারা নিরাপদ। সুপ্রিম কোর্ট দেশের অরণ্যগুলির ‘কোর এরিয়া’য় পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করিয়াছে। বন্যেরা যাহাতে বিনা উৎপাতে বনে থাকিতে পারে, শান্তিতে বংশবৃদ্ধি করিতে পারে, বনের রক্ষক রূপে তাহার সমৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য নিশ্চিত করিতে পারে, সেটুকুই কেবল আদালত দেখিতে চায়।
বনের গভীর-গহনে গিয়া বন্যপ্রাণি দেখিবার রোমাঞ্চ যে পর্যটক আকর্ষণ বৃদ্ধি করে, এবং তাঁহাদের ব্যয়িত অর্থ হইতে যে বনপালরা বন-সংরক্ষণের কাজটিও সুষ্ঠু ভাবে করিতে পারেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। স্বভাবতই শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বিভিন্ন পর্যটক সংস্থা অসন্তুষ্ট হইবে। পর্যটকরাও হতাশ ও ক্ষুব্ধ হইতে পারেন। কিন্তু অরণ্যসম্পদ বিশেষত বাঘেদের মতো প্রাণি-পিরামিডের শীর্ষে থাকা শ্বাপদদের সুরক্ষার স্বার্থেই এই বঞ্চনা মানিয়া লইতে হইবে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা এ জন্যই জরুরি। পর্যটকরা সর্বদা নিয়ম মানেন না। বন্য প্রাণিদের তাঁহারা প্রায়শ চিড়িয়াখানা কিংবা সার্কাসের জন্তুর মতো বিচার করেন। বন্য প্রাণিদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হইয়া যায় পর্যটকদের অত্যুৎসাহেই। অনেকে আবার শ্বাপদসংকুল অরণ্যকে চড়ুইভাতির জায়গা বলিয়া গণ্য করেন, সেখানে রীতিমত মাইক সহযোগে গানবাজনা, ভোজনবিলাসের বন্দোবস্ত চলে। বন্যেরা বিরক্ত হইয়া দূরে, আড়ালে সরিয়া যায়। গির অরণ্যে ক্যামেরা বাগাইয়া থাকা পর্যটকদের তুষ্ট করিতে জ্যান্ত মোষের বাচ্চাকে সিংহের পালের কাছাকাছি বাঁধিয়া রাখা হয়। শীঘ্রই হয়তো সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গলের জন্যও উদ্ভাবনশীল পর্যটক-সংস্থাগুলি অনুরূপ কোনও বর্বরতার আয়োজন করিবে। অরক্ষিত কোর এরিয়ায় কেবল পর্যটকরা নন, চোরাশিকারিরাও অনায়াসে পর্যটকের ভেক ধরিয়া অনুপ্রবেশ করিতে পারে, করেও।
এই ভাবেই দেশে বাঘের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে কমিয়া গিয়াছে। বছরখানেক আগেও যে দেশে প্রায় লাখ খানেক বাঘ ছিল, এখন সেখানে ৪১টি ব্যাঘ্র প্রকল্পে মাত্র ১৭০০ বাঘ টিমটিম করিতেছে। বক্সা-দুয়ারের মতো খ্যাতনামা ব্যাঘ্র প্রকল্পে গত দুই দশকে জঙ্গলে চরিতে যাওয়া একটি গরু-মোষ বা ছাগলও বাঘের পেটে যায় নাই। বাঘই যদি না থাকে, তবে এই তৃণভোজীদের খাইবে কে? ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘ অদৃশ্য হওয়ার এই ঘটনা অবশ্য একা বক্সায় নয়, রাজস্থানের সারিস্কাতেও। এ ভাবে চলিতে থাকিলে শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ ভারত ব্যাঘ্রশূন্য হইয়া পড়িবে। উইলিয়াম ব্লেকের কবিতার বাহিরে তাহার কমলা আগুনের জ্বলন আর কেহ দেখিতে পাইবে না। সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রী স্বাগত জানাইয়াছেন, ইহা আশার কথা। তবে আইনের ফাঁক গলিয়া বনের সুন্দরকে করমর্দনের বিপজ্জনক দূরত্ব হইতে দেখিবার এবং শিকার করিবার যে দুর্মর কৌতূহল ও অভীপ্সা নগরের সভ্যতা লালন করিয়া থাকে, তাহার উপর সতর্ক নজরদারি আবশ্যক। চোরাশিকারিদের সহিত সংরক্ষিত বনের নিচু তলার কর্মীদের যোগসাজশের অভিযোগ শুনা যায়। জঙ্গলের উপান্তে বসবাসকারী আরণ্যক জনজাতির কর্মহীন যুবকদেরও এ ব্যাপারে স্বার্থান্বেষীরা কাজে লাগায়। এই দিকগুলিতে কী ভাবে কড়া নজর দেওয়া যায়, কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রককে তাহাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিতে হইবে। আইন সমস্যা নয়, আদালতও পাশে আছে। কিন্তু আইন বলবৎ করিবে কে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.