সম্পাদকীয় ১...
তরল ও ছিদ্র
রাষ্ট্রপতি পদে শপথগ্রহণের অব্যবহিত পরেই প্রণব মুখোপাধ্যায় বলিলেন, অর্থনীতির নিম্নতম স্তর উন্নয়ন পৌঁছাইয়া দেওয়ার জন্য ট্রিক্ল ডাউন, অর্থাৎ উপরের স্তরে হইতে সুযোগসুবিধা চুঁয়াইয়া নামিবার অপেক্ষায় থাকিলে চলিবে না। ‘চুঁয়াইয়া পড়া’ শব্দবন্ধটি লইয়া কিছু আপত্তি থাকা স্বাভাবিক তাহার মধ্যে উচ্ছিষ্টের, অবশিষ্টের একটি ইঙ্গিত বিলক্ষণ আছে। কিন্তু, প্রক্রিয়াটিকে যদি ভাঙিয়া দেখা যায়? একটি ছিদ্রযুক্ত পাত্রের কথা কল্পনা করা যাইতে পারে, যে পাত্রে কিছু তরল রহিয়াছে। সেই পাত্র হইতে কতখানি তরল চুঁয়াইয়া নীচে নামিবে, তাহা দুইটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে এক, পাত্রে তরলের পরিমাণ; দুই, ছিদ্রের ব্যাস ও সংখ্যা। তরলটি, নিঃসন্দেহে, দেশের আর্থিক সমৃদ্ধি। দেশের আয় দ্রুত হারে না বাড়িলে যে নিম্ন স্তরে কিছুই পৌঁছাইবে না, সে বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ নাই। আর, ছিদ্রের ব্যাস বৃদ্ধি করা, তাহার সংখ্যা বাড়ানো সরকারের কাজ। যখন ছিদ্রের সংখ্যা অত্যল্প, তাহার পরিধি সূচ্যগ্রসম, তখন অতি অল্প পরিমাণ তরলই উচ্চতম স্তরকে ভেদ করিয়া নীচে নামিতে পারে। ছিদ্রের পরিধি, সংখ্যা ক্রমে বাড়াইলে এক সময় আর চুঁয়াইয়া পড়িবার অবকাশ থাকে না, তখন তরল প্রবল বেগে ঝরিতে থাকে। তখন আর তাহাকে ট্রিক্ল ডাউন বলিবার অবকাশ নাই। এই অবস্থাটিকে সর্বজনীন উন্নয়ন বলা চলিতে পারে।
সমস্যা হয় তখনই, যখন পাত্রের তরলই সমস্ত মনোযোগ কাড়িয়া লয়। আর্থিক বৃদ্ধির হারই মোক্ষ, তাহাই ধ্রুব এই বিশ্বাসটি দুর্ভাগ্যবশত নীতিনির্ধারক মহলে বিরল নহে। আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়া এবং উন্নয়ন হওয়া কেন সমার্থক নহে, তাহা অর্থনীতির প্রাথমিক পাঠের অন্তর্ভুক্ত। তবুও, বৃদ্ধির হারকেই ধ্যান-জ্ঞান করিবার প্রবণতাটি কাটে নাই। বহু ক্ষেত্রেই নীতিনির্ধারকরা ধরিয়া লন, আর্থিক বৃদ্ধি হইলে তাহার সুফল অনিবার্য ভাবেই সর্ব স্তরে পৌঁছাইবে। তাঁহারা পাত্রে তরলের পরিমাণ বাড়াইবার কথা ভাবেন, কিন্তু ছিদ্রের অবস্থা লইয়া বিচলিত হন না। জাতীয় আয় বাড়িবার অর্থ, দেশে উৎপাদন বাড়িতেছে। কিন্তু, তাহা বণ্টিত হইতেছে কি না, সেই বণ্টনে সমতার ধর্ম রক্ষিত হইতেছে কি না, কোনওটিই সেই আয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান হইতে বুঝিবার উপায় নাই। বস্তুত, নীতিনির্ধারকদের সকল মনোযোগ যদি বৃদ্ধির হারের দিকেই ধায়, তবে আশঙ্কার বিলক্ষণ কারণ আছে যে বণ্টনে সমতা রক্ষার প্রশ্নটি অবহেলিত হইতেছে। তাহাতে বিষম উন্নয়ন ঘটে। যাঁহারা সমাজশৃঙ্খলের উপরিতলের বাসিন্দা, তাঁহারা ফুলে-ফলে ভরিয়া উঠেন, আর নীচের তলায় শুধু অন্ধকার পড়িয়া থাকে।
আর্থিক বৃদ্ধি অতি জরুরি, কিন্তু পাত্রের ছিদ্রগুলি বড় করিবার কাজটিও সমান জরুরি। আর্থিক বৃদ্ধিকে উন্নয়নের রূপ দেওয়ার একমাত্র পথ সর্বজনীনন ক্ষমতায়ন। অর্থাৎ, যাঁহারা পিছাইয়া আছেন, তাঁহারা যাতে অর্থনীতির মূল স্রোতে যোগ দেওয়ার উপযুক্ত হইয়া উঠিতে পারেন, তাহার ব্যবস্থা করিতে হইবে। তাহার একটি প্রকৃষ্ট পন্থা শিক্ষাকে সর্বজনীন করিয়া তোলা। শিক্ষার হাতিয়ার ব্যতীত উন্নয়নের মূলস্রোতে সামিল হওয়ার উপায় নাই। যাঁহারা আর্থিক ভাবে পশ্চাদপদ, শিক্ষার ক্ষেত্রেও তাঁহারাই পিছাইয়া থাকেন। তাঁহাদের চিহ্নিত করা সম্ভব, তাঁহাদের নিকট শিক্ষা পৌঁছাইয়া দেওয়া সম্ভব। শিক্ষার সহিত অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো। সেইগুলির দিকেও নজর দিতে হইবে। সব দায়িত্বই যে সরকারকে লইতে হইবে, তেমন কোনও কথা নাই। কিন্তু, প্রক্রিয়াটি জোরদার ভাবে শুরু করা প্রয়োজন। পরিবেশ তৈরি হইলে বেসরকারি ক্ষেত্র নিজের তাগিদেই এই উদ্যোগে সামিল হইবে। রাষ্ট্রপতি যে সুরটি বাঁধিয়া দিয়াছেন, সরকার তাহাকে গুরুত্ব দিক। সর্বজনীন উন্নয়নের ইহাই পথ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.