নগ্ন মডেলের মুখে অন্য এক মহিলার মুখ বসানো ছবি। সেই অন্য মহিলার নামেই ফেসবুকে একটি প্রোফাইল খুলে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, সেই অ্যাকাউন্টে মিলছে মহিলার ব্যক্তিগত ফোন নম্বরও। সম্প্রতি এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন পুরাতন মালদহ পুরসভার এক মহিলা কাউন্সিলর। কিন্তু পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর তিন মাস কেটে গেলেও অপরাধীর হদিস পায়নি জেলা পুলিশ। শুধু ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিকে বন্ধ করা হয়েছে মাত্র।
গত এপ্রিল মাসে ওই মহিলা কাউন্সিলর খেয়াল করেন, রাস্তাঘাটে তাঁকে দেখলেই চাপা গুঞ্জন হচ্ছে। কেউ কেউ টিটকিরি দিতেও ছাড়ছে না। প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও দিন কয়েক পরেই এক আত্মীয় মারফত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের বিষয়টি তাঁর কানে আসে। তিনি দেখেন, সেই প্রোফাইলটি তাঁর নামেই খোলা হয়েছে। যার মধ্যে হাজার খানেক অশ্লীল ছবি রয়েছে। যেগুলির মুখটি তাঁর হলেও দেহটি অন্য এক মহিলার। সেটা দেখার পরই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন ওই মহিলা এবং তাঁর পরিবার। বাড়ি থেকে বেরোনোও বন্ধ করে দেন তাঁরা। পরে দলের নেতাদের পরামর্শে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিন ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। ওই মহিলা বলেন, “বিষয়টি দলের জেলা নেতৃত্ব দেখছেন। এই ব্যাপারে দল কিছু বলতে নিষেধ করেছে। যা জানার জেলা সম্পাদককে জিজ্ঞাসা করুন।” মালদহের জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরই জেলার পুলিশের একটি দল তদন্ত করছে। বিষয়টি ‘সাইবার ক্রাইম’ হওয়ায় সিআইডি-র বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত অপরাধী ধরা পড়বে বলে আমরা আশাবাদী।” তা হলে অপরাধীকে ধরা গেল না কেন?
জেলা পুলিশের কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, সাইবার অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে যে পরিকাঠামো বা প্রশিক্ষণ দরকার, তা জেলার তদন্তকারী অফিসারদের নেই। সেই কারণেই সিআইডির সাইবার অপরাধ বিভাগের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের তদন্তে প্রধান বিষয়টি হল ইন্টারনেট প্রোটোকল বা আইপি অ্যাড্রেস (ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কম্পিউটারের নিজস্ব একটি নম্বর থাকে, সেটিকেই আইপি বলে)। ওই প্রোফাইলটি শেষ বার কোন আইপি অ্যাড্রেস থেকে খোলা হয়েছিল, তা জানতে পারাটাই মূল কথা। কলকাতা পুলিশ এবং সিআইডি-র সাইবার অপরাধের তদন্তকারীরা বলছেন, ওই আইপি জানতে গেলে, তদন্তকারী সংস্থাকে সেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি পাঠাতে হয়। তার ভিত্তিতেই সাইট কর্তৃপক্ষ ‘আইপি অ্যাড্রেস’টি জানান। এর পরে সেই ‘আইপি অ্যাড্রেস’টি কার নামে নথিভুক্ত তা বের করা যায়। তবে, এ ক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে। অপরাধী যদি বিদেশের কোনও প্রক্সি সার্ভার (যার মাধ্যমে অপরাধী নিজের আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে রাখে), তা হলে তাকে ধরা মুশকিল। কারণ, প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করলে ‘আইপি’টি বিদেশের ঠিকানায় দেখাবে। জেলা পুলিশের এই ব্যর্থতায় তোপ দেগেছেন সিপিএমের মালদহ জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। তিনি বলেন, “ওই কাউন্সিলর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। কোথা থেকে ছবিটা ফেসবুকে পাঠানো হল তাই পুলিশ জানতে পারেনি। একজন জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে যদি এই রকম হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কী করবে।”পুরাতন মালদহ পুরসভার চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সুকুল বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক তো বটেই, লজ্জাজনকও। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে তিনি কিছুদিন পুরসভায় আসেননি। আমরা অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।” |