স্বাস্থ্যবিধানের প্রথম পাঠ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। অথচ খোদ হাসপাতালের মধ্যেই সেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বহর দেখে রীতিমত ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। এই নিয়ে হাসপাতালের সুপারকে রীতিমত ভর্ৎসনাও করেন তাঁরা। সোমবার নদিয়ার তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল ও করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন ওই কমিটি পাঁচ প্রতিনিধির একটি দল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফাই ছিল, ঝাড়ুদারের ঘাটতি রয়েছে।
ওই কমিটির চেয়ারম্যান সুব্রত মৈত্র বলেন, “আমরা হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করে দেখছি, কোথায় কি সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়াও হাসপাতালের সকলের সঙ্গে কথা বলে জানছি যে, কী কী করলে আরও ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যাবে। সমস্ত বিষয়টি সরজমিনে দেখে আমরা স্বাস্থ্যভবনে রিপোর্ট দেব। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |
তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে গিয়েও ওই প্রতিনিধিরা সেখানকার সমস্যার কথা শোনেন তাঁরা। মহকুমা হাসপাতাল হলেও এই হাসপাতালে পরিকাঠামোর অনেক ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় শয্যা কম। বেশিরভাগ রোগীকেই মেঝেতে শুয়ে থাকতে হয়। তা ছাড়াও চিকিৎসক কম। ঠিকমত পরিষেবা পান না সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরেই এই মহকুমা হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট, অ্যনাসথেটিস্ট ও ওয়ার্ড মাস্টার নেই। চিকিৎসকও রয়েছেন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। হাসপাতাল সুপার সঞ্জয় মণ্ডল জানান, “আমাদের যা যা সমস্যা সেগুলো তাঁরা নিজেদের চোখেই দেখে গেলেন। তা ছাড়া আমরাও বেশ কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছি। তাঁরাও সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন।’’
অন্যদিকে সীমান্তবর্তী করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের উপর প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। অথচ এই হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। হাসপাতাল ও স্থানীয়সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত কয়েক মাসে হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে। একাধিকবার সুপারকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। তদন্তে এসেছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। ব্যাস! ওই পর্যন্তই! কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ।
মাস কয়েক আগে গুরুতর জখম এক স্কুল ছাত্রকে কোনও চিকিৎসা না করে প্রায় ঘন্টা দেড়েক জরুরি বিভাগে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছিল হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। তারপরে অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখালে ওই চিকিৎসকই সেই ছাত্রের চিকিৎসা করেন। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের অভিযোগের আঙুল ওঠে হাসপাতালের আর এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। আট মাসের অসুস্থ এক বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা করা তো দূরের কথা, অসুস্থ ওই বাচ্চাটিকে তিনি ছুঁয়েও দেখেননি বলে অভিযোগ। হাসপাতালে কোন শিশু বিশেষজ্ঞ নেই বলে তিনি সেই বাচ্চাকে কোন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। সরকারি হাসপাতালের রেফার করার নিয়মটুকুও তিনি মানেননি বলে অভিযোগ উঠেছিল। পরে অবশ্য তদন্ত এসে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা ওই দুই চিকিৎসককে শো কজ করেন। হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সমাধান তেমন ভাবে হচ্ছে কই?”
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, “আমাদের হাসপাতালে ঝাড়ুদার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। হাসপাতাল সবসময় তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যায় না। তবে আমাদের এখানে যা যা সমস্যা রয়েছে, আমরা সবই ওই প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছি। তাঁরাও সব নোট করে নিয়ে গিয়েছেন।” |