আইনেই নেই, বলছেন কর্তারা
রেলে কাটা ৩, অনুদান
ঘোষণায় বিপাকে মন্ত্রী
বিষমদে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে মামলার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। আর ট্রেনে কাটা পড়ে তিন মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় দু’লক্ষ টাকা করে অনুদান ঘোষণা করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়।
সোমরার সকালে পুরুলিয়ার ঝালদায় ওই তিন জনের মৃত্যু হয়। তার পরেই ওই অনুদানের কথা ঘোষণা করেন রেলমন্ত্রী। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এই অনুদান রেল আইনের বিরোধী। কারণ, রেল আইন বলছে, রেললাইনে ঢোকাটাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাঁদের বক্তব্য, এর পরে কেউ ট্রেনে কাটা পড়লে তাঁদের পরিবারও এই অনুদানের উদাহরণ দেখিয়ে টাকা চাইতে পারে। রেলকেই তখন সেই টাকা দিতে হবে।
আবার ওই অনুদান দিলেই চেপে ধরবে রেল ট্রাইব্যুনাল। কারণ, সে-ক্ষেত্রে রেল ওই মৃত্যুর দায় স্বীকার করে নিচ্ছে বলে ধরা হবে। দায় স্বীকার করা মানেই পরে ক্ষতিপূরণ হিসেবে চার লক্ষ করে টাকা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে। অর্থাৎ ট্রেনে কাটা পড়ে প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনায় অনুদান ও ক্ষতিপূরণ মিলিয়ে রেলকে দিতে হবে মোট ছ’লক্ষ টাকা!
ব্যাপারটা যে অত্যন্ত গোলমেলে হয়ে উঠছে, ইতিমধ্যেই সেটা বুঝতে পেরেছেন রেলমন্ত্রী। সোমবার রাতে এ ব্যাপারে তাঁর সতর্ক প্রতিক্রিয়া, “আইনে হয়তো নেই। মানবিকতার খাতিরে ওই সাহায্য করেছি। এ ব্যাপারে রেলের অফিসারেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন ট্রেনের ধাক্কায় মৃতেরা হলেন নিয়তি রাজোয়াড় (৫০), বুধনি রজক (৪২) ও পঞ্চমী রজক (২০)। তিন জনেই ঝালদার বাসিন্দা। ভোরবেলায় তাঁরা মাঠে যাচ্ছিলেন। পথে রেললাইন পেরোতে হয়। ওই সময় ডাউন লাইন দিয়ে একটি মালগাড়ি আসছিল। মালগাড়িটিকে আসতে দেখে তাঁরা পাশের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। তখনই সেই লাইনে এসে পড়ে ভাগলপুর-রাঁচি বনাঞ্চল এক্সপ্রেস। ঘটনাস্থলেই ওই তিন জনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে রেল পুলিশ।
রেলকর্তারা জানান, ওই ট্রেনের ঝালদা স্টেশনে থামার কথা ছিল না। ফলে বেশ জোরেই ছুটছিল। ট্রেনচালক পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই তিন মহিলা আচমকাই রেললাইনের উপরে চলে আসেন। ফলে আপৎকালীন ব্রেক কষেও তিনি শেষরক্ষা করতে পারেননি। বুধনিদেবীর ভাইপো বিশ্বনাথ রজক বলেন, “বোন আর কাকিমা একসঙ্গে ছিলেন। বোনের কিছু দিন আগে বিয়ে হয়েছিল। ওর সাত মাসের একটি সন্তান আছে।”
দুর্ঘটনার পরেই ওই তিন জনের পরিবারের জন্য দু’লক্ষ টাকা করে অনুদান ঘোষণা করেন রেলমন্ত্রী। তাঁর ঘোষণা শুনেই রেলকর্তারা বিস্মিত হয়ে পড়েন। কারণ, রেল আইন অনুযায়ী এই ধরনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনুদান দেওয়া বেআইনি।
কী বলছেন রেলকর্তারা? তাঁরা জানান, রেল আইনের ১৪৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, রেল এলাকায় (রেললাইনও তার মধ্যে পড়ে) অবৈধ প্রবেশ দণ্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য ছ’মাসের কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা জরিমানা, প্রয়োজনে দু’টিই একসঙ্গে হতে পারে। রেলকর্তাদের বক্তব্য, রেললাইন দিয়ে কেউ হাঁটলেও রেলের নিজস্ব আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। ফলে লাইনের উপরে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হলে রেলের কাছ থেকে মৃতের পরিবারের কোনও অনুদান বা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা নয়।
রেলকর্তাদের বক্তব্য, প্রতি মাসে শুধু পূর্ব রেল এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এলাকাতেই লাইনে কাটা পড়ে ১৫০ জনের মৃত্যু হয়। পুরুলিয়ায় মৃত তিন জনের পরিবার অনুদান পেলে সেই উদাহরণ দেখিয়ে প্রতিটি পরিবারই অনুদান চাইতে পারে। রেলকর্তারা জানান, এই নিয়ে মামলা হলে রেল জিততে পারবে না। তখন এই অনুদান বা ক্ষতিপূরণকে বৈধ বলেই মেনে নিতে হবে। রেলকর্তাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, বিষয়টি মানবিকতার দিক থেকে দেখা উচিত বলেই মন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে মগরাহাটের বিষমদ কাণ্ডে মৃতদের পরিবারদের জন্য দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা হয়। সেই মামলার জন্যই ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও বিলি করতে পারেনি রাজ্য সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.