পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকেই নিষ্ক্রিয় করে দিতে চাইছে বলে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করলেন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী সিপিএমের নিরুপম সেন। ডিওয়াইএফআই-এর মুখপত্রের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সোমবার বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে ‘একুশ শতকে সমাজতন্ত্র’ বিষয়ে এক আলোচনা সভায় অংশ নেন তিনি। সেখানেই নিরুপমবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকেই নিষ্ক্রিয় করে দিতে চাইছে। জেলা পরিষদের বাম সভাধিপতিদের কথা বাদই দিলাম, শরিক কংগ্রেস দলের সভাধিপতিদেরও জেলা উন্নয়ন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ডাকছেন না। তাঁদের আমন্ত্রণও জানানো হচ্ছে না। এমনকী নির্বাচিত সদস্যেরাও মুখ্যমন্ত্রীর জেলা উন্নয়ন বৈঠকে ডাক পান না।” |
এদিন শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান প্রশ্নে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন তিনি। সেই সঙ্গে শিক্ষা ক্ষেত্রে ও জনজীবনে নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলেও তৃণমূল সরকারকে বিঁধলেন। নিরুপমবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার কর্মসংস্থানের ঢক্কানিনাদ বাজাচ্ছে। কিন্তু এই ক’মাসে সাধারণ নাগরিকের কথা বাদই দিলাম, তৃণমূলের কোনও যুবক যদি চাকরি পেয়ে থাকেন, তাহলেও তাঁকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেব। তবুও তো এক জন যুবক চাকরি পেল বলে!” এই ক’মাসে রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে বলে রাজ্য সরকার দাবি করছে, কিন্তু উন্নয়ন কি আদৌ হচ্ছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের ওই নেতা। নিরুপমবাবু বলেন, “উল্টে গরিব মানুষের মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।” ওই সিপিএম নেতা বলেন, “কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় মহিলা লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটছে। একের পর এক ধর্ষণ হচ্ছে। এতে রাজ্যবাসী হিসেবে লজ্জায় মাথা আমার হেঁট হয়ে যাচ্ছে।”
তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছে বলে ওই সিপিএম নেতা জানান। তিনি বলেন, “সংবাদপত্র বাদ দিয়ে কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়? ৩৪ বছরের বাম জমানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম নিরন্তর-নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কুৎসা করে গিয়েছে। তবুও কি সংবাদমাধ্যমকে বাদ দেওয়া হয়েছে? গ্রন্থাগারে কোন সংবাদপত্র রাখা হবে তার তালিকা তৈরি করার মধ্য দিয়ে জরুরি অবস্থার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মানুষ ঠিক সময়ে সব সুদে-আসলে বুঝে নেবে।”
ইউপিএ সরকারের শরিক হিসেবে বামেরা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছিল। আর এখন ১০০ দিনের কাজে চরম দুর্নীতি হচ্ছে বলেও তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেন নিরুপমবাবু।
তিনি বলেন, “গ্রামের সমস্ত গরিব মানুষকে খাদ্যের নিরাপত্তার অধিকার দিতে হবে। সকলের সামাজিক গুরুত্বকে স্বীকার করতে হবে। এক্ষেত্রে অবহেলা করা চলবে না।” এদিন অবশ্য ৩৪ বছরের বাম আমলে সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতার খতিয়ানও তুলে ধরেন। আত্মসমালোচনার ঢঙে নিরুপমবাবু বলেন, “৩৪ বছরের বাম আমলে অনেক সাফল্যের পাশে কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। জমি বন্টন, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত গঠিন করলেও পঞ্চায়েতে অনেক করণীয় কাজ যথাযথ ভাবে করতে পারিনি। এপিএল-বিপিএল তালিকা করতে গিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। ফলে স্বভাবতই এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই ক্ষোভ প্রশমনের কোনও চেষ্টা করা হয়নি। ফলে গরিব মানুষের মধ্যে বিভাজন এসেছে।” এই প্রসঙ্গে জেলার মৎস্য প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “যত খারাপ পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন, আর একটা সাঁইবাড়ি হতে দেব না। সিপিএম যতই কুৎসা করুক না কেন, সরকার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রতি আস্থা রয়েছে। ২১ জুলাই ধর্মতলার সমাবেশে মানুষের ঢল তার প্রমাণ। মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।” |