শহরের ঝুঁকি
অচেনা বাসিন্দা কারা, খবর নেই পুলিশেরও
বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে রয়েছেন বাইরের বাসিন্দা। কিন্তু তাঁরা কারা বা কোথা থেকে এসেছেন, তা জানেন না বাড়ির মালিক। রাখেননি ভাড়াটেদের কোনও পরিচয়পত্রের প্রতিলিপিও। দালালরা কাউকে নিয়ে এলে শুধু ভাড়ার দরদাম করেই থাকতে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। স্থানীয় পুলিশও এই সব ভাড়াটে বা পেয়িং-গেস্টদের সম্পর্কে কোনও খোঁজ খবর রাখছে না।
মানুষের সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি এ বিষয়ে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে শহরের বিভিন্ন ঠিকানায় ‘বহিরাগত’ মানুষের সংখ্যা ঠিক কত, তার সঠিক তথ্য এই মুহূর্তে পুলিশের হাতে নেই বলেও অভিযোগ।
পুলিশের দাবি, থানায় নতুন ভাড়াটে বা বহিরাগতদের তথ্য জানানোর দায়িত্ব বাড়ির মালিকদের। কিন্তু গত কয়েক বছরে পরিচারকের হাতে বাড়ির মালিক খুন, চুরি এবং ভাড়াটেদের নিয়েও বহু সমস্যার ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছু এলাকার বাড়ি থেকে জঙ্গিও ধরা পড়েছে। এর পরে পুলিশ থেকেই নিয়ম করা হয়েছিল, বাড়িতে বাইরের কেউ থাকতে এলে থানায় তাঁর সব তথ্য জমা করতে হবে এবং পুলিশকেও সে সংক্রান্ত পরিসংখ্যান রাখতে হবে। এমনকী, প্রতি সপ্তাহে কয়েক জন সাব-ইনস্পেক্টর স্থানীয় ক্লাবে গিয়ে এ সম্পর্কে খবর নেবেন এবং তথ্য জমা দেওয়ার জন্য প্রচার চালাবেন বলেও নিয়ম করা হয়। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, থানা থেকে প্রতি সপ্তাহে এই প্রচার সব সময়ে করা হয় না। যদিও থানাগুলির দাবি, তারা এই কাজ প্রতি সপ্তাহে করে।
যেমন যাদবপুর থানা সংলগ্ন এলাকা এবং সল্টলেক, নিউ টাউন অঞ্চলে বহু বাড়িতেই ভাড়াটে অথবা পেয়িং-গেস্ট থাকেন। অথচ, কোনও মালিকই এই ‘বহিরাগতদের’ পরিচয় সম্পর্কে কোনও তথ্য পুলিশের কাছে জমা দেননি। এমনকী, নিজেদের কাছেও বিশেষ কোনও তথ্য জমা রাখেননি অধিকাংশ বাড়ির মালিক। একই অবস্থা পূর্ব যাদবপুর, হরিদেবপুর কিংবা শ্যামপুকুর থানা এলাকারও।
সচেতনতার এত অভাব কেন? কয়েক বছর আগেই তো যাদবপুর অঞ্চল থেকে বেশ কয়েক জন মণিপুরী জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছিল। এর পরেও পুলিশ কি ওই এলাকায় কোনও মিটিং করেনি? যাদবপুরের-বিক্রমগড়ের অধিকাংশ বাসিন্দাই জানালেন, এলাকায় শেষ এই প্রচার চালানো হয়েছিল দু’মাস আগে।
যাদবপুর থানার প্রাক্তন এক পুলিশকর্মী জানালেন, বেশি টাকার ভাড়াটে পেয়ে এই এলাকায় বাড়ির মালিকই এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানা বা থানায় জানানোর প্রয়োজন বোধ করেন না। তাঁর কথায়, যাদবপুর এবং যাদবপুর সংলগ্ন এলাকায় বড়জোর পঁচিশ শতাংশ তথ্য থানায় এক সময়ে জমা পড়ত। যদিও বর্তমান পুলিশকর্মীদের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। জানানো হয়, থানায় প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য জমা পড়ে। কিন্তু পরিসংখ্যান জানতে চাইলে ওই থানার তরফে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
অন্য দিকে, হরিদেবপুর থানা এলাকায় গত দশ বছরে পঁচিশ শতাংশ নতুন লোক এসেছেন। কিন্তু এর সঠিক তথ্য পুলিশের হাতে নেই বলে অভিযোগ। হরিদেবপুর থানা থেকে জানানো হয়, মাত্র কয়েক মাস আগে এটি কলকাতার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই ক’মাসে কিছু কিছু তথ্য থানায় জমা পড়েছে। যদিও হরিদেবপুরের বেশ কিছু ক্লাবে খবর নিয়ে জানা গেল, কোনও দিন এ সংক্রান্ত খোঁজ নিতে বা প্রচার করতে আসেনি পুলিশ।
অন্য দিকে, উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর থানা থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, মাসে বড়জোর দু-এক জন বাসিন্দা আসেন এ ধরনের তথ্য জানাতে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “এগুলি সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্ব। তা ছাড়া সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে যে, বাড়িতে ভাড়াটে রাখলে থানায় জানানো জরুরি। এ সংক্রান্ত তথ্য জমা দেওয়ার কথা আমরা সব সময়ে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ঘোষণা করছি। জোর করে কিছু করা সম্ভব নয়। এটি সচেতনতার বিষয়।” কিন্তু থানা থেকে প্রতি সপ্তাহে এলাকায় প্রচার চালানো হচ্ছে না কোন? এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে বলে জানান তিনি।
বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি এবং ম্যানেজমেন্ট সংস্থাকে কেন্দ্র করে সল্টলেক, নিউ টাউন, সুকান্তনগর, মহিষবাথান, নয়াপট্টি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাড়াটে এবং পেয়িং-গেস্টের সংখ্যা গত কয়েক বছরে বেড়েছে। সে সংখ্যা ঠিক কত, সম্পূর্ণ তথ্য পুলিশের কাছে নেই বলেই অভিযোগ। কয়েক বছর আগে পুলিশের তরফে ভাড়াটে ও পেয়িং-গেস্টদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করার কাজ শুরু হলেও, তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধাননগরে এক অনুষ্ঠানে এসে বহিরাগতদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে নির্দেশ দেন। এর পরেই নতুন তোড়জোড় শুরু হয়।
সল্টলেকের বাসিন্দাদের সংগঠন ‘বিধাননগর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষে কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পুলিশ ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগের অভাব রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ব্লক ও ওয়ার্ড কমিটিকে সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। প্রচারও দরকার।”
বিধাননগরের কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “ইতিমধ্যে সল্টলেকে আট হাজার বাড়ির তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে গিয়েছে। বাকি ৭৫টি ব্লকের যে কাজ বাকি রয়েছে, তা আগামী তিন মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ভাড়াটে, পেয়িং-গেস্টদের পাশাপাশি বাড়ির পরিচারকদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করছি। কিন্তু নিউ টাউনে এখনও এই কাজ শুরু হয়নি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.