মজুরি নিয়ে চাষিদের সঙ্গে বৈঠকে গণ্ডগোলের জেরে মৃত্যু হল এক বৃদ্ধ খেতমজুরের। ওই ঘটনায় তৃণমূলের সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ, মঙ্গলবার ১২ ঘণ্টা জামালপুর বন্ধের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট।
জামালপুরের নবগ্রাম শিবতলায় গোলমালের সূত্রপাত রবিবার সন্ধ্যায়। মার খেয়ে রাধানাথ সোরেন (৬৫) নামে এক খেতমজুরের মৃত্যুর পরে এলাকার আদিবাসীরা কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে জামালপুর থানা ঘেরাও করেন। শেষে পুলিশ স্থানীয় তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষ ও ছয় তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করে। সোমবার সিজেএম আদালতে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত বিচারক ভাস্কর মজুমদার তাঁদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মজুরি বাড়ানো নিয়ে চাষি এবং খেতমজুরদের বৈঠক বসেছিল। সেখানে প্রথমে বচসা ও পরে মারপিট শুরু হয়। গুরুতর আহত হন রাধানাথ সোরেন। বুকে ঘুষি লাগায় শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। জামালপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়। অভিযুক্ত সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” সিপিএমের দাবি, তাদের সমর্থক রাধানাথবাবু বৈঠকে খেতমডুরদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তবে পুলিশ সুপার বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। ”
|
রাধানাথবাবুর ছেলে মহাদেব সোরেনের অভিযোগ, “মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে বৈঠক সেরে বাড়ি ফেরার সময়ে তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষ-সহ বেশ কিছু লোক বাবা আর তাঁর সঙ্গে থাকা সিপিএমের জামালপুর-২ লোকাল কমিটির সদস্য বসন্ত পাকরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এলোপাথাড়ি লাথি-ঘুষি মারা হয়। বাবাকে প্রথমে নবগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সেখান থেকে জামালপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করা হয়।” নবগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রথমিক চিকিৎসার পরে বসন্তবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গ্রামের খেতমজুর সুবল টুডুর জানান, খেতমজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত চার দিন ধরে খরিফ ধান রোঁয়ার কাজ বন্ধ রেখেছিলেন তাঁরা। দাবি ছিল, রোজ ৮০ টাকা আর দু’কিলো চালের বদলে ১১০ টাকা আর দু’কিলো চাল দিতে হবে। এই নিয়ে গ্রামের চাষিরা বৈঠক ডাকেন। সুবলের অভিযোগ, “ওই বৈঠকে তৃণমূলের লোকেরাই মাতব্বরি করে। ফয়সালা হওয়ার বদলে চেঁচামেচি শুরু হয়। ঠিক হয়, সোমবার ফের বৈঠক বসবে। বৈঠক সেরে ফেরার পথে তৃণমূলের কিছু লোকজন রাধানাথবাবু ও বসন্তবাবুকে আক্রমণ করে।”
এই ঘটনায় যে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁরা হলেন অশোক ঘোষ, কুমারেশ ঘোষ, সমীর ঘোষ, জয়দের রায়, স্নেহাশীস রায়, জ্যোতিন্দ্রনাথ মালিক ও অনন্ত হাজরা। এ দিন গোটা জেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে বামফ্রন্ট। আজও তা চলবে বলে জানানো হয়েছে।
জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “যে ভাবে সার ও বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়েছে, তাতে চাষিরা সরকার নির্ধারিত ১৮১ টাকা মজুরি দিতে পারছেন না। তাই মীমাংসা বৈঠক চলছিল। পালা, গান ইত্যাদি লেখার সুবাদে এলাকায় জনপ্রিয় রাধানাথ সোরেন মজুরি নিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, “খেতমজুরদের আন্দোলন স্তব্ধ করতেই ‘পরিকল্পিত ভাবে’ রাধানাথবাবুকে খুন করা হয়েছে। তৃণমূলের ভয় ছিল, মীমাংসা হয়ে গেলে গ্রামের উপরে আর তাদের প্রভাব থাকবে না।” তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাস অবশ্য পাল্টা বলেন, “আমাদের কিছু লোককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ঠিকই। কিন্তু তাঁরা বৈঠকে চাষি হিসেবেই উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে সিপিএম অহেতুক রাজনীতি করছে।” |