পাঁশকুড়ার তরুণী মামণি জানাকে ধানখেতে সাপে কামড়েছিল। পরিবারের লোকেরা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন পিৎপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, ওষুধ নেই। শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই অবশ্য মারা যান মামণি। ঘটনাটি জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের।
শুধু মামণিই নন, সরকারি হাসপাতালে এসে ওষুধ না পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ঘাটালের সুখপ্রসাদ মাহাতো, কৃষ্ণনগরের রুমনি আদকের ক্ষেত্রেও। শেষে নার্সিংহোমে ভর্তি হয়ে কিংবা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছেন তাঁরা।
জেলার হাসপাতালগুলির ওষুধের ভাঁড়ার শূন্য মাসখানেক ধরে এ রকম বহু অভিযোগ পেয়ে কারণ খুঁজতে শুরু করেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। তদন্তে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য ভবন থেকে জেলাগুলিকে প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ভাঁড়ার শূন্য হওয়ার পরে-পরেই। নির্দেশ পাওয়ার দু-তিন দিনের মধ্যেই নির্মাতা সংস্থার কাছে ওষুধ কেনার বরাত দেওয়ার কথা। তা হলে কেন ওষুধ পেলেন না মামণি জানা, সুখপ্রসাদের মতো হাজার হাজার রোগী?
|
দাওয়াইয়ে দেরি |
ওষুধ কেনার নির্দেশ: ২৭ এপ্রিল |
জেলা |
বরাত
দিতে দেরি* |
পশ্চিম মেদিনীপুর |
৩২ |
মুর্শিদাবাদ |
৩১ |
নদিয়া |
৩৩ |
বীরভূম |
২০ |
মালদহ ও পুরুলিয়া |
১৯ |
জলপাইগুড়ি |
২১ |
হাওড়া |
১৭ |
দক্ষিণ দিনাজপুর |
১৩ |
* দিন |
|
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়েছে। দেখা গিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের ওষুধ কেনার নির্দেশ পেয়েও তা ‘চেপে রেখেছিলেন’ জেলার কর্তাদের একাংশ। কেউ ৩০ দিন পরে বরাত দিয়েছেন, কেউ ৩৩ দিন পর। বরাতে দেরি হওয়ায় ওষুধও সময়মতো পাঠায়নি ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলি। সাধারণ মানুষকে এই ভোগান্তির মধ্যে ফেলার জন্য ৬ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে শো-কজ করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা।
কী কী ওষুধের অভাবে এই কাণ্ড ঘটেছে? তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রোগীদের সব চেয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে স্যালাইন, জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন, সাপে কামড়ানোর ওষুধ, ওআরএস, বমির ওষুধ ইত্যাদির অভাবে। রাজ্যের অন্তত ন’টি জেলার (তাদেরই মধ্যে থেকে ছ’টি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে শো-কজ করা হয়েছে) সব হাসপাতাল থেকেই ওষুধ না পেয়ে বহু রোগীকে ফিরে আসতে হয়েছে। এই সব ওষুধের কৃত্রিম অভাব তৈরির পিছনে কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য আছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
কেন এই ঘটনা ঘটল?
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “স্বাস্থ্য ভবন নির্দেশ দেওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে জেলাগুলির বরাত দেওয়ার কথা। কিন্তু নিয়ম মানেননি অনেক জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। দেরির জন্য দায়ী দফতরেরই কিছু অফিসার ও কর্মী। তাঁদের গাফিলতিতে সময়মতো ওষুধ কেনা হয়নি।”
যাঁদের বিরুদ্ধে ওই গাফিলতির অভিযোগ, কী বলছেন তাঁরা?
পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সবিতেন্দ্র পাত্রের বক্তব্য, “আমাদের কম্পিউটারের কিছু সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া, এ বছর থেকে ওষুধের বরাত দেওয়ার নতুন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তা বুঝতেও বেশি সময় লেগেছিল।” নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অমিত হালদার জানিয়েছেন, তিনি এই দেরির কথা জানেনই না। মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা এস এস সিরাজ বলেন, “দেরির জন্য প্রশাসনিক নিয়মও দায়ী। ডিএম অফিসের অনুমতি নেওয়ার পর বরাত যেতে দেরি হয়।” প্রশাসনিক কারণে দেরির কথা বলেছেন জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বপন সরকারও। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার দাবি, “জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা উদ্যোগী হলে এই দেরি এড়ানো যায়। বেশ কয়েকটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তারা তা পেরেছেন। এটা কোনও অজুহাত হতে পারে না।” |