পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট কবে হবে, তা নিয়ে এত দিন জল্পনা চলছিল। নির্ধারিত সময়ে ভোট হলে তা হওয়ার কথা আগামী বছরের মাঝামাঝি। কিন্তু ধর্মতলায় তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেন, পঞ্চায়েত ভোট হবে পুজোর পরেই। এ বছর দুর্গাপুজো অক্টোবরের শেষে। সেই হিসেবে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে বলে তৃণমূলের একাংশের ধারণা।
এই পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসকে সঙ্গে না নিয়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত যেমন এ দিন জানিয়েছেন মমতা, তেমনই দলের কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করে একজোট হয়ে ভোটযুদ্ধে নামতে হবে। যে নির্দেশ সম্পর্কে তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যে এক বছর ক্ষমতায় থাকার পরে গ্রামেগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্তে ‘আদি তৃণমূল’ এবং ‘নব তৃণমূল’-এর মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। দলের কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগও উঠছে। কিন্তু ২০০৮ সালে যে পঞ্চায়েত ভোট থেকে তাঁর ‘উত্থান’ শুরু, সরকারে আসার পর সেই পঞ্চায়েত ভোটেই ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার ভিত্তি সুনিশ্চিত করতে চান মমতা। ফলে পঞ্চায়েত ভোট এখন তাঁর পাখির চোখ। দলীয় কোন্দলের প্রভাব যাতে সেই ভোটে না পড়ে তাই তাঁর এই সতর্কবার্তা। দলের গোষ্ঠী-লড়াই বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে তৃণমূল নেত্রী এ দিন বলেছেন, “পঞ্চায়েতে আরও এক বার পরীক্ষা হবে। নিজেরা এক হয়ে লড়বেন। কোনও ভাগাভাগি করবেন না।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায়ও এ দিনের সমাবেশে বলেন, “দলের নাম করে প্রোমোটারি, কন্ট্রাক্টরি, তাঁবেদারি করা চলবে না।” সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ ভাবে দলকে পঞ্চায়েতে পরিচালিত করতে এবং দলের অন্দরে সংঘাত এড়াতে সৌগতবাবুর আরও নির্দেশ, “২০০৯ সাল পর্যন্ত যাঁরা মমতার নেতৃত্বে ছিলেন, তাঁরাই দলের প্রথম সারিতে থাকবেন। ২০০৯ সালের পর যাঁরা দলে এসেছেন (অন্য রাজনৈতিক দল থেকে), তাঁরা থাকবেন তার পরের সারিতে।” আর মমতা বলেন, “কেউ যেন বলতে না পারে, আপনারা খারাপ আচরণ করছেন। আপনাদের নামে অভিযোগ আমি বরদাস্ত করব না!” |
এ দিন মমতা লোকসভা-বিধানসভার পর পঞ্চায়েতেও ‘পরিবর্তনে’র ডাক দিয়েছেন। বলেছেন, “বন্দুক-সন্ত্রাসের আওয়াজ নয়। কোনও ঔদ্ধত্য-অহঙ্কার নয়। মানুষের জন্য গ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলা গড়তে হবে। সে কাজ শুরু করতে হবে পঞ্চায়েত ভোটে জিতেই।” দলকে তাঁর নির্দেশ, “গ্রাম স্বরাজ তৈরি করব। গ্রামের রাস্তাঘাট ভাল করতে হলে, গ্রামের উন্নয়ন করতে হলে পঞ্চায়েতে ভাল করে লড়াই করতে হবে। শুধু ভোটের সময় নয়, সারা বছরই মানুষের পাশে থাকবেন।” এখনও রাজ্যের যে সব পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ বামেদের দখলে রয়েছে, সেখানে কোনও কাজ হচ্ছে না বলে সমাবেশ-মঞ্চ থেকেই অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, “ওই পঞ্চায়েতগুলি দখল করে সেখানে উন্নয়ন করতে হবে।”
তবে এই ভোটযুদ্ধে শরিক কংগ্রেসকে সঙ্গে রাখতে নারাজ মমতা। এমনিতে পঞ্চায়েত বা পুরসভার মতো স্থানীয় স্তরে জোট হয় না। বরং স্থানীয় বাধ্যবাধকতার ফলে বিভিন্ন অদ্ভুত সমীকরণ কাজ করে। যেখানে সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূল বা কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি মিলে বোর্ড চালায়। সে দিক দিয়ে মমতার এই ঘোষণা খুব একটা ‘অপ্রত্যাশিত’ নয়। তবে রাজ্য রাজনীতির সাপেক্ষে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। দিল্লিতে ইউপিএ জোট না ছাড়লেও রাজ্যে যে কংগ্রেসকে তিনি বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেবেন না, সেটা এ দিন স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
পঞ্চায়েত ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখেই মমতা তাঁর ‘কৃষক-বান্ধব’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এ দিনের সমাবেশে। বলেছেন, “তৃণমূল মানুষের কথা ভাবে। খুচরো বাজার দখল করতে দেয় না। মানুষের চাষের জমি দখল করতে দেয় না। কৃষকের ভাত কাড়ে না!”
ঘটনাচক্রে, বাম আমলে অনিল বিশ্বাস স্লোগান তুলেছিলেন, ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’। এ দিন মমতা স্লোগান দিয়েছেন, “গ্রাম আমাদের ভিত্তি, শহর আমাদের উৎস।” তৃণমূল শিবিরের মতে, বোঝাতে চেয়েছেন, শুধু শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন নয়, গ্রামের উন্নয়নের ভিতেই সরকারের উন্নয়ন-কর্মকাণ্ড ‘প্রশস্ত’ হবে। |