ছাড়বেন না ইউপিএ, একাই লড়বেন রাজ্যে
দু’বছর পরের লোকসভা ভোটের জন্য দিল্লির কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের রাস্তা খোলা রেখে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে (পুজোর পরেই যে ভোট হবে বলে শনিবার জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী) রাজ্যের কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করবেন না তিনি। শনিবার ধর্মতলার বিশাল সমাবেশ (তৃণমূলের নেতারা বলছেন ‘ঐতিহাসিক’) থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ‘দ্বিমুখী রণকৌশল’ ঘোষণা করলেন তৃণমূল নেত্রী।
দিল্লির কংগ্রেসের প্রতি এ দিন মমতার বার্তা: যত দিন সম্মান পাবেন, তত দিন তাঁরা ইউপিএ ছাড়বেন না। যা শুনে তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্য, ‘কুশলী’ রাজনীতিকের মতোই দিল্লিকে বার্তা পাঠিয়েছেন মমতা। তিনি ইউপিএ ছাড়তে চান না, এটা যেমন জানিয়েছেন, তেমনই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সম্মানে’র প্রশ্নে তিনি আপস করবেন না। দলের এক নেতার কথায়, “নেত্রী যা বলেছেন, তার অর্থ খুব স্পষ্ট ইউপিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক হিসেবে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে ভেঙে দেব না। কিন্তু সেই একই কারণে আমরা প্রাপ্য সম্মানটাও আশা করি।”
এরই পাশাপাশি, রাজ্যের কংগ্রেসের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে এ দিনের সমাবেশে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মমতা বলেছেন, “পঞ্চায়েতে তৃণমূল একাই লড়বে। তৃণমূল একা লড়তে পারে। পঞ্চায়েত কাজের জায়গা। পঞ্চায়েতে ভাল করে লড়াই করে জিততে হবে। জিতে গ্রামবাংলায় উন্নয়নের কাজ শুরু করতে হবে।”
জনজোয়ারে তৃপ্ত। ধর্মতলায় ২১শে জুলাইয়ের সভায় তৃণমূল নেত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার অশোক মজুমদারের তোলা ছবি।
বস্তুত, মমতার ঘনিষ্ঠ মহলেরও বক্তব্য, আপাতত তিনি যে ‘লাইন’ নিয়ে চলবেন, তা হল, রাজ্যে কংগ্রেসকে ‘কোণঠাসা’ করা এবং দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে-থাকা। শরিকের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েই যে রাজ্যে তাঁকে একলা চলার সিদ্ধান্ত নিতে হল, তা বোঝাতে এ দিন মমতার কটাক্ষ, “আমরা চাই কংগ্রেস জোটে থাকুক। কিন্তু ফেস-পাউডার মেখে কিছু চ্যানেলে গালিগালাজ করা, মেনে নেব না। ওরা (কংগ্রেস) ভুলে যাচ্ছে, নিজের জোরেই এখানে সরকারে আছি। ওরা বরং আমাদের জন্য সরকারে এসেছে।”
তবে দিল্লিতে কংগ্রেসের পাশে থাকলেও আর্থিক দাবিতে তাদের উপর ‘চাপ’ বজায় রেখে যাবেন মমতা। যা এ দিনের সমাবেশ থেকে শুরুও করে দেন তিনি। এত দিন যা ছিল ‘অনুরোধ’, এ দিন তা পরিণত হয়েছে ‘হুঁশিয়ারি’তে। বাম আমলে নেওয়া বিশাল ঋণের সুদ যে তাঁরা দেবেন না, এ দিন তা কার্যত জানিয়েই দিলেন মমতা। কেন্দ্র তাঁদের দাবি মানলে তাঁরা ‘কৃতজ্ঞ’ হবেন। অন্যথায় দলের সাংসদ-বিধায়ক, পাহাড়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিধায়ক ও সহযোগী দলের জন প্রতিনিধিদের নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করবেন। হাতজোড় করে বলবেন, “ভিক্ষা চাই না। সুদ মকুব করুন।” তাতে কাজ না-হলে আন্দোলনে যাবেন! সমাবেশে তিনি বলেছেন, “দিল্লি বাংলাকে বঞ্চনা করলে মাথা নোয়াব না। অধিকার ছিনিয়ে নেব! রাজ্য জুড়ে ‘দিল্লি চলো’ আওয়াজ তুলতে হবে।’’
বিপুল ঋণের বোঝার প্রসঙ্গ এ দিনও তুলেছেন মমতা। জানিয়েছেন, তিনি এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অন্তত ৫০ বার কেন্দ্রের কাছে (একাধিক বার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে) দরবার করেছেন। তাঁর কথায়, “আমাদের যদি এক টাকা রোজগার হয় এবং এক টাকাই ঋণ শোধ করতে বেরিয়ে যায়, তা হলে আমরা কী করব! আমার ভাঁড়ারে ২২ হাজার কোটি টাকা আছে। কিন্তু সুদ-সহ ঋণ দিতে ২৫ হাজার কোটি বেরিয়ে যাচ্ছে। খাব কী? ঘরে খাবার নেই, বস্ত্র নেই। সব কেড়ে নিচ্ছ কেন?” আরও বলেছেন, “আমরা দয়া চাই না। ভিক্ষা চাই না। স্পেশাল প্যাকেজ চাই না। দিল্লিকে শুধু বলব, বাংলাকে উপেক্ষা করবেন না। সুদটা তিন বছরের জন্য মুকুব করে দিন।”
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ প্রার্থী প্রণববাবুকে সমর্থন নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার টানাপোড়েন তুঙ্গে উঠেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত দলের নেতাদের বড় অংশকে ‘স্বস্তি’ দিয়ে মমতা প্রণববাবুকে সমর্থন করেন। কারণ তাঁদের বক্তব্য ছিল, এখন দিল্লির সঙ্গে ‘গোলমাল’ করলে রাজ্য চালাতে অসুবিধায় পড়তে হবে। মমতা মনে করেন, ২০১৪ সালে কংগ্রেস খুব ভাল ফল করতে পারবে না। অন্তত এখনও পর্যন্ত রাজনীতির গতিপ্রকৃতি তা-ই বলছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এখনই কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়তে চাইছেন না। কারণ, কংগ্রেসের কোনও ‘বিকল্প’ এখনও গড়ে ওঠেনি। তবে পঞ্চায়েত ভোটের মতো সুদ মকুবের দাবির অভিযানেও রাজ্য কংগ্রেসকে পাশে নিতে চাইছেন না মমতা। এর আগে ওই একই দাবিতে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তাব করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু কংগ্রেস ও সিপিএম তাতে সাড়া দেয়নি। তাই মমতা ‘একা’ই চলতে চান।
পাশাপাশি, তৃণমূলকে শুধু বাংলাতেই ‘সীমাবদ্ধ’ রাখতে চান না মমতা। জাতীয় রাজনীতিতে তিনি ‘প্রাসঙ্গিকতা’ চান। ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অসম, মণিপুর, অরুণাচলপ্রদেশে তৃণমূলের বিধায়ক রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশও তৃণমূলের এক জন বিধায়ক রয়েছেন। দলের সংগঠন রয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ুতে। দলের এক নেতার কথায়, “বাংলা-জয় শেষ। এ বার ভারত-জয়ের পালা।” ওই নেতা ‘অত্যুৎসাহী’। কিন্তু ‘সখ্য’ আপাতত রাখলেও মমতা যে সংখ্যা বাড়িয়ে কংগ্রেসের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে চান, তা পরিষ্কার। পাশাপাশি দেখতে চান, আগামী লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস কী অবস্থায় থাকে। মমতার এ দিনের বিশাল সমাবেশ সেই ‘বার্তা’ই দিল বড় শরিককে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.