সপ্তাহখানেক আগে অনলাইনে ৬ হাজার রাউন্ড গুলি কিনেছিল সে। বৃহস্পতিবার রাতে ডেনভারের মাল্টিপ্লেক্সে ঢোকার সময় তার সঙ্গে ছিল ২টি গ্লক পিস্তল, একটি শটগান এবং একটি এআর-১৫ অ্যাসল্ট রাইফেল।
পরশু রাতে ডেনভার শহরের একটি মাল্টিপ্লেক্সে হত্যালীলা চালানোর পর যার নাম গোটা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছে, সেই জেমস ইগান হোমস যে বেশ কিছু দিন ধরেই এই হত্যালীলা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে, তা এক প্রকার নিশ্চিত মার্কিন পুলিশ। কিন্তু ওই ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও ঠিক কী কারণে
|
ধৃত হোমস। |
হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, তা নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না তারা। কিছু তথ্য তাদের হাতে এসেছে মাত্র।
অরোরা পুলিশ প্রধান ড্যান ওটেস জানিয়েছেন, যে ৪টি বন্দুক নিয়ে মাল্টিপ্লেক্সে ঢুকেছিল হোমস, তার প্রত্যেকটিরই লাইসেন্স রয়েছে। অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যাসল্ট রাইফেলটি একটি ‘ড্রাম ম্যাগাজিন’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। যেটি থেকে প্রতি মিনিটে ৫০ থেকে ৬০ রাউন্ড গুলি করা সম্ভব। কিন্তু কী করে এত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সে মাল্টিপ্লেক্সে ঢুকল, তার সদুত্তর মেলেনি।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, হত্যালীলা চালানোর সপ্তাহ দু’য়েক আগে একটি ‘পর্নো ওয়েবসাইটে’ যোগ দিয়েছিল হোমস। সেখানে সে এই ধরনের একটি ঘটনা যে ঘটাতে চলেছে, তার একটা ইঙ্গিত দিয়েছিল বলেও মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। ওই ওয়েবসাইটের রেকর্ড ঘাঁটতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অনলাইন চ্যাট করার সময় এক জনকে হোমস বলেছিল, “...আমার সঙ্গে জেলেও কি দেখা করতে যাবে?” অ্যাকাউন্টটিতে শেষ বারের মতো গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ডেনভার হত্যাকাণ্ডের দু’ দিন আগে শেষ বার ‘সাইন ইন’ করে হোমস। কাদের সঙ্গে হোমস শেষ বার চ্যাট করেছিল, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। |
ডেনভারে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। |
বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ‘ব্যাটম্যান’ সিরিজ-এর বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’-এর প্রিমিয়ার শো চলাকালীন এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে হোমস। ওই ঘটনায় আহত হন ৫৮ জন। এঁদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। মাল্টিপ্লেক্সের কার পার্কিং থেকেই কিছু ক্ষণ পরে সন্দেহভাজন হত্যাকারী হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে ওই হত্যার কথা স্বীকারও করে নেয়। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, হোমসের চুলে লাল রং করা ছিল। পর্নো ওয়েবসাইটে যে ছবি হোমস দিয়েছিল, সেটিতেও তার চুলের রং লালই ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, সে নিজেকে ‘জোকার’ বলে দাবি করেছে।
কিন্তু কে এই জোকার?
ব্যাটম্যানের গল্প-বা ছবিতে ‘জোকার’ ব্যাটম্যানের চির শত্রু বলেই পরিচিত। কিছুটা মানসিক বিকারগ্রস্ত অপরাধী হিসেবেই তার পরিচিতি। জোকারের জন্য ব্যাটম্যানকে কম ভোগান্তি পোয়াতে হয়নি। সেই জোকারের সঙ্গেই কি কৌশলে নিজের তুলনা টানল হোমস?
পুলিশের দাবি, ধরা পড়ার পর হোমস জানায়, তার ফ্ল্যাটে প্রচুর বিস্ফোরক আছে। তাই উত্তর অরোরা এলাকায় ওই বাড়িটি খালিও করে দেওয়া হয়। অরোরা পুলিশ প্রধান বলেন, “বাইরে থেকে অত্যাধুনিক ক্যামেরা দিয়ে হোমসের ঘরের যে ছবি দেখেছি, তা আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। গোটা ঘরে ইলেকট্রিক তারের ছড়াছড়ি। কয়েকটি জারে ভর্তি করে কার্তুজ রাখা। তরল কোনও পদার্থও রয়েছে কিছু জারে। মর্টারের মতো দেখতে কিছু জিনিসও দেখা গিয়েছে।” তিনি জানান, শনিবার রাতের মধ্যেই ওই ফ্ল্যাটে ঢোকা হবে। ঠিক হয়েছে, প্রথমে একটি রোবট ওই ফ্ল্যাটে ঢুকবে। সব কিছু ঠিক থাকলে তার পরে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা ঢুকবেন।
|