কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৫ বছর বা আরও পুরনো কতগুলি বাণিজ্যিক গাড়ি চলে, রাজ্য সরকারের কাছে তার হিসেব চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। কারণ, শহর ও শহরতলির বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৮ সালে পুরনো গাড়ি বাতিল করার যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছিল, তা মাত্র এক বছরের জন্য মানা হয়েছিল। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও সেই নির্দেশ কার্যকর করার ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত এবং বিচারপতি অসীমকুমার মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগহীনতার জন্য বিরক্তি প্রকাশ করে। বিচারপতিরা বলেন, চার বছর আগে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেটি চূড়ান্ত নির্দেশ। সেটিও কার্যকর করছে না রাজ্য সরকার। ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিল করার ব্যাপারে রাজ্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা জানতে চেয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আদালত পরিবহণ দফতরের কাছে একটি রিপোর্ট চেয়েছিল। সেটিও আদালতে জমা পড়েনি বলে বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতিরা। |
পরে ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের পরিবহণসচিবকে নির্দেশ দেয়, ১) কলকাতা মেট্রোপলিটন অথরিটি (কেএমএ) এলাকায় ১৫ বছরের পুরনো কতগুলি বাণিজ্যিক গাড়ি চলে, তার হিসেব দিতে হবে। ২) কেন এবং কীসের ভিত্তিতে ওই গাড়িগুলি চলছে, তা জানাতে হবে। ৩) ওই সব গাড়ির বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা জানাতে হবে। ৪) আদালতের আদেশ কার্যকর করার জন্য রাজ্য সরকারের কী পরিকল্পনা রয়েছে, তা-ও জানাতে হবে।
কলকাতার বায়ুদূষণ নিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতেই এ দিন এই নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশ শোনার পরে সুভাষবাবু আদালতকে জানান, হঠাৎ করে পুরনো বাস, ট্যাক্সি, লরি বাতিল করলে সাধারণ মানুষ অসুবিধায় পড়বেন। সেই দিকটা যেন আদালত বিবেচনা করে। নির্দেশ কার্যকর করার পরিকল্পনায় সেই দিকেও নজর রাখার আদেশ দেয় আদালত। ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’-এর আওতায় নামানো বাসগুলির কী হল, তা-ও এ দিন জানতে চান বিচারপতিরা। সুভাষবাবু জানান, ওই প্রকল্প কার্যত ব্যর্থ। বাস চালানো আর লাভজনক নেই বলে বাসমালিকেরা কিস্তির টাকা শোধ করতে পারছেন না। তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার ব্যাপারে রাজ্য সরকার নিশ্চেষ্ট। পুরনো গাড়ি বাতিল করতে আদৌ উদ্যোগী হচ্ছে না সরকার।”
ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকার বায়ুদূষণ নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছে। কেএমএ-র বায়ুদূষণে গাড়ির ধোঁয়া কতটা দায়ী, তা জানিয়ে রিপোর্ট দিতে হবে। যানদূষণ নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা-ও ওই রিপোর্টে জানাতে হবে। |