সব্জি চাষই তাঁদের সম্বৎসরের ভরসা।
পরের মরসুমের জন্য সঞ্চয় করে রাখা সেই সব্জি-বীজেই লুকিয়ে থাকত আশা-ভরসা। কিন্তু সঞ্চয় করে রাখা কি মুখের কথা! পোকার আক্রমণ, ঝড়-বৃষ্টি লেগেই রয়েছে। বীজ নষ্ট হতে কতক্ষণ। তাই সেই বীজ বাঁচাতে নিজেদের উদ্যোগে নদিয়ার মদনপুরের নরপতিপাড়ার চাষিরা গড়ে তুলেছেন দেশের প্রথম সব্জি-বীজ সংরক্ষণ কেন্দ্র।
নদিয়ার ওই গ্রামে চাষিদের একটি সমবায় কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানে তৈরি করেছে প্রসেসিং যন্ত্র, প্যাকেজিং মেশিন, বীজ শোধন যন্ত্র এবং ভিজে বীজ শুকনোর যন্ত্র সমেত একটা অত্যাধুনিক এক বীজ সংরক্ষণাগার। নরপতিপাড়া গ্রামটাই যেন এখন বীজ-গ্রাম। যে গ্রামের চাষিদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ও। বীজ সংরক্ষণের তাগিদে সেখানে জবাকুসুম লালশাক, মুক্তকেশী, ভাঙ্গড় বেগুন, সুখসাগর পেঁয়াজ, ঝিঙের মতো দেশি সব্জির চাষ করছেন চাষিরা। এক বিঘা জমিতে তরমুজের মতো কম লাভদায়ক ফসল আর তার বীজ বিক্রি করে এ বার প্রায় ৪৫ হাজার টাকা লাভ করেছেন স্থানীয়রা। সমবায়ের সদস্যরা অনেকেই এখন নিজেদের জমির ফসলের একটা বড় অংশ বীজের জন্য রাখছেন। বাকি সব্জি বাজারে বিক্রি করছেন। |
মদনপুরের সেই সংরক্ষণ কেন্দ্র।—নিজস্ব চিত্র। |
সেই বীজ চাষিদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে সমবায়। তার পর ফের তা চাষিদের মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। নরপতিপাড়া সমবায়ের ৮৬৫ জন চাষির মধ্যে ৬২ জন চাষি সব্জি বীজ উপাদন ও সমবায়ের বিপণনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা জানান, বীজ উৎপাদন করে তাঁরাও কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। স্থানীয় রিয়াজুল মণ্ডল, স্বপন ঘোষেরা জানান, সমবায় তাঁদের কাছ থেকে বীজ, ফসল কিনছে। ফলে বাজার নিশ্চিত হয়েছে। সংসারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। বীজ বিক্রির টাকায় সমবায় ১৬ কাঠা জমি কিনেছে সংরক্ষণ কেন্দ্রের পাশে। সেখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে হিমঘরের। বীজ সংরক্ষণের পরে মরসুমি সব্জিও সংরক্ষিত হবে। বছরভর সব্জির বাজার পাবেন প্রান্তিক চাষিরাও।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দাবি, চাষিদের নিজস্ব উদ্যোগে এই ধরনের আধুনিক সব্জি বীজ সংরক্ষণ কেন্দ্র দেশে আগে হয়নি। মূলত দেশি সব্জির চাষ ও তার বীজ সংরক্ষণ হচ্ছে এখানে। ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের পরে জাতীয় ও বহুজাতিক সংস্থাগুলো উচ্চফলনশীল বীজে বাজার ভরিয়ে দেয়। সেই বীজে চাষ করতে গিয়ে রাসায়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েছে। সেই রাসায়নিকের কুপ্রভাব কাটিয়ে চাষি দেশজ সব্জির চাষে ফিরতে চাইছেন।
নরপতিপাড়ার চাষিদের দেখে ওই জেলার ধানতলা, হরিণঘাটার ভবানীপুর ও রানাঘাটের রাধানগরের চাষিরাও আধুনিক সব্জি বীজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়তে উদ্যোগী হয়েছেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্জি বিশেষজ্ঞ প্রণব হাজরা বলেন, ‘‘সরকারি সহায়তায় চাষিদের নিজেদের তৈরি এই ধরনের বীজ-গ্রাম দেশের অন্যত্র নেই। সে দিক থেকে নরপতিপাড়া পথিকৃৎ।’’ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী মলয় সামন্ত বলেন, ‘‘বেসরকারি সব্জি বীজ বিপণন সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে কৃষকদের সমবায়। চাষিরা এককাট্টা হয়ে সমবায় চালাচ্ছেন। সমবায় লাভের মুখ দেখছে।’’ কৃষি সমবায়ের সদস্য জয়দেব ঘোষ বলেন, ‘‘মদনপুর সব্জির জন্য পরিচিত। এত দিন তেমন লাভ হয়নি। মহাজনের কাছে ঋণ নিলে চড়া সুদ দিতে হত। সমবায়ে যোগ দেওয়ার পরে সে সমস্যা অনেকটা মেটাতে পেরেছি। নিজেদের জমি থেকেই সব্জি বীজ তৈরি করে সংরক্ষণ ও বিক্রি করছি।’’ ভবিষ্যতের বীজ বুনে এ ভাবেই স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে বীজ-গ্রাম।
|
বিজ্ঞান সচেতনতায় আলোচনাসভা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁথি |
বিজ্ঞান সচেতনতায় বুধবার আলোচনাসভা হল রামনগর ২ ব্লকের করঞ্জি সুভাষ বিদ্যাভবনে। স্কুলের সম্পাদক তথা দিঘা ডিএল জগবন্ধু হাইস্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক নন্দগোপাল পাত্র স্লাইড শো দেখিয়ে ঈশ্বরকণা সন্ধানে বিজ্ঞানীদের ধারাবাহিক পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণের কথা বলেন। রামনগর বালিকা বিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা চৈতালী বিশাল জগদীশচন্দ্র বসুর বেতার তরঙ্গ আবিষ্কার ও তার সুফল নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
|

হুগলি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মহসীন কলেজে বিজ্ঞান মেলা। ছবিটি তুলেছেন তাপস ঘোষ। |