দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের অদূরে পতিরামে একান্নতম সতীপীঠটি দেবী বিদ্যেশ্বরীর মন্দির নামে প্রসিদ্ধ। জনশ্রুতি, এখানে দেবীর বাম পায়ের চারটি আঙুল পড়ে ছিল। মন্দিরের পেছনে ভৈরবকুণ্ড। দেবীর দক্ষিণ দিকে ভৈরবরূপী শিবের অবস্থান। সমগ্র অঞ্চলটি কূর্মাকৃতি। মন্দিরে কোনও মূর্তি নেই। বেদিটি শুভ্র লালপাড় শাড়িতে আচ্ছাদিত। প্রচুর শাড়ি জমা হলেও আশ্চর্যের বিষয়, বেদির উচ্চতা বছরের পর বছর একই থাকে। এই বেদিতেই অন্নভোগসহ দেবীর নিত্যপুজো হয়। জনশ্রুতি, প্রতি বছর ভাদ্র মাসের কুশী অমাবস্যা তিথিতে নদী পথে দেবীকে পুজো করতে আসতেন ভবানী পাঠক। লোকমুখে প্রচলিত ঘটনার পরম্পরায় জানা যায়, জনৈক মুরারিমোহন ভট্টাচার্য দেবী কামাখ্যার নির্দেশে গৃহত্যাগ করেন এবং কামাখ্যা ধামে বারো বছর কঠিন সাধনা করতে থাকেন। পরে দেবীর নির্দেশে আত্রেয়ী নদীর তীরে আসেন। দেবী তাঁকে ওই স্থানেই গার্হস্থ্য ধর্ম পালনের নির্দেশ দেন। এক দিন সন্ধ্যায় আত্রেয়ীর তীরে গভীর জঙ্গলে তিনি উজ্জ্বল আলোকছটা দেখে বুঝতে পারেন সেখানেই দেবীর অবস্থান। এর পর জঙ্গল পরিষ্কার করে দেবীর স্থান উন্মোচিত করেন এবং নিত্য সেবা-পুজো শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর এক কন্যা জন্ম নেয়। কন্যার নাম রাখেন বিদ্যেশ্বরী। |
বিদ্যেশ্বরী বাবাকে পুজোর কাজে সাহায্য করত। বাবা অসুস্থ থাকায় সে এক দিন আসে দেবীকে সন্ধ্যাপ্রদীপ দিতে। তার পর থেকে তার আর খোঁজ মেলে না। রাত্রি তৃতীয় প্রহরে মুরারিমোহনকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বিদ্যেশ্বরী জানায়, সে মহামায়ার সঙ্গে লীন হয়ে গিয়েছে। তার পরনের লাল পাড়ের শাড়িটি দেবীর স্থানে ছড়ানো আছে। সেই থেকে এই স্থানটিকে একান্নতম দেবীপীঠের মর্যাদায় পুজো করা হয়। বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, একান্নতম দেবীপীঠ উত্তরবঙ্গে বিরাট রাজার রাজত্বের মধ্যে ছিল। শোনা যায়, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুরের কাছে বৈরাট্টা গ্রামে গভীর জঙ্গলে এক সময় বিরাট রাজার বাড়ি দেখা যেত। রাজবাড়ির অদূরে ছিল শমীবৃক্ষ, যাতে অজ্ঞাতবাসের সময় পাণ্ডবরা অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিলেন। পৌষ মাসের বকুল অমাবস্যা তিথিতে একান্ন জন লালপেড়ে শাড়ি পরিহিত কুমারী কন্যা একান্নটি শঙ্খ ও একান্নটি ঢাক নিয়ে শোভাযাত্রা করে আত্রেয়ী থেকে অভিষেকের জল আনে। তিন দিন ব্যাপী মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। দেবীপীঠে পুজো ও প্রসাদ বিতরণ করে চলেন এলাকার ভক্তগণ। |
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দার্জিলিঙের ম্যাল সংলগ্ন এলাকায় চালু হল টি-মিউজিয়াম। চা বাগান থেকে পাতা তোলা এবং কারখানায় চা পাতা প্যাকেটজাত করার প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, রকমারি চা, চা সম্পর্কিত রঙিন আলোকচিত্র, চা বাগানের মডেল এই মিউজিয়ামটিতে দেখা যাবে। রয়েছে পাতা তোলার কাজে ব্যবহৃত বাঁশের তৈরি বিশেষ ধরনের টুকরি, পাতা তোলার দৃশ্য। উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলির সঙ্গেও পরিচয় ঘটবে আলোকচিত্রের মাধ্যমে। দর্শকরা দেখতে পাবেন চা তৈরিতে ব্যবহৃত মেশিন। চা যে কত ধরনের হতে পারে সুদৃশ্য কাচের জারে রাখা আছে তারই কিছু নমুনা। সিটিসি ডাস্ট, সিটিসি ব্রোকেন, ব্ল্যাক টি ফেনিং, গ্রিন টি ফেনিং, গ্রিন টি হোল লিফ, হ্যান্ড রোল টি, ব্ল্যাক টি হোল লিফ, অম্বুটিয়া বাগানের অর্গানিক চা, হোয়াইট টি ইত্যাদি। মানচিত্রের সাহায্যে তুলে ধরা হয়েছে দার্জিলিঙের বাগানগুলিকে। রঙিন মডেলে প্রদর্শিত হয়েছে পাহাড়ের কোলে চা বাগান, পাতা তুলতে ব্যস্ত নারী-পুরুষ। এখানে এলে চা নিয়ে নানা কৌতূহলের উত্তর মিলবে। |
সম্প্রতি জলপাইগুড়ি পুরসভার ‘প্রয়াস’ হলে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্ যাপিত হল। আয়োজনে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির জলপাইগুড়ি সদর শাখা। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। আবৃত্তি, বক্তৃতা, গান, নাচে ভরা ছিল সমগ্র অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের পারদর্শিতায় উপস্থিত শ্রোতা ও দর্শকদের নজর কাড়ে। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে পূর্বে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। |
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ থানার বটুন গ্রামে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল বিখ্যাত তরমুজ মেলা। বটুনের ঐতিহ্যবাহী চামুণ্ডা কালীপুজো উপলক্ষে প্রতি বছর এই মেলা বসে। মেলায় মনিহারি দ্রব্যের দোকান, খেলনা, হস্তশিল্প, ফলের আচার নিয়ে বিক্রেতারা হাজির হন। কিন্তু প্রতি বছর তরমুজ নিয়ে চাষিদের হাজির মেলাকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দেয়। আত্রেয়ী নদীর ধারে কুমারগঞ্জ থানা এলাকা তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত। কলকাতা ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে তরমুজ চালান দেওয়া হয়। তাই তরমুজ চাষে চাষিদের উৎসাহ দিতে মানুষ মেলাকে বেছে নিয়েছেন। সেরা চাষিকে পুরস্কৃত করাও হয়। মেলা ফেরত মানুষের হাতে একটি বা দুটি বড় তরমুজ দেখা যায়। |
জলপাইগুড়ির অন্যতম নাট্যদল ‘জলপাইগুড়ি কলাকুশলী’। ১৯৭৪-এ তৈরি হয় দল। এদের উদ্যোগেই জলপাইগুড়িতে অনুষ্ঠিত হত ‘আন্তঃ বিদ্যালয় নাট্য প্রতিযোগিতা’। যা বেশ কয়েক বছর ধরে চলে এসেছে। এখনকার ছোটরা রোজকার পড়ার চাপে বিধ্বস্ত। ছোট ছোট মুখগুলোতে তারা আরও চাপ তৈরি করতে চায় না। তাই প্রতিযোগিতা নয়, উৎসব। তাঁদের কর্মকাণ্ড রূপ নিয়েছে নাট্য উৎসবে। যেখানে শুধু সৃষ্টির আনন্দ। কোনও প্রত্যাশার চাপ নেই, নেই হার-জিৎ। এ বছর ছিল তাদের চোদ্দতম নাট্য উৎসব। অংশ নিয়েছিল জলপাইগুড়ির পাশাপাশি দার্জিলিং, কোচবিহার জেলার স্কুলগুলো। স্কুলগুলোও প্রত্যাশায় থাকে এই উৎসবের। ইউনিট টেস্টের রুটিন বাঁচিয়ে, স্ক্রিপ্ট বাছাই, চরিত্র নির্বাচন, রিহার্সাল প্রভৃতি পর্ব পার করে তৈরি হয় পূর্ণাঙ্গ নাটক। তিন দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানটি শুরু হত বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। উৎসবে অংশ নিয়েছিল মোট আঠারোটি বিদ্যালয়।
|
এ বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা
এবিপি প্রাঃ লিমিটেড,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|