পিজি-র পুনরাবৃত্তি
সাংবাদিকদের কাজ নিয়ে মন্ত্রীর মন্তব্যে বিতর্ক
প্রশ্নটা উঠে গিয়েছিল বৃহস্পতিবারই। খাস এসএসকেএমে যদি কাজের দিনে এক সাফাইকর্মী রোগীর ক্ষতে সেলাই করেন, তা হলে জেলা হাসপাতালগুলির কী হাল!
হাল যে খুব ভাল নয়, তা শুক্রবারই জানান দিল সিউড়ি সদর হাসপাতাল। এ দিন এই হাসপাতালে চিকিৎসকের উপস্থিতিতেই রোগীকে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী ইঞ্জেকশন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এবিপি আনন্দের পর্দায় তা দেখতেও পেয়েছেন দর্শকেরা। অথচ এ ধরনের খবর সামনে নিয়ে আসায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সংবাদ মাধ্যমকেই দোষারোপ করেছেন। এমনকী, তদন্তমূলক সাংবাদিকতা কী হওয়া উচিত, সে সম্পর্কেও এ দিন এক সাংবাদিক বৈঠকে নিজের ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন।
ওই ‘ব্যাখ্যা’র পাশাপাশি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সংবাদমাধ্যম তদন্তকারী এজেন্সি কি না (উদাহরণ হিসাবে সিআইডি-র কথাও বলেছেন মন্ত্রী), সে প্রশ্ন তুললেও এসএসকেএম হাসপাতালের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় কিন্তু তোলপাড় শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। এ দিন স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই সময়ে ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের শো-কজও করা হয়েছে। তবে চন্দ্রিমাদেবীর বক্তব্য, তাঁদের না জানিয়ে হাসপাতালের কোনও অনিয়মের কথা প্রকাশ্যে আনা অনুচিত হয়েছে। তিনি বলেন, “হাতে ক্যামেরা বা পেন আছে বলে যার-তার বাড়িতে ঢুকে পড়া যায় না! তদন্ত করার জন্য আলাদা এজেন্সি থাকে। তাদের তদন্তের সার্টিফিকেট বা অনুমোদনপত্র দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমের এটা দায়িত্ব নয়।” ঘটনা হল, বৈদ্যুতিন বা অন্য সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন জনতার কাছে বহু কেলেঙ্কারি ও দুুর্নীতিই ফাঁস করেছে। তা সে ক্রিকেটে ‘ম্যাচ-ফিক্সিং’ কাণ্ড বা সামরিক বাহিনীতে বেআইনি অস্ত্র কেনাবেচাই হোক কিংবা খনি বণ্টন সংক্রান্ত দুর্নীতি। বিধানসভার অধিবেশনে বসে বিধায়কদের বিরুদ্ধে অশ্লীল ছবি দেখা সংক্রান্ত যে অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছে, তা-ও প্রকাশ্যে এসেছে সংবাদমাধ্যমেরই সৌজন্যে! বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ‘স্টিং অপারেশন’-এর জেরে বহু অপরাধমূলক ঘটনাই দর্শকদের সামনে এসেছে। শাস্তি পেয়েছে অপরাধীরা।
শুক্রবার যখন স্বাস্থ্য ভবনে যখন সাংবাদিকদেরই সাংবাদিকতা সংক্রান্ত তাঁর ‘ব্যাখ্যা’ শোনাচ্ছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে সিউড়ি সদর হাসপাতালে এক অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রোগীকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময়ে তা ক্যামেরাবন্দি করেন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাংবাদিক। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতে চোট নিয়ে এ দিন দুপুরে নবকুমার দলুই নামে সিউড়ির হোসনাবাদ গ্রামের এক বাসিন্দা জরুরি বিভাগে আসেন। কৈলাস মাহারা নামে এক যুবক তাঁকে ইঞ্জেকশন দেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক দীনবন্ধু বিশ্বাস বলেন, “আমি ওই সময় অন্য রোগী দেখছিলাম। সেই সময় কে, কাকে ইঞ্জেকশন দিয়েছে জানি না, কাউকে ইঞ্জেকশন দিতেও বলিনি। এ ব্যাপারে যা বলার ওয়ার্ডমাস্টার বা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলবেন।”
কৈলাসের পরিচয় ও হাসপাতালে তাঁর ভূমিকা নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে। কৈলাসের দাবি, “কানাহাইয়া প্রসাদরাম নামে এক স্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অনুপস্থিতিতে এ দিন সকালে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তারবাবুদের নির্দেশেই কাজ করেছি।” ওয়ার্ডমাস্টার গৌরগোপাল সৌমণ্ডল অবশ্য বলেন, “স্ত্রী মারা যাওয়ায় কানহাইয়া ছুটিতে আছেন। তার পরিবর্তে কে কাজ করছেন, জানি না। কৈলাস নামে কোনও কর্মী আছেন কি না জানা নেই।” তিনি জানান, এই মুহূর্তে হাসপাতালে চার জন অস্থায়ী কর্মী আছেন। তাঁদের রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। যদিও হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, কৈলাস অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিক জানিয়েছেন, কোথাও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর রোগীদের ইঞ্জেকশন দেওয়ার অধিকার নেই। এ দিনের ঘটনার খোঁজখবর চলছে। দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। রিপোর্ট মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.