দক্ষিণ কলকাতা
দায় কার
বঞ্চনার ক্রীড়াঙ্গন
বামফ্রন্টের আমলে পরিকল্পনা ছিল স্টেডিয়াম নির্মাণের। কিন্তু তা বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীকালে, এখানেই গড়ে ওঠে কলকাতা পুরসভার ক্রীড়া উদ্যান। অথচ, পুরসভার উদ্যান বিভাগের কাছেই এই উদ্যানের কোনও নথি নেই। ফলে, এই উদ্যানের জন্য পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনও বাজেট বরাদ্দ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় পড়ে রয়েছে গার্ডেনরিচের আক্রা ফটকে পুরসভার প্রায় বারো বিঘা জমিতে বড় ক্রীড়া উদ্যানটি। সেখানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। মাঠের চারপাশে রয়েছে আগাছা। এই জায়াগার একটি অংশে বর্তমানে খেলাধুলো করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “পুরসভার উদ্যান দফতরে এই উদ্যানটির কোনও নথি নেই। সে ক্ষেত্রে, এই উদ্যানটিকে নতুন করে নথিভুক্ত করে তার জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করে তা উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হবে। তবে, পুরসভার এই মুহূর্তে স্টেডিয়াম নির্মাণ করার কোনও পরিকল্পনা নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনে রাজ্য ক্রীড়া দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করব।”
রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “এই ক্রীড়া উদ্যানের বিষয়টি আমি জানি। বাসিন্দাদের অনেক দিনের দাবি, এখানে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের। বামফ্রন্ট সরকার এই ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। বর্তমানে এটি কলকাতা পুরসভার ক্রীড়া উদ্যান। আমাদের দফতর থেকে এই জমির স্টেটাস রিপোর্ট জানতে চেয়েছি। পুরসভার সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। যত ক্ষণ না স্টেটাস রিপোর্ট পাচ্ছি তত ক্ষণ কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।”
গার্ডেনরিচে কলকাতা পুরসভার ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত আক্রা ফটকে গঙ্গার ধারেই বহু দিন ধরেই প্রায় ১২ বিঘা ফাঁকা সরকারি জমি পড়েছিল। এর পাশেই রয়েছে ইটভাটা। অভিযোগ, অনেক সময় স্লুইস গেট সময়মতো বন্ধ না করায় এখানে জল ঢুকে যায়। অনেক সময় ওই গেট খারাপও থাকে।
পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে ১৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের মহম্মদ বদরুদ্দজা মোল্লা বলেন, “এই এলাকায় বহু দিন ধরেই খেলাধুলোর জন্য একটি উদ্যানের প্রয়োজন ছিল। সেই সময় রাজ্য সরকার থেকে পূর্ত দফতরের এই জমিটিতেই স্টেডিয়াম নির্মাণ করার কথা ভাবা হয়েছিল। পরবর্তী কালে তা হয়নি। পরে, রাজ্য সরকার এই জমি খেলার জন্য কলকাতা পুরসভাকে হস্তান্তর করে। ২০০৯ সালে পুরসভা এই ক্রীড়া উদ্যান উদ্বোধন করে।” তাঁর কথায়: “স্থানীয় বরো থেকে এলাকার উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ অর্থেই এই ক্রীড়াঙ্গনের কিছু উন্নয়নমূলক কাজ ধাপে ধাপে করা হয়েছে। পলি ফেলে মাঠ উঁচু করা হয়েছে। ২০১০ সালে পুরবোর্ড পাল্টে যাওয়ার পরে উদ্যানটির কোনও কাজ এগোয়নি। মাঠটি একই ভাবে পড়ে রয়েছে।”
১৫ নম্বর বরোর এক আধিকারিক জানান, সরকারি এই জমিটি খেলাধুলোর উন্নতিকল্পেই পুরসভাকে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এলাকার উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ অর্থে উদ্যানের পাশে নিকাশির উন্নয়ন এবং মাঠে যাতে জোয়ারের জল না ঢুকে যায় তার জন্য মাঠের একাংশে শালবল্লা দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। মাঠে আলোও লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া, পুরসভার নিকাশি দফতর এবং রাজ্য সেচ দফতর স্লুইস গেট পাল্টানো বা মেরামতের বিষয়টি দেখাশোনা করে বলে পুর-আধিকারিকের দাবি।
পুরসভা নিয়ন্ত্রিত ক্রীড়াঙ্গনে উদ্যান দফতরের অনুমতি ছাড়া উন্নয়নকল্পে কোনও খরচ করা যায় কী ভাবে?
পুরকর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রতিটি বরো কমিটিকেই এলাকার উন্নতিকল্পে একটি বাজেট বরাদ্দ করা হয়। সেখান থেকে এলাকার যে কোনও উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ খরচ করা যেতে পারে। কিন্তু, দফতরে যদি এই উদ্যানের কোনও নথি না থাকে, তা হলে দফতর থেকে এই প্রকল্পের জন্য কোনও নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করা যাবে না। এই উদ্যানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ফলে, এই উদ্যানটির যে ধরনের উন্নয়নের দরকার ছিল তা হয়নি বলে মেনে নিয়েছে পুরকর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা এলাকার বিধায়ক মমতাজ বেগম বলেন, “যত ক্ষণ না এই জমিটি খেলার মাঠ হিসেবে উন্নত হচ্ছে, তত ক্ষণ কী করে এটিকে ক্রীড়া উদ্যান হিসেবে পুরসভার উদ্যান বিভাগে নথিভুক্ত করাব? বরোর উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ অর্থ থেকে ধাপে ধাপে কাজ চলছে। এখন এই উদ্যানটি অনেকটাই ব্যবহারযোগ্য। বাসিন্দারা ছাড়া আশপাশের এলাকার অনেকেই এখানে খেলাধুলো করেন। আমি উদ্যানটি নথিভুক্ত করে একটি স্বতন্ত্র পুর-বাজেট বরাদ্দ করাব। ক্রীড়ামন্ত্রীকেও এই মাঠে স্টেডিয়াম নির্মাণের বিষয়ে জানিয়েছি।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.