|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা |
দেশবন্ধু পার্ক |
নব নির্মাণ |
কৌশিক ঘোষ |
উত্তর কলকাতার দেশবন্ধু পার্কে আধুনিকমানের ‘কমিউনিটি হল’ নির্মাণ করা হচ্ছে।
কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “এলাকার লোকের অনেক দিনের দাবি ছিল এখানে একটি কমিউনিটি হল নির্মাণের। তবে এলাকায় জায়গা না থাকাতেই দেশবন্ধু পার্কের এক কোণে কমিউনিটি হলের পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। কলকাতা পুরসভা ছাড়াও বিধায়ক এবং সাংসদ তহবিলের বরাদ্দ অর্থ থেকেই এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার ২ নম্বর বরোর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক আধিকারিক জানান, এই ধরনের বড় ‘কমিউনিটি হল’ এই এলাকায় নেই। তিনতলা এই বাড়ির ওপরে রান্নাবান্না করারও ব্যবস্থা রয়েছে। পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য এই কমিউনিটি হল ভাড়া দেওয়া হবে বলে পুরকর্তৃপক্ষ জানান। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্প নির্মাণের জন্য আপাতত খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক আলোর জন্য বাড়তি আরও কিছু অর্থ লেগেছে বলে বরো অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে। |
 |
পুরসভা সূত্রে খবর, ২০১০ সালে এই প্রকল্প চালু করেছিল পুরসভা। তার পরে, অর্থের জোগান না থাকায় কিছু দিন এই প্রকল্প আটকে ছিল। এখন, পুরোদমে কাজ চলছে। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, আগামী দু’-এক মাসের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এখানে নির্মাণকাজ চলার সময়েই এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা উদ্যান বিভাগের কাছে মাঠ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ জানান। যদিও দেবাশিসবাবু জানান, এই প্রকল্পে মাঠ বা সবুজ নষ্ট হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, এই প্রকল্প নির্মাণে গাছ কাটা বা ঘাস নষ্ট, কোনওটাই হয়নি। উপরন্তু, মাঠের যে কোনও অংশে এই ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করতে গেলে যে সমস্ত নিয়ম মেনে চলতে হয় তা সমস্তই মানা হয়েছে।
এই নিয়মগুলি কী কী?
পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কোনও কিছু নির্মাণে যদি কোথাও কোনও গাছ কাটা পড়ে, সে ক্ষেত্রে একটি গাছ পিছু পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে। এ ছাড়াও, কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র (কেএমডিএ) ল্যান্ড ইউজ ডেভেলপমেন্ট কন্ট্রোল প্রোগ্রামে (এলইউডিসিপি)-র আইনে পার্কে কোথাও কোনও স্থায়ী পরিকাঠামো নির্মাণ করতে গেলে সবুজ বাঁচানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পার্কে কতটা এলাকা ফাঁকা রাখা যাবে তার একটি পরিমাপ করা হয়।
পুরসভার উদ্যান বিভাগের এক আধিকারিক জানান, এলইউডিসিপি আইন অনুযায়ী পার্ককে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে বড়, মাঝারি এবং ছোট। দেড় হাজার বর্গমিটার বা তার চেয়ে ছোট পার্ককে আইনের নিরিখে ছোট পার্ক হিসেবে ধরা হয়। এই আয়তনের চেয়ে বড়, অথচ সাত হাজার বর্গমিটার বা তার চেয়ে সামান্য কম আয়তনের পার্ককে মাঝারি পার্ক। অন্য দিকে, সাত হাজার বর্গমিটারের চেয়ে বড় যে কোনও পার্ককে বড় পার্ক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ছোট পার্কে মোট আয়তনের মাত্র দশ শতাংশ জায়গায় পরিকাঠামো নির্মাণ করা যেতে পারে। মাঝারি পার্কে মোট আয়তনের পাঁচ শতাংশ এবং বড় পার্কে মোট আয়তনের তিন শতাংশ জায়গায় এই পরিকাঠামোর জন্য ছাড়পত্র পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া, কোনও পার্কেই পরিকাঠামোর উচ্চতা চার মিটারের বেশি করা যাবে না। দেশবন্ধু পার্ককে বড় মাঠ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে প্রতিটি আইনই মানা হয়েছে বলে পুরকর্তৃপক্ষের দাবি। |
 |
তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত গত পুরবোর্ডের সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এলাকায় একটি কমিউনিটি হল নির্মাণ করা প্রয়োজন। তৎকালীন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় এলাকা পরিদর্শনও করেন। তার পর এই প্রকল্প আর এগোয়নি। বর্তমান পুরবোর্ড ক্ষমতায় আসার পরেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করে।
স্থানীয় কাউন্সিলর স্মরজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “এটি এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। পার্কের এক ধারে একটি কোণে, যেখানে প্রস্রাবাগার ছিল সেখানে এই পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এটি নির্মাণের সময় পার্কের একাংশের পাঁচিল ভেঙে পার্কের সামান্য কিছু জমি ব্যবহৃত হয়েছে।” পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখানকার লোকের অনেক দিনের দাবি ছিল একটি কমিউনিটি হল নির্মাণ করা। সেই কারণে এখানে কমিউনিটি হল করা হয়েছে। পার্ক নষ্ট হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। খুব তাড়াতাড়ি এই প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
 |
|
|