এই প্রতিবেদনের উপসংহারটা মুখবন্ধ হওয়া যথার্থ।
লন্ডন অলিম্পিকে টেনিস থেকে ভারতের পদক পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
দূরবীন চোখেও স্পষ্ট হবে না, এমন দূরত্বে টিমটিম করছে মিক্সড ডাবলসে লিয়েন্ডার-সানিয়া জুটি ঘিরে যৎকিঞ্চিৎ আশা। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত উইম্বলডন ফেরত জয়দীপ মুখোপাধ্যায় ব্যাখ্যা দিলেন, “ওদের মধ্যে বাঁ দিকের কোর্ট কে সামলাবে? অ্যাডভান্টেজ কোর্টে লিয়েন্ডারের ব্যাকহ্যান্ডে বল এলেই ভাল রিটার্ন অসম্ভব। উইম্বলডন ফাইনালটা তো ওই ভাবেই লিয়েন্ডার-ভেসনিনা হারল!” ১৯২৪-এর পর অলিম্পিক টেনিসে এ বারই মিক্সড ডাবলসের প্রত্যাবর্তন। অনেক টেনিসপণ্ডিত মনে করছেন, ১৬ টিমের ড্রয়ে দু’টো ম্যাচ জিতলেই অন্তত ব্রোঞ্জ পদকের প্লে-অফের লড়াইয়ে চলে আসবেন লিয়েন্ডার-সানিয়া। যেটাকে বিধ্বংসী ফোরহ্যান্ডে উড়িয়ে দেওয়ার মতোই স্বয়ং সানিয়া বলেছেন, গ্র্যান্ড স্লাম আর অলিম্পিক মিক্সড ডাবলস এক বস্তু নয়। গ্র্যান্ড স্লামে কোনও নামী সিঙ্গলস প্লেয়ার মিক্সড ডাবলস কোন ছার, ডাবলসেই খেলে না। অলিম্পিকে কিন্তু বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সিঙ্গলস তারকারা দেশের স্বার্থে সব ইভেন্টে নামবে। |
‘দেশের স্বার্থ’ শব্দ দুটো যেন ভারতীয় টেনিসের ছবিটা আরও মর্মান্তিক করে তুলছে। অলিম্পিকের কোর্টে কে কার সঙ্গী হবে বা হবে না ঘিরে দেশের আইকন টেনিস প্লেয়ারদের মধ্যে কুৎসিত ঝগড়ায় টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই তো খেলোয়াড়দের ফোকাস, ফর্ম, স্পিরিটের দফারফা। টাটকা উদাহরণ, উইম্বলডনে মহেশ-সানিয়াদের হতশ্রী পারফরম্যান্স। আর অলিম্পিক টেনিস কিনা অল ইংল্যান্ড টেনিস ক্লাবের ঘাসের কোর্টেই!
যুযুধান তারকারা এই মুহূর্তে সন্ধির অদৃশ্য সাদা পতাকা উড়িয়ে অলিম্পিকে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার যতই অঙ্গীকার করুন না কেন, ‘অন কোর্ট’ এবং ‘অফ কোর্ট’, দু’দিক দিয়েই কাজটা ভয়ঙ্কর কঠিন। পুরুষ সিঙ্গলসে সোমদেব দেববর্মন অলিম্পিকের টিকিট পেতেই মন্তব্য করেছেন, “প্রচণ্ড উত্তেজিত লাগছে।” খাঁটি কথা। যিনি ২০১২-তেই একটাও ম্যাচ খেলেননি। কাঁধের চোটে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আড়াইশোর নীচে তলিয়ে গিয়েছেন, তিনি যে প্রথম রাউন্ড থেকেই কঠিন ড্র এবং ফিটনেস-পরীক্ষার সামনে পড়বেন, নিশ্চিত।
মেয়েদের ডাবলসে বিশ্বের ১৮ নম্বর সানিয়ার পক্ষে র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচশোর কাছাকাছি রুশ্মি চক্রবর্তীকে কতটা ঠেলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব সেটা দলের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন এস পি মিশ্র বলতে গিয়ে হেসে ফেললেন। “ওই ইভেন্টটা ছেড়ে দিন। দুর্ভাগ্য, গোটা দেশে আর একটা অর্ধেক সানিয়াও নেই!” টেনিসমহলের বেশি আগ্রহ অলিম্পিক দলের পাঁচ সাপোর্ট স্টাফের মধ্যে সানিয়ার মা নাসিমা মির্জা কী ভাবে ঢুকলেন তাই নিয়ে। কেন না বাকি চারজনই টেকনিক্যাল লোক। সঞ্জয় সিংহ (লিয়েন্ডারের ট্রেনার), শ্যায়ামল ভালাবজি (ভূপতি-বোপান্নার ট্রেনার), মিলোস গালেচিচ (সোমদেবের ফিজিও) এবং এস পি মিশ্র। এআইটিএ-র ব্যাখ্যা, নাসিমা দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসেও টেনিস দলের সঙ্গে ছিলেন। |
বিশেষজ্ঞের রায় |
টেনিসে মিক্সড ডাবলসে পদক জেতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ডাবলসে দেখার, সাত মাসে মহেশ-বোপান্নার রসায়ন কতটা ভাল হয়েছে। তবে প্রতিটা ইভেন্টেই ড্রয়ের ওপর সব কিছু নির্ভর করবে।
এস পি মিশ্র (নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন) |
|
এআইটিএ-র কথায় মনে পড়ছে শুক্রবারই ফেডারেশন প্রধান অনিল খন্নার ফোনে মন্তব্য। “লিয়েন্ডার-বিষ্ণু ভাল ড্র পেয়ে একটা-দুটো রাউন্ড জিতলে খুশি হব। ডাবলসে বিশ্বের পাঁচ নম্বর লিয়েন্ডার এই মুহূর্তে আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড টিম টেনিস খেলার ফাঁকে নিজের কোচ রিক লিচ-কে দিয়ে অলিম্পিক পার্টনার বিষ্ণু বর্ধনকে ‘তৈরি’ করছেন। কিন্তু নিজেও বোধহয় জানেন, তাতে তাঁদের অসম জুটির অলিম্পিক-পদক মরীচিকা।
বাকি থাকল মহেশ-বোপান্না জুটি। বিশ্বের আট নম্বর ডাবলস টিম। কিন্তু যমজ ব্রায়ান ভাই, পোলিশ জুটি মাটকোস্কি-ফ্রিস্টেনবার্গ, স্পেনের গ্রেনোলার্স-লোপেজের মতো দেশজ ডাবলস স্পেশ্যালিস্টরা তো বটেই। ফেডেরার-ওয়ারিঙ্কা, জকোভিচ-ট্রোইকি, নাদাল-ফেলিসিয়ানো লোপেজ, অ্যান্ডি-জোনাথন মারে, সঙ্গা-লদ্রা, স্টেপানেক-বার্ডিচের মহাতারকা জুটিগুলোও এক-একটা বিষাক্ত কাঁটাঝোপ। টপকাতে রক্তাক্ত হতে হবে ভারতীয়দের।
অলিম্পিকে ভারতীয় টেনিস নিয়ে তাই নস্ত্রাদামুস হওয়াই যায়!
|
কোর্টের রায়ে অলিম্পিকে কলমডি
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কমনওয়েলথ গেমসের দুর্নীতিগ্রস্ত কার্যকরী কমিটির চেয়ারম্যান সুরেশ কলমডিকে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত ১০ লক্ষ টাকার বন্ডে আজ লন্ডন অলিম্পিকে যাবার অনুমতি দিল।
এ দিকে, কলমডি অলিম্পিকে যাবেন শুনে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন। অলিম্পিকে ভারতের সব স্পনসরকে ক্রীড়ামন্ত্রী জানিয়েছেন, কলমডি-র যাওয়া-আসা, খাওয়া--কোনও রকম খরচই যেন তাঁরা বহন না করে।
দু’দিন আগে বিশেষ আদালতে কলমডি আর্জি জানান, তাঁকে লন্ডন যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। কারণ, তিনি আর্ন্তজাতিক অ্যাথলেটিক সংস্থার (আইএএফএফ) সদস্য এবং এশীয় অ্যাথলেটিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট। অলিম্পিক চলাকালীন আইএএফএফ সভা ডাকায় তাতে যোগদানের জন্য তাঁকে লন্ডনে যেতে হবে ২৬ জুলাই-১৩ অগস্টের মধ্যে। কলমডি আইএএফএফের আমন্ত্রণপত্রও আদালতে জমা দেন।
ক্ষুব্ধ মাকেন এ দিন মুম্বই থেকে আনন্দবাজারকে বললেন “দুর্নীতিগ্রস্ত কলমডির অলিম্পিকে যাওয়ার কোনও অধিকার নেই। এতে বিশ্ব ক্রীড়া দরবারে দেশের কী ভাবমূর্তি হবে সেটা এক বার ভাবুন!” ক্ষুব্ধ ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার কার্যকরী প্রেসিডেন্ট বিজয় কুমার মলহোত্র-ও। বললেন “আমাকে কেন, সিবিআই কোর্টকে জিজ্ঞেস করুন।” বিভিন্ন খেলার জাতীয় ফেডারেশনের অনেক কর্তারই বক্তব্য, “চুরি করেও ছাড় পেলে আইনের ওপর থেকে লোকের বিশ্বাসই উঠে যাবে!” |