কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে অগস্টেই জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৮ অগস্ট ওই বেঞ্চের স্থায়ী পরিকাঠামোর কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনাও করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, অস্থায়ী পরিকাঠামোকেই ব্যবহার করে সার্কিট বেঞ্চ চালু করতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেলকে অনুরোধ করবেন তিনি। মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করতে আমরা চাইছি অগস্টেই সার্কিট বেঞ্চ চালু হোক। সে জন্য জলপাইগুড়িতে আগামী ১৮ অগস্ট আসব। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকেও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করব।”
জলপাইগুড়ি ডাকবাংলোয় সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী পরিকাঠামো একাধিকবার কলকাতা হাইকোর্টের তরফে পরিদর্শন করা হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, হাইকোর্টের তরফে রাজ্যকে জানানো হয়, স্থায়ী পরিকাঠামোর কাজের সূচনা করতে হবে এবং তা সর্বাধিক ৩০ মাসের মধ্যে শেষ করার স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিলে অস্থায়ী কাঠামোয় সার্কিট বেঞ্চ চালুর কথা ভাবা হবে। সেই কারণে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরির কাজ ত্বরাণ্বিত করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। গত কয়েক মাসের মধ্যে শহরের উপকণ্ঠে পাহাড়পুরে স্থায়ী পরিকাঠামোর কাজের জন্য চিহ্নিত জমিতে কাজ শুরুর জন্য কয়েক দফায় বিভিন্ন দফতর থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়। |
রাজ্যের আইন দফতর সূত্রের খবর, হাইকোর্ট যে কাজে জোর দিয়েছিল, সেই স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া জোরগতিতে চলছে। তবে রাজ্য সরকার ৩০ মাসের পরিবর্তে তা ৩৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ করা যাবে বলে উচ্চ আদালতে জানিয়েছে। তবে অগস্টের ওই সময়েই সার্কিট বেঞ্চ চালু হতে পারে বলে আইন দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে। ওই সূত্রই জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ওই বেঞ্চ মাসে পাঁচ দিন বসতে পারে। অন্য শর্তগুলি পূরণ হলে পূর্ণাঙ্গ সার্কিট বেঞ্চ চালু হবে বলে আশা করছেন প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকেই।
ঘটনাচক্রে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবুও পেশায় আইনজীবী। মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই উত্তরবঙ্গবাসীর দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হতে চলেছে। আমরা এখন অগস্টের অপেক্ষায়।” পাশাপাশি, রাজ্য বার কাউন্সিলের নিবন্ধক কমিটির চেয়ারম্যান ও পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল আইনজীবী সেলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক গৌতম দাসও বলেন, “প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে যে দিনটার অপেক্ষা করছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ, তা আসতে আর খুব দেরি নেই। যতদূর শুনেছি, তাতে প্রথম পর্যায়ে যদি মাসে ৫ দিনও সার্কিট বেঞ্চ বসে তাও কম কী! এটা দারুণ ব্যাপার।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্যও বলেন, “আমাদের সরকারের সময়েই অস্থায়ী পরিকাঠামো সম্পূর্ণ হয়েছে। স্থায়ী পরিকাঠামোর জন্য জমিও দেওয়া হয়েছে। তখন নানা কারণে বিলম্ব হলেও এখন হাইকোর্ট দ্রুত সাড়া দিলে তা অবশ্যই খুশির খবর।”
বস্তুত, সার্কিট বেঞ্চের দাবিতে নব্বইয়ের দশকে আন্দোলন দানা বাঁধে উত্তরবঙ্গে। সে জন্য পাহাড়-সমতলের ছয় জেলাই সরব হয়। কোথায় ওই বেঞ্চ হবে, তা নিয়ে বিরোধও বাঁধে শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শহরের মধ্যে। পরে সরকারি ভাবে জলপাইগুড়িতেই সার্কিট বেঞ্চ করার সিদ্ধান্ত হয়। |