রাজ্যের বিরুদ্ধেই সওয়াল এজি-র, বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তিনি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি)। অথচ অভিযুক্তের পক্ষ নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই সওয়াল করেছেন আদালতে। এই কাজ করা যায় কি না, তা নিয়ে মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।
একটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তের পক্ষ নিয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র সওয়াল করেছেন বলে এ দিন বিচারপতি কনোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়ার এজলাসে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগকারী বলেন, আইটিসি-র ট্রেজারি দফতরের প্রধান জগদীশ প্রধানের বিরুদ্ধে কলকাতা দায়রা আদালত ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। জগদীশবাবু গ্রেফতার হন। ১৬ ডিসেম্বর জগদীশবাবুর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা স্থগিত করে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বিচারপতি রঘুনাথ ভট্টাচার্যের এজলাসে সওয়াল করেন অনিন্দ্যবাবু। বিচারপতি জগদীশবাবুর পক্ষে রায় দেন।
এ দিন মূল মামলার আবেদনকারী মুকেশ জালান ওই রায় পুর্নবিবেচনার আর্জি জানান। সেই মামলার শুনানির সময় দেখা যায়, অসুস্থতার জন্য জগদীশবাবুর আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র হাজির হতে পারেননি। তাঁর হয়ে অন্য আইনজীবী আদালতকে তাঁর অসুস্থতার কথা জানান। অনিন্দ্যবাবু বর্তমানে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। প্রায় মাসাধিক কাল তিনি হাইকোর্টে আসতে পারেননি। মুকেশ জালানের অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া বলেন, কী করে এক জন অভিযুক্তের হয়ে তিনি আদালতে সওয়াল করলেন, অ্যাডভোকেট জেনারেলকে আদালতে হাজির হয়ে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। তার পরেই তিনি মূল মামলাটি শুনবেন।
মুকেশবাবুর আইনজীবী কৃষ্ণেন্দু গুপ্ত আদালতকে বলেন, সরকার কী ভাবে অ্যাডভোকেট জেনারেল নিয়োগ করে ‘লিগ্যাল রিমেমব্রান্সার’ ম্যানুয়ালে তা বলা আছে। ওই ম্যানুয়ালের ২৩(২) ধারা অনুযায়ী রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কোনও অভিযুক্তের পক্ষে, সরকারের বিরুদ্ধে আইনজীবী হিসাবে থাকতে পারবেন না। কৃষ্ণেন্দু গুপ্তের বাবা নরনারায়ণ গুপ্তও দীর্ঘদিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন। কলকাতা পুলিশ ২০১১ সালের নভেম্বরে জগদীশবাবুকে গ্রেফতার করে। অনিন্দ্যবাবু তার ছমাস আগে থেকেই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হিসাবে দায়িত্বে রয়ছেন। কী ভাবে তিনি এই মামলায় অংশ নিলেন কৃষ্ণেন্দুবাবু, আজ তা হাইকোর্টের কাছে জানতে চান। বিচারপতি জানিয়ে দেন, খোদ অ্যাডভোকেট জেনারেলকেই আদালতে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। তিনি অসুস্থ বলে এই মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ।
বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি অনিন্দ্যবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। রাজ্যের জি পি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অ্যাডভোকেট জেনারেল সম্পর্কে তিনি কোনও মন্তব্য করতে পারেন না। তবে জি পি হিসাবে তিনি যে সরকার-বিরোধী কোনও মামলায় অংশ নিতে পারেন না, তা জানেন। অশোকবাবু বলেন, “আমি যত ক্ষণ জি পি, তত ক্ষণ সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষেই আমি শুধু মামলা করতে পারি। কোনও অভিযুক্তের পক্ষে নয়। আর যদি মনে করি কোনও অভিযুক্তের পক্ষে সওয়াল করব, তা হলে জি পির পদ আমাকে ছাড়তে হবে।” |