প্রথম দফার কাউন্সেলিংয়ে পছন্দের কলেজ ও বিষয় বাছাইয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার কাউন্সেলিংয়ে সেই সুযোগ মিলবে না। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের এই নিয়ম চলতে পারে না বলে মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের রায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার কাউন্সেলিংয়ের আগেও ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের কলেজ ও বিষয়ের নাম জানানোর সুযোগ দিতে হবে। এবং এই মর্মে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরে তবেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য ফের কাউন্সেলিং শুরু করা যাবে। তাই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার কাউন্সেলিং স্থগিত রাখতে হবে। যদিও রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড জানিয়েছে, রায়ের কথা তারা শোনেনি। তাই এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বোর্ডের কর্তারা।
এ বছর অনলাইন কাউন্সেলিং করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ছাত্র ভর্তি শুরু হয়েছে। ১৩ জুলাই, শুক্রবার দ্বিতীয় দফার কাউন্সেলিং হওয়ার কথা ছিল। জুনের ১১ থেকে ২৯ তারিখে প্রথম দফার কাউন্সেলিংয়ে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের পছন্দের কলেজ ও বিষয় ‘লক’ করেছেন (জানিয়েছেন)। ২ থেকে ১০ জুলাই ‘রিপোর্টিং সেন্টার’-এ গিয়ে মার্কশিট দেখিয়ে টাকা জমা দিয়ে ভর্তিও হয়েছেন অনেকে। যাঁরা প্রথম দফার কাউন্সেলিংয়ের ভিত্তিতে ভর্তি হননি, তাঁরা দ্বিতীয় দফার কাউন্সেলিংয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন। তবে তাঁরা নতুন করে কলেজ ও বিষয় পছন্দ করার সুযোগ পাবেন না। আগে পছন্দ করা কলেজ ও বিষয়ের তালিকা থেকেই ভর্তি হতে হবে। ভর্তির এই পদ্ধতি নিয়েই হাইকোর্টে একটি মামলা হয়েছে। এ দিন সেই মামলাতেই দ্বিতীয় দফার কাউন্সেলিং স্থগিত করে দেয় উচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত এ দিন ‘সেন্ট মেরিজ টেকনোলজিক্যাল ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মামলার রায় দিয়ে বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাউন্সেলিংয়ের সময় প্রার্থীরা তাঁদের পছন্দের কলেজ ও বিষয়ের নাম জানাতে পারবেন না, এটা অযৌক্তিক ও অবাস্তব। এখন থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাউন্সেলিংয়ের আগে ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের বিষয় ও কলেজের নাম জানানোর সুযোগ দিতে হবে। তার পরেই কাউন্সেলিংয়ের কাজ শুরু করা যাবে। এই মর্মে তিনটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিতে হবে হাইকোর্ট জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে। হাইকোর্ট ওই তিনটি সংবাদপত্রের নাম স্থির করে দিয়েছে। সেগুলি হল আনন্দবাজার পত্রিকা, সন্মার্গ ও দ্য স্টেটসম্যান। ওই বিজ্ঞাপন প্রকাশের সূত্রে ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি জানার পরেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাউন্সেলিং শুরু করা যাবে বলে বিচারপতির নির্দেশ।
কেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার কাউন্সেলিংয়েও বিষয় ও কলেজ বাছাইয়ের সুযোগ দেওয়া দরকার, রায়ে উদাহরণ দিয়ে তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ধরা যাক এক জন ছাত্র জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ১০০৫ র্যাঙ্ক করেছেন। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চান। তাঁর পছন্দের কলেজ শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ওই ছাত্র জানেন না, এ বছর শিবপুরে কতজন ছাত্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আগ্রহী হবেন। কিন্তু গত বার যে-চিত্র ছিল, তা দেখে ওই ছাত্র শিবপুরকে পছন্দের তালিকায় না-রেখে অন্য নাম ঠিক করলেন। দেখা গেল, ওই ছাত্র কল্যাণীতে ভর্তি হলেন। এ বার দ্বিতীয় কাউন্সেলিংয়ের সময় দেখা গেল, শিবপুরে কিছু আসন ফাঁকা রয়েছে। কিন্তু জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের এখনকার নিয়ম মানলে তো ওই ছাত্রের আর কলেজ বাছাইয়ের সুযোগই থাকছে না!
বিচারপতির বক্তব্য, কোন বছর কোন কলেজকে বেশি ছাত্র পছন্দ করবেন, তা নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের নীতির উপরে। কোন বছর কোন পাঠ্যক্রম ও কোন কলেজের ব্যাপারে বেশি ছাত্রছাত্রী আগ্রহ প্রকাশ করবেন, তা অনেক বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে সেগুলো আগাম জানা সম্ভব নয়। তাই ভাল র্যাঙ্ক করা পড়ুয়া ভাল কলেজে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন, আদালত তা মেনে নিতে পারে না। |