আইনশৃঙ্খলাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের দুই শরিকের সংঘাতের মাত্রা আরও চড়ল। রাজনৈতিক সংঘর্ষ অব্যাহত থাকার কথা বলে রাজ্য সরকারের যে সমালোচনা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদমম্বরম, তারই পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি ‘চ্যালেঞ্জ’ জানাল প্রদেশ কংগ্রেস। এমনকী, এই বিষয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে ‘ভুল বোঝানো’ হয়েছিল বলেও তাদের অভিযোগ।
দুই জোটসঙ্গীর সাম্প্রতিক যাবতীয় বিবাদে যা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্যের পরেই মহাকরণ থেকে রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা ভাঙল না মচকালতা বাজারে গিয়ে দেখুক! কিন্তু ভারতের যে কোনও রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল। সাইকেল দুর্ঘটনা, খুচরো রাস্তা অবরোধের মতো কিছু ঘটনা ঘটছে। রাজ্য সরকারকে অপদস্থ করার জন্য সিপিএম এবং কংগ্রেস উস্কানি দিয়ে এই কাজ করছে!” চিদম্বরম এবং প্রদীপবাবুর তথ্যের ‘ফারাক’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুব্রতবাবু। ‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’র উপরে মঙ্গলবার ১৬ পাতার একটি প্রতিবেদন (গত সপ্তাহে চিদম্বরমের হাতে এই প্রতিবেদনই প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছিল) প্রকাশ করে প্রদীপবাবু বলেন, “নতুন সরকারের আমলে গত ছ’মাসেই কংগ্রেসের ৯ জন কর্মী খুন হয়েছেন। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) পাঁচ জনের তথ্য কোথা থেকে পেলেন? রাজ্যবাসীকে ভুল তথ্য দেওয়ার অধিকার মুখ্যমন্ত্রীর নেই!” তাঁর আরও বক্তব্য, “সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, স্টেট ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত এই তথ্য রাজ্য সরকার ভুল প্রমাণ করলে তা মেনে নেব। সরকারকে সংশোধন করতেই শরিক হয়ে এই তথ্যটা দিলাম।”
সরকারের শরিক দলের নেতা হয়েও প্রদীপবাবুর অভিযোগ, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মহিলাদের উপরে অত্যাচার উত্তরোত্তর বাড়ছে। পুলিশ-প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে না। বামফ্রন্টের বদলে তৃণমূলের হাতে গিয়েছে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ। রাজনৈতিক সংঘর্ষও কমেনি।” কয়েক দিনের মধ্যে কংগ্রেস তাদের তথ্য নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হবে বলে প্রদীপবাবু জানান। পাশাপাশি, পুলিশের বিরুদ্ধে নদিয়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর সিংহের অভিযোগ, “বার্নিয়ার অঞ্চলপ্রধান তরুণ ঘোষ চৌধুরী একটি স্কুল কমিটির সভায় এক ব্যক্তির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে তাঁকে চড় মারেন।
সেই ঘটনার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তরুণবাবুর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছে!”
শঙ্করবাবুর অভিযোগ, “তরুণবাবু কংগ্রেস কর্মী হওয়ায় তাঁকে পুলিশ এ ভাবে হেনস্থা করছে!”
প্রদীপবাবুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী সুব্রতবাবু এ দিন পাল্টা বলেছেন, “এ তো দেখছি কংগ্রেসের নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব রয়েছে! চিদম্বরম এসে বলে গেলেন, ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর প্রদীপবাবু বলছেন ৯ জন। আসলে কোনওটাই ঠিক নয়! রাজ্যপালও তা-ই বলেছেন। এখন আবার শুনছি, ওরা রাজ্যপালের কাছে যাবে। হাস্যকর! এমন রাজনীতি কত দিন চলবে?”
তবে চিদম্বরম যে তথ্য দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে তাঁদের তথ্যে ‘ফারাকে’র কারণ ব্যাখ্যা করে প্রদীপবাবু বলেন, “চিদম্বরম অন্যান্য অনেক সূত্র থেকে ওই তথ্য পেয়েছিলেন। তিনি সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের পরিস্থিতির কথা বলেছিলেন। আমরা শুধুমাত্র গত ছ’মাসে নিহত কংগ্রেস কর্মীদের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছি।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে তাঁর সঙ্গে সংঘাতের পথেই গিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাঁর তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি চিদম্বরমকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। রাজ্যপাল নারায়ণনও এই প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয়, রাজ্য সরকারেরই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রদীপবাবু অবশ্য পরোক্ষে মুখ্যমন্ত্রীকেই কটাক্ষ করে বলেছেন, “রাজ্যপালকে কেউ হয়তো ভুল বুঝিয়েছেন! রাজ্যপালও সেইমতোই ভুল তথ্য দিয়েছেন।” তবে আগামী দিনে রাজ্যপাল এ ভাবে আর ‘বিভ্রান্ত’ হবেন না বলে তাঁর আশা। |