মাত্র দিন পাঁচেক আগে ‘রাজ্যে হিংসার সংস্কৃতি চলছে’ বলে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসন্তোষ বাড়িয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এ বার অনগ্রসর এলাকায় চাল-গম বণ্টনে রাজ্য সরকার ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ বলে কলকাতায় দাঁড়িয়েই অভিযোগ করলেন কেন্দ্রীয় খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের প্রতিমন্ত্রী কে ভি টমাস।
কেন্দ্রের কাছে মমতার ‘মোরাটোরিয়াম’ দাবি কিংবা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের মতো বিষয়গুলি নিয়ে এমনিতেই কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে এখন যথেষ্ট চাপান-উতোর চলছে। টমাসের মন্তব্য তাতে ঘৃতাহুতি দিল বলেই মনে করা হচ্ছে। এ দিন টমাসের অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, “কেন্দ্র চূড়ান্ত অসহযোগিতা করছে। এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধিও থাকতে পারে।” বস্তুত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘চাপের রাজনীতি’র অভিযোগ ইতিমধ্যেই করেছেন একাধিক তৃণমূল নেতা।
টমাস মঙ্গলবার বলেছেন, “রাজ্যের ১০টি অনগ্রসর জেলার জন্য কেন্দ্রের দেওয়া চাল-গম গরিবদের বিলি করার কাজে পশ্চিমবঙ্গ সম্পূর্ণ ব্যর্থ।” কলকাতায় খাদ্যের মান ও নিরাপত্তা বিষয়ক এক আলোচনাচক্রে অংশ নেওয়ার পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ২০১১-১২ আর্থিক বছরে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্র ২.৬ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু তার মাত্র ১২ শতাংশ এখনও পর্যন্ত রাজ্য বিলি করতে পেরেছে। ওই আর্থিক বছরে অন্নপূর্ণা ও অন্ত্যোদয় যোজনা খাতে বরাদ্দ খাদ্যশস্যের মধ্যে চালের পরিমাণ ছিল ৫৫.৮ হাজার মেট্রিক টন এবং গম ৪৩.৬ হাজার মেট্রিক টন। একই ভাবে বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষের জন্য এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৯৮.৪ হাজার মেট্রিক টন এবং ৬১.৪ হাজার মেট্রিক টন। এই খাদ্যশস্য বিলি করতেই পশ্চিমবঙ্গ ব্যর্থ বলে দাবি টমাসের।
রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই বক্তব্য ‘পুরোপুরি অসত্য’ বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। এ দিন তিনি বলেন, “২০১১-১২ আর্থিক বছরে কেন্দ্র যে খাদ্যশস্য বরাদ্দ করেছে তার নির্দেশ রাজ্যের কাছে এসেছে এ বছরের মে মাসে। ফলে এই অল্প সময়ে কী করে পুরো খাদ্য বণ্টন সম্ভব?” রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের জন্য ইতিমধ্যেই চাল-গম মিলিয়ে বরাদ্দ খাদ্যশস্যের ৫০ শতাংশ ও অন্ত্যোদয় যোজনা খাতের ২০ শতাংশ তুলে নিয়েছি আমরা।”
কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগ খণ্ডনের পাশাপাশি জঙ্গলমহলে সস্তায় চাল-গম দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। তিনি বলেন, “গত ফেব্রুয়ারি মাসে জঙ্গলমহলের জন্য আমি চিদম্বরমের কাছে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য বরাদ্দের আবেদন করি। কিন্তু কোনও সাড়া দেয়নি কেন্দ্র।”
রাজ্য খাদ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে সমীক্ষা চালিয়ে ১৫ লক্ষ ৭২ হাজার ২১০ জনকে সস্তায় চাল-গম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য মাসে অতিরিক্ত ৮০৬৯ মেট্রিক টন চাল এবং ৩০২৩ মেট্রিক টন গমের প্রয়োজন হয়। সেই অতিরিক্ত খাদ্যশস্যই চাওয়া হয়েছিল কেন্দ্রের কাছে।” খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধার হয়েছে। সেই কার্ডেরই বরাদ্দ চাল ও গম ওই মানুষগুলির জন্য বরাদ্দ করে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি আমরা।” |