বয়স এখনও ২১ হয়নি। তবু তাঁর বিয়ে পাকা হয়ে গিয়েছিল। মন্দির চত্বরে বিজ্ঞপ্তি সেঁটে সেই তরুণের বিয়ে রুখল প্রশাসন। পুরুলিয়া ১ ব্লকের চিড়কা গ্রামে সোমবার রাতের ঘটনা। পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা থানার দক্ষিণ পিঠুলিয়া গ্রামে রবিবার রাতেই এক নাবালকের বিয়ে রুখেছিল পুলিশ। তবে সেই পাত্রের বয়স ছিল আরও কম। মাত্রই ১৬! আর কনে ছিলেন পাঁচ বছরের বড়!
চিড়কা গ্রামে তেমনটা হয়নি। হবু কনের বয়স বরের চেয়ে কমই। তাতে কী? বরের তো বিয়ের বয়সই হয়নি! অতএব প্রশাসন বিয়ে রুখেছে। এই গ্রামে সোমবার রাতেই আর এক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেছে প্রশাসন। পুলিশ-প্রশাসনের হানায় নাবালিকা পাত্রী ও তার বাবা গা ঢাকা দেওয়ায় বাড়ির দেওয়ালে একই ভাবে বিজ্ঞপ্তি সেঁটে বিয়ে বেআইনি ঘোষণা করেন প্রশাসনিক কর্তারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার চিড়কা গ্রামে সোমবার এক নাবালিকা কন্যার বিয়ে হচ্ছে বলে খবর আসে প্রশাসনের কাছে। মহকুমাশাসক (পুরুলিয়া সদর) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য মঙ্গলবার বলেন, “ওই গ্রামেরই বাসিন্দা উত্তমকুমার মাহাতো তাঁর নাবালিকা মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। তাঁর মেয়ে যে নাবালিকা, সে প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। সে কারনেই খবর পাওয়ার পরে ওই গ্রামে আমরা যাই।” বিডিও (পুরুলিয়া ১ ব্লক) মৌসুমী পাত্র মহকুমাশাসকের সঙ্গে ছিলেন। বিডিও-র কথায়, “আমরা গ্রামে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে, মেয়ের বাবা ও বাড়ির আরও কিছু লোকজন সরে পড়েন। আমরা বাড়িতে বিয়েবাড়ির পরিবেশ দেখতে পেলেও মেয়েকে পাইনি।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, বিয়ে সম্পর্কে মহকুমাশাসক এবং বিডিও বাড়ির বাকি লোকজনের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা মুখ খুলতে চাননি। তখন মহকুমাশাসক বাইরে বেরিয়ে এসে বাড়ির দেওয়ালে এই বিয়ে বেআইনি ঘোষনা সংবলিত বিজ্ঞপ্তি সেঁটে জেন। যাঁরা বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। মহকুমাশাসক বলেন, “বাধ্য হয়েই আমাদের বাড়ির দেওয়ালে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিয়ে বন্ধ করতে হয়েছে।”
এর পরেই গ্রামের মন্দিরে এক তরুণের বিয়ের খবর পেয়ে তাঁরা সেখানে যান। মহকুমাশাসক বলেন, “মন্দিরে আমরা পৌঁছতেই বেশ কিছু লোক সরে পড়ে। এক জন পাত্র ছিলেন, জয়পুরের বাসিন্দা।” বিডিও বলেন, “ওই পাত্র নিজেই স্বীকার করেছে, সে ক্লাস সেভেনে পড়ে। বিয়ের বয়স হয়নি।” এর পর মন্দির চত্বরেও প্রশাসনিক কর্তারা একই ভাবে বিয়ে বন্ধের বিজ্ঞপ্তি লাগিয়ে দিয়ে আসেন। মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, ভিড়ের মধ্যে পাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। মন্দির কমিটিকে নাবালক বা নাবালিকার বিয়ে সেখানে দিতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। |