আদালত জামিন দিলেও মঙ্গলবার জেল থেকে মুক্তি মিলল না পিঙ্কি প্রামাণিকের।
ধর্ষণের অভিযোগে গত ১৩ জুন গ্রেফতার করা হয়েছিল ওই সোনাজয়ী অ্যাথলিটকে। এ দিন বারাসত জেলা আদালত পিঙ্কিকে জামিন দিতে গিয়ে বলেছে, দেশকে তিনি অনেক সম্মান ও সোনার পদক দিয়েছেন। তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট মোতাবেক, তাঁর শরীরে নারী বা পুরুষের যৌনাঙ্গ পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় তাঁকে আটকে রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই। “তিনি তো আর পালিয়ে যাচ্ছেন না!” মন্তব্য আদালতের।
পিঙ্কি পুরুষ না নারী-- এ ব্যাপারে ডাক্তারি পরীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্ট এ দিনও আদালতে জমা পড়েনি। কথা ছিল, এসএসকেএম থেকে পাওয়া রিপোর্টটি পুলিশ এ দিন বারাসত এসিজেএম আদালতে জমা দেবে। ওই রিপোর্টেই পিঙ্কির ক্রোমোজোম পরীক্ষার ফল জানানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
এ দিন পিঙ্কির জামিনের আবেদন করে আইনজীবী মাধব সান্যাল-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, ১৩ জুন রাতে পিঙ্কিকে গ্রেফতারের পর দিন তাঁকে বারাসত হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কোর্টে তোলা হয় ১৫ জুন। সবই আইনবিরুদ্ধ। সেই থেকে তিনি জেল হেফাজতে। তাঁর সব পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু লিঙ্গ নির্ধারণ হয়নি। পিঙ্কির কৌঁসুলিদের মতে, তিনি যদি পুরুষও হন, তবু এক বিবাহিতা মহিলা তাঁর সঙ্গে সাড়ে তিন বছর সহবাসের পর হঠাৎ ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারেন না। মহিলার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণ হয়নি। তাই আইনে ধর্ষণের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা প্রযোজ্য হচ্ছে না। সরকারপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি শান্তময় বসু বলেন, পিঙ্কির ক্রোমোজোম পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। তদন্তের স্বার্থেই ওঁকে জামিন দেওয়া উচিত নয়। |
দু’পক্ষের সওয়াল শুনে জেলা ও সেশন বিচারক নির্মল ঘোষাল পিঙ্কির জামিন মঞ্জুর করেন। তখন বেলা প্রায় ১টা। তা সত্ত্বেও এ দিন দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে তিনি ছাড়া পেলেন না কেন? আদালত-সূত্রের ব্যাখ্যা, জামিনের কাগজপত্র বানাতে অনেকটা সময় গড়িয়ে যায় বলেই তা সন্ধের আগে জেল-কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। পিঙ্কির সঙ্গে জামিন পান তাঁর মা-বাবাও। অভিযোগকারিণী অনামিকা আচার্য পিঙ্কির মা-বাবাকেও মামলায় জড়িয়েছিলেন। পুলিশ অবশ্য তাঁদের গ্রেফতার করতে পারেনি। পিঙ্কির জামিনের নির্দেশ শুনে এজলাসেই কেঁদে ফেলেন অনামিকা। পিঙ্কি আদালতে না-থাকলেও মামলা শুনতে ভিড় হয়েছিল। মিছিল করে গিয়েছিলেন জ্যোতির্ময়ী শিকদার, কুন্তলা ঘোষদস্তিদার, শান্তি মল্লিকের মতো প্রাক্তন ক্রীড়াবিদেরা।
পিঙ্কি ছেলে না মেয়ে, তা পরীক্ষায় গঠিত ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে এ দিন সকালেই ক্রোমোজোম পরীক্ষা (ক্যারিওটাইপিং টেস্ট)-এর রিপোর্ট আসে। দুপুরে কমিটির বিশেষ বৈঠকে চূড়ান্ত রিপোর্ট লেখা হয়। স্বাস্থ্য-সূত্রের দাবি: ক্রোমোজোমের নিরিখে পিঙ্কি পুরুষ। নারীর যৌনাঙ্গ তাঁর নেই। অথচ তাঁর দেহে পুরুষাঙ্গও অনুপস্থিত। ‘পুরুষাঙ্গ’ বলে যা রয়েছে, তা দিয়ে কোনও ভাবেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। পিঙ্কির শরীরে দু’টি শুক্রাশয়ই বর্তমান। সল্টলেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি’তে পিঙ্কির ক্যারিওটাইপিং হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের সূত্রে জানা গিয়েছে। |