|
|
|
|
জেলায় বাড়ছে দুর্ঘটনা, ৩৪টি ‘ব্ল্যাক-স্পট’ চিহ্নিত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই ছোট-বড় পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়, তা খতিয়ে দেখতে তৎপর হল পুলিশ। দেখা হচ্ছে, কোন কোন এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ, সেখানে কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে, কী পদক্ষেপ করলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমতে পারে ইত্যাদি। ২০১০-এ জেলায় পথ-দুর্ঘটনায় ৩৮৬ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১-য় ৩৭৭ জনের। অথচ, কয়েক বছর আগেও বছরে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ছিল অনেকটাই কম, ২৬০ থেকে ২৮০-র মধ্যে। জেলার মধ্যে দিয়েই গিয়েছে ৬ ও ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এই সড়কের বেশ কয়েকটি এলাকাও যেন ‘মৃত্যু-ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। জাতীয় সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ করা হবে।” প্রয়োজনে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে ট্র্যাফিক পুলিশের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
চলতি বছরের গত ৭ মাসেও জেলায় বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই ট্র্যাফিক ব্যবস্থার ‘হাল’ ফেরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। ছোট-বড় দুর্ঘটনা বাড়ায় পুলিশের একাংশ বেহাল পথকেও দায়ী করছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাস্তা ভাল থাকলে দুর্ঘটনা কমবে। |
বছর |
দুর্ঘটনা |
আহত |
মৃত |
২০০৯ |
৫৫৯টি |
৬৩০ জন |
৩০৩ জন |
২০১০ |
৬৮৬টি |
৭৫৩ জন |
৩৮৬ জন |
২০১১ |
৬৭৭টি |
৭৫১ জন |
৩৭৭ জন |
|
|
পাশাপাশি জেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সম্প্রসারণ না হলে পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’ হবে বলেও মনে করছেন জেলা পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ। গত দু’বছরে জেলায় পথ-দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানটা ঠিক কী রকম? ২০০৯ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দুর্ঘটনা হয়েছে ৫৫৯টি। আহত হয়েছেন ৬৩০ জন, মৃতের সংখ্যা ৩০৩। ২০১০-এ জেলায় ৬৮৬টি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত হন ৭৫৩ জন। মৃত্যু হয় ৩৮৬ জনের। ২০১১-য় ৬৭৭টি পথ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতের সংখ্যা ৭৫১। মৃত ৩৭৭ জন। অনেক সময়ে গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণে না থাকায় নিরীহ পথচারীর মৃত্যু হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে জাতীয় সড়কে দ্রুত গতিতে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। ক’দিন আগে খড়্গপুরের চাঙ্গুয়ালের কাছে এক দুর্ঘটনায় এক পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ৩ জন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুলিশ-জিপটি পেট্রোলিংয়ের জন্য বেরিয়ে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়েছিল। তখনই একটি লরি পিছন দিক থেকে এসে ধাক্কা মারে। জিপটি উল্টে যায়।
জানা গিয়েছে, গত দু’বছরে যে সব দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার একাংশ ঘটেছে চালকের ভুলে। চালকই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি নিয়ে হয় রাস্তার পাশে উল্টে গিয়েছেন, না হলে গাছে গিয়ে ধাক্কা মেরেছেন। এই পরিস্থিতিতে ৬ ও ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশ কয়েকটি এলাকাকে ইতিমধ্যেই ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্য সড়কের কয়েকটি এলাকাও এই তালিকায় রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ৩৪টি এলাকাকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করে এ ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ করতে চলেছে জেলা পুলিশ। এর মধ্যে ডেবরা, খড়্গপুর লোকাল, মেদিনীপুর কোতোয়ালি, শালবনি, নারায়ণগড়, বেলদা থানার কয়েকটি এলাকা রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে কিছু পদক্ষেপ করা হবে। এ জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” পূর্ত দফতর, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। এখন প্রতি বছরই রাস্তায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটর সাইকেলের সংখ্যা। এ দিকে, গাড়ির সংখ্যা বাড়লেও রাস্তা সম্প্রসারণ হচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১০-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৫০৯টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। ২০১০-এর ১ এপ্রিল থেকে ২০১১-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৯৮০টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়। আবার ২০১১-র ১ এপ্রিল থেকে ২০১২-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৫৯৬টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। অর্থাৎ মোটর সাইকেলের সংখ্যা বাড়ছেই।
মেদিনীপুর, খড়্গপুর শহরে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা এখনও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম শহর ও শহরতলিতেও অনিয়ন্ত্রিত ভাবে গাড়ি চলাচলের অভিযোগ রয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির একাংশ আবার ‘বেদখল’ হয়ে গিয়েছে। ফলে, যাতায়াতের এলাকা কমে এসেছে। মেদিনীপুর ও খড়্গপুরে ট্র্যাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কিন্তু, সব সময়ে তা ‘সক্রিয়’ থাকে না। অনেকে আবার সিগন্যাল না মেনেও গাড়ি চালান। মেদিনীপুর শহরে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা দেখভালের জন্য ৪০ জন পুলিশকর্মী রয়েছেন। সঙ্গে ৪ জন অফিসার। খড়্গপুরে ৩০ জন পুলিশকর্মী রয়েছেন। অফিসার রয়েছেন ২ জন। জেলা পুলিশ সুপারের আশ্বাস, প্রয়োজনে পুলিশকর্মী বাড়ানো হতে পারে। জেলা পরিবহণ আধিকারিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, “আমরাও সব রকম ভাবে সহযোগিতা করব। গাড়ি চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কিছু পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” জানা গিয়েছে, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য মেদিনীপুরে ইতিমধ্যে ১১ জনকে সতর্ক করা হয়েছে। গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে বলেও তাঁদের জানানো হয়েছে। |
|
|
|
|
|