নাচের দলে কাজের লোভ দেখিয়ে চন্দননগরের এক নাবালিকাকে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এক মহিলা-সহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে, ওই কিশোরীকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
শহরের মানুষের অভিযোগ, আরও অন্তত দুই মহিলাকে সম্প্রতি পাচার করা হয়। পুলিশ তাঁদেরও উদ্ধার করতে পারেনি। পাচার হয়ে যাওয়া এক মহিলা সম্প্রতি পালিয়ে আসেন। তাঁর কাছ থেকে নারী-পাচার চক্রের হদিশ পায় পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতেরা ওই চক্রের সঙ্গেই জড়িত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এপ্রিল মাসে চন্দননগরের কুঠির মাঠ-সংলগ্ন বস্তির এক কিশোরী নিখোঁজ হয়ে যায়। বছর পনেরোর ওই কিশোরীর পরিবারের তরফে থানায় ডায়েরি করা হয়। তাতে বীণা পাণ্ডে নামে সন্দেহভাজন এক মহিলার নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ, প্রাথমিক ভাবে তেমন উদ্যোগী হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামে চন্দননগরের ‘সংযুক্ত নাগরিক কমিটি’র ১২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি। তারা থানায় স্মারকলিপি দেয়। তাতেও পুলিশ তেমন নড়েচড়ে বসেনি বলে কমিটির অভিযোগ।
কয়েক দিন আগে চন্দননগরের বারাসত এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা নাগরিক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, নিখোঁজ মেয়েটিকে বিহারে আটকে রাখা হয়েছে। ওই মহিলাকেও কাজ দেওয়ার নাম করে বিহারে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার চালানো হয়। তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। পুলিশকে ওই মহিলা জানান, বিক্রির উদ্দেশ্যে মেয়েদের ওখানে নিয়ে যাওয়া হয় কাজের লোভ দেখিয়ে। মূলত দরিদ্র পরিবারের অল্পবয়সী মেয়ে এবং গৃহবধূরাই তাদের ‘টার্গেট’।
তদন্তকারীদের অনুমান, রাজেশ সিংহ এবং মমদিন আলম নামে দুই ব্যক্তি চক্রের মূল পাণ্ডা। তাদের এজেন্ট হিসেবে চন্দননগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বীণা পাণ্ডে এবং উমা রাজভর নামে দুই মহিলা গরিব পরিবারের মেয়েদের লোভনীয় কাজের প্রস্তাব দেয়। সেই ফাঁদে পা দিয়েই অনেক মেয়ে পাচার হয়ে যায় বিহারে। নিখোঁজ কিশোরীর মামা চন্দননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বীণা পাণ্ডে, উমা রাজভর এবং কলিমুদ্দিন আনসারির বিরুদ্ধে। পুলিশ গত ৩ জুলাই উমা এবং কলিমুদ্দিনকে ধরে। আন্দোলনকারীদের দাবি, চন্দননগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁটাপুকুরের এক নাবালিকাও ১ জুলাই থেকে নিঁখোজ। তারও হদিস করতে পারেনি পুলিশ।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক তথা সংযুক্ত নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গত কয়েক মাসে চন্দননগর থেকে তিনটি মেয়ে নিখোঁজ হয়। এক জন নিজে পালিয়ে আসায় তার কাছ থেকে চক্রের খোঁজ মেলে। এই চক্র যে ভাবে প্রকট আকার ধারণ করেছে, তাতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার ছাপ স্পষ্ট।”
চন্দননগরের ভারপ্রাপ্ত এসডিপিও দেবশ্রী সান্যাল অবশ্য বলেন, “দু’জনকে ইতিমধ্যেই ধরা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। নিখোঁজ মেয়ে দু’টিকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।” |