দু’পা কাটা অবস্থায় রেললাইনে পড়ে চিৎকার করছিলেন যুবক। কাটা জায়গায় মাছি বসায় নিজেই জামা খুলে সেখানে ঢাকা দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ, স্টেশন কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়ার হলেও প্রায় আধ ঘণ্টা জখমকে তুলে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর উদ্যোগ হয়নি। পরে রেলপুলিশ কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু হয় ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় পরে।
মঙ্গলবার কাটোয়া স্টেশনের কাছে এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে রেলের ভূমিকায়। কর্তব্যে পালনে টালবাহানার অভিযোগ উঠেছে মহকুমা হাসপাতালের বিরুদ্ধেও। চিকিৎসা শুরুতে দেরির কারণ জানতে চেয়ে হাসপাতালের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন মহকুমাশাসক। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সন্ধ্যায় কাটোয়া থেকে ওই যুবককে হাওড়া রেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। |
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ দিন বিকেল পৌনে ৩টে নাগাদ কাটোয়া স্টেশন ও রেলগেটের মাঝামাঝি জায়গায় একটি ট্রেনের ইঞ্জিনের তলায় পড়ে দু’টি পা-ই কাটা যায় বছর বত্রিশের শিবপ্রসাদ সর্দারের। তাঁর বাড়ি নদিয়ার তেহট্টের নফরচন্দ্রপুর এলাকায়। আশপাশের লোকজন ও রেললাইনের পাশের ব্যবসায়ীরা ছুটে যান। স্টেশনে খবর পাঠানো হয়। রেলপুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও স্টেশন কর্তৃপক্ষের তরফে লিখিত নির্দেশ (মেমো) না পাওয়ায় তারা জখমকে তোলেনি। কাটোয়া স্টেশন কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, তাঁদের কাছে ঘটনার খবর পৌঁছয় বিকেল সওয়া ৩টে নাগাদ। তার পরেই চিকিৎসক পাঠানোর জন্য রেল হাসপাতালে খবর পাঠানো হয়। রেলপুলিশকেও ‘মেমো’ পাঠানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অবশ্য দাবি, কোনও চিকিৎসক বা অ্যাম্বুল্যান্স এসে পৌঁছয়নি। রেল হাসপাতালের তরফে অবশ্য জানানো হয়, খবর পেয়ে চিকিৎসক গিয়ে জখমকে পরীক্ষা করেছিলেন।
বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ওই যুবক ও তাঁর কাটা যাওয়া পা ভ্যানে চাপিয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় রেলপুলিশ। কিন্তু জখমকে পৌঁছনোর পরে আর কোনও ‘দায়িত্ব’ না নিয়ে রেলপুলিশ চলে যাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে জখমকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করার কথা জানায় কাটোয়া হাসপাতাল। কিন্তু যুবকের আত্মীয়-পরিজন কেউ না আসায় কে তাঁকে বর্ধমানে নিয়ে যাবে, সে প্রশ্ন ওঠে। এর পরেই হাসপাতালে আসেন এক অস্থি বিশেষজ্ঞ। তখন আবার নজরে পড়ে, অপারেশন থিয়েটর (ওটি) তালাবন্ধ। চাবি খুঁজে ওটি-র তালা যখন খোলা হয় তত ক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে ঘণ্টাখানেক সময়।
ইতিমধ্যে হাসপাতালে পৌঁছন কাটোয়ার মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম ও এসডিপিও ধ্রুব দাস। ওটি খোলার পরে আবার চিকিৎসকেরা জানান, রোগীর তরফে কেউ নির্দিষ্ট ফর্মে সই করে অনুমতি না দিলে তাঁদের পক্ষে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। এসডিপিও-র নির্দেশে কাটোয়া থানার এক অফিসার রামরঞ্জন পাত্র ফর্মে সই করার পরে চিকিৎসা শুরু হয়। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “মহকুমা হাসপাতালগুলি চলে রোগীর আত্মীয়দের উপরে নির্ভর করে। তাঁরা না থাকলে কী দশা হয়, এ দিনের ঘটনায় তা প্রমাণ হল।”
পূর্ব রেলের হাওড়ার ডিআরএম পার্থসারথী মণ্ডল বলেন, “খবর পাওয়ার পরেই ওই যুবককে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাওড়া রেল হাসপাতালে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছি।” সন্ধ্যায় ওই যুবককে হাওড়া পাঠানো হয়। ওই যুবকের বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তাই রেলের তরফে ওই যুবকের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
কাটোয়ার রেলপুলিশ অবশ্য দায়িত্ব এড়ানোর অভিযোগ মানতে চায়নি। তাদের দাবি, রেলের নিয়ম অনুযায়ীই কাজ করেছে তারা। কাটোয়া হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় এ দিন ছুটিতে ছিলেন। মহকুমাশাসক জানান, চিকিৎসা শুরুতে দেরির কারণ জানতে চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। |