সহজ পথ’ (১৩-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে এই চিঠি। জাঙ্ক ফুডের প্রতি শিশু ও কিশোরদের আসক্তি আজ একটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছে গেছে। জাঙ্ক ফুড বলতে বোঝায়, ‘হাই এনার্জি ফুড উইথ পুওর নিউট্রেশনাল প্রোফাইল’। এই সব খাবারে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট, সুগার এবং ফ্যাট থাকে। ক্যালরি মূল্য অস্বাভাবিক বেশি হলেও, যা থাকে না তা হল ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও ডায়েটারি ফাইবার। তাই এই খাবারের ক্যালরিকে বলে, ‘এম্পটি ক্যালরি’। চতুর্দিকে আজ জাঙ্ক ফুডের দোকান আর জাঙ্ক ফুডের রমরমা। এই সব খাবারের মধ্যে পড়ে বার্গার, হটডগ, পিৎজা, ফ্রেঞ্চফ্রাই, কেক, পেস্ট্রি, প্যাটিস, ন্যুডলস, চিপস, কুকিস, মিষ্টি, ক্যান্ডি, আইসক্রিম, সফ্ট ড্রিঙ্ক, জেলি, বাটার, মার্জারিন, কনডেন্স্ড মিল্ক, চকোলেট, টিনে ভরা রান্না মাছ, মাংস, সবজি ইত্যাদি। এই জাঙ্ক ফুড গ্রহণ করতে করতে বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তি ও নির্ভরতা তৈরি হয়। কমতে থাকে প্রাকৃতিক খাবারদাবার খাওয়ার অভ্যাস। আর ভাত, রুটি, ডাল, সবজি, শাক, মুড়ি, চিড়ে, খই, ছাতু, ফল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দই, স্যালাড ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে না-খেলে পুষ্টির অভাব দেখা দেবেই। কোক, বার্গার ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-এ আসক্ত শহুরে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে করোনারি হদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্থূলতা, রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস ছাড়াও নানা শারীরিক সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।
কেক বা পেস্ট্রিতে থাকা বাটার বা ক্রিম, পিৎজায় থাকা চিজ শরীরে বেশি মাত্রায় ঢুকলে নানা ভয় থাকে। অনেক জাঙ্ক ফুডের মূল উপকরণ ময়দা। এতে ফাইবার থাকে না বললেই চলে। পুষ্টিগুণও আটার তুলনায় অনেক কম। ন্যুডলসে স্বাদ আনতে মেশানো হয় ‘আজিনা মটো’ বা মনো সোডিয়াম গ্লুটামেটের মতো রাসায়নিক। নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি যা শরীরে ঢুকলে দেখা দেয় নানা ধরনের স্নায়বিক উপসর্গ। যে কোনও মাত্রায় আজিনা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে চরম বিপজ্জনক।
বেশির ভাগ জাঙ্ক ফুডে মেশানো হয় নানা ধরনের অসংখ্য রাসায়নিক। প্রিজারভেটিভ, ফুড অ্যাডিটিভ, কালারিং এজেন্ট, ফ্লেভারিং এজেন্ট, বাফার এজেন্ট ইত্যাদি। এতে শরীর-স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জাঙ্ক ফুড যথাসাধ্য কম খেয়ে প্রাকৃতিক খাবারদাবারের উপর আবার আগের মতো নির্ভর করতে শেখা জরুরি। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের অতিমাত্রায় সতর্ক থাকা উচিত। উল্লেখ্য, জাঙ্ক ফুডের প্রচলন কমানোর জন্য ডেনমার্কে যে-সব ফাস্ট ফুডে ২.৩ শতাংশর বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে, তার উপর সারচার্জ বসানো হয়েছে। আবার হাঙ্গারিতে যে-সব বোতলজাত পানীয়তে প্রতি ১০০ মিলিতে ২০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফিন আছে, তার উপর বিশেষ শুল্ক বসানো হয়েছে। তবে শুধু মাত্র আইন প্রণয়নের সহজ পথে এর সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন শিশু ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে জাঙ্ক ফুডের কুফল সম্পর্কে নিরন্তর প্রচার। স্কুলস্তরে এ ব্যাপারে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষক, বিষ্ণুপুর স্যার রমেশ ইনস্টিটিউশন, রাজারহাট-বিষ্ণুপুর, কলকাতা-১৩৫
|
‘গণকৃষ্টি’ নয়, ‘লোককৃষ্টি’-র ‘বিলে’ |
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শেক্সপিয়ার, বিবেকানন্দ এবং মহাভারত’ (৪-৭) নিবন্ধটিতে লেখা হয়েছে, ‘গণকৃষ্টি’র ‘বিলে’ নাটকে স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকায় দেবশঙ্কর হালদার। আসলে এটি হবে ‘লোককৃষ্টি’র প্রযোজনায় ‘বিলে’ নাটকে...। ছবির সঙ্গে প্রদত্ত পরিচায়নেও একই বিভ্রান্তি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা-৬৪
|