প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য -প্রমাণ না থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেও অব্যাহতি দেওয়া হল রাস্তায় সব্জি ফেলে অবরোধের ঘটনায় ধৃত তিন জনকে। শুক্রবার সকালে পূর্বস্থলীতে ওই অবরোধের পরে রাতে আট জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে তিন জন আগেই জামিন পেয়েছিলেন। বাকি পাঁচ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়। তবে সোমবার পুলিশ জানায়, ওই পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য -প্রমাণ মেলেনি। তবে বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ দিন অবশ্য তাঁরাও জামিন পেয়েছেন।
পূর্বস্থলীর কালেখাঁতলায় পাইকারি সব্জি বাজারে দর নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শুক্রবার চাষিদের ক্ষোভের মুখে পড়েন প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের দাবি ছিল, ফড়েরা হাত গুটিয়ে নেওয়ায় প্রশাসনকেই সব্জি বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা এসটিকেকে রোড অবরোধ করা হয়। তখন পুলিশ -প্রশাসনের কর্তারা অবরোধকারীদের বুঝিয়ে নিরস্ত করলেও সন্ধ্যায় জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা দাবি করেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে’ ওই অবরোধ করা হয়েছে। এর পরে গভীর রাতে বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় কালেখাঁতলা বাজার সমিতির সম্পাদক তথা বিজেপি -র পূর্বস্থলী ২ ব্লক সহ -সভাপতি ক্ষুদিরাম মাহাতো -সহ আট জনকে। ক্ষুদিরামবাবু ছাড়াও শচীন্দ্রকুমার রায়, সমীর মাহাতো, কাশী ঘোষ ও মনোরঞ্জন মাহাতো নামে চার জনের বিরুদ্ধে হুমকি, প্রতারণা ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ আনা হয়। শনিবার কালনা আদালত ক্ষুদিরামবাবুকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে ও বাকি চার জনকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
এই পাঁচ জন জামিন না পাওয়ায় শনিবার দুপুরে ফের ঘণ্টাখানেক পথ অবরোধ করেন কিছু বাসিন্দা। সে দিন বিকেলেই পূর্বস্থলী ২ ব্লক অফিসে প্রশাসনিক আধিকারিক ও কালেখাঁতলা বাজারের আড়তদারদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সেখানে আড়তদারের দাবি করেন, ধৃত পাঁচ জনের শীঘ্র জামিন না হলে তাঁরা ব্যবসা বন্ধ রাখবেন। প্রশাসনের তরফে অবশ্য তাঁদের বাজার সচল রাখতে বলা হয়। রবিবার থেকে কালেখাঁতলা পাইকারি বাজার খোলে।
সোমবার ছিল ক্ষুদিরামবাবুর পুলিশ হেফাজতে তৃতীয় দিন। কিন্তু তদন্তের কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে এ দিনই তাঁকে কালনা আদালতে তোলে পুলিশ। মামলার চার্জশিটও দাখিল করা হয়। ক্ষুদিরামবাবুর আইনজীবী গৌতম গোস্বামী জানান, চার্জশিটে দু’জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ক্ষুদিরামবাবু ও শচীন্দ্রবাবু। বাকি তিন জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য ও প্রমাণ মেলেনি বলে রিপোর্টে জানিয়েছে পুলিশ। ফলে মামলা থেকে তাঁরা অব্যাহতি পান। গৌতমবাবু বলেন, “দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৬ ও ৩৫৩ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। অর্থাৎ, মূলত সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।” তবে এই দু’জনেরও এ দিন জামিন মঞ্জুর করেন সিজেএম মধুমিতা রায়।
এ দিন কালনা আদালত চত্বরে জড়ো হন কালেখাঁতলা এলাকার বেশ কিছু মানুষজন। এমনই এক বাসিন্দা শ্রীদাম মাহাতোর দাবি, “সমীর, কাশী ও মনোরঞ্জন ওই ঘটনায় জড়িত ছিল না। রাতে একটি বিয়েবাড়ি থেকে ভোজ খেয়ে ফেরার পথে পুলিশ ওদের ধরেছিল। তাই এখন ওদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণও পুলিশ দাখিল করতে পারল না।”
প্রথমে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হলেও তিন জনকে অব্যাহতি দেওয়া হল কেন? জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সবিস্তার তদন্ত করে তিন জনের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলেনি। আমরা চাই না, নিরপরাধ কেউ শাস্তি পাক।” |