বদলি নীতির জের
এক বছরেই এক-শিক্ষকের প্রাথমিক স্কুল বাড়ল ২৩টি
ত এক বছরে ২০০-রও বেশি প্রাথমিক শিক্ষক এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বদলি হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে। শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে দলবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম। তাদের বক্তব্য, বিচার-বিবেচনা না করে বদলির জেরে অনেক স্কুলেই শিক্ষক-সংখ্যা কমে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। যেখানে ২ জন মাত্র শিক্ষক ছিলেন, সেখান থেকেও এক জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দিনে সমস্যা আরও জটিল হবে। কিছু বদলি ঘিরে বিতর্ক যে রয়েছে, তা মেনে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতিরও বক্তব্য, ঠিকঠাক সিদ্ধান্তের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মুর্মুর অবশ্য দাবি, “শিক্ষক নিয়োগের সময়েই দেখা উচিত ছিল, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব কতটা। ভুলটা তখনই হয়েছিল। পরে তা ঠিক করারই চেষ্টা করছি আমরা। বাড়ি থেকে ২০- ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল হলে কেউ বদলির আবেদন করতেন না। এক জন মহিলার পক্ষে তো ১৫০ কিলোমিটার যাতায়াত করে স্কুলে পড়ানো সম্ভব নয়।” বদলির ক্ষেত্রে দলবাজির অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর বক্তব্য, “গত এক বছরে ২০০-রও বেশি শিক্ষক বদলি হয়েছেন ঠিকই, তবে সবক্ষেত্রে আবেদন খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হয়েছে। অনেককে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বদলি করা হয়েছে।” চেয়ারম্যানের এই যুক্তি খারিজ করে বামেদের বক্তব্য, যেখানে ২ জন শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে থেকে এক জন শিক্ষককে বদলি করা অনুচিত। জেলার কয়েকটি এলাকায় তা-ও হয়েছে। এর ফলে এক বছর আগে যেখানে এক-শিক্ষকের স্কুলের সংখ্যা ছিল ৮৩, তা বেড়ে ১০৪ হয়েছে। বদলির জন্য সংসদ কর্তৃপক্ষের কাছে আরও ৫ হাজার আবেদন পড়ে রয়েছে।
কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলেন, “বদলির ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতি থাকা দরকার। সংসদে তা নেই। দলতন্ত্র চলছে। কেশপুরের বেশ কয়েকটি স্কুলেই এখন এক জন মাত্র শিক্ষক। স্বাভাবিক পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে।” বৃহস্পতিবার বিধানসভায় উল্লেখ-পর্বেও বিষয়টি তুলেছিলেন রামেশ্বরবাবু। তিনি বলেন, “বদলির ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে। চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে কাজ করছেন। কেন এই পরিস্থিতি, তা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম। উত্তর পাইনি।”
এক-জন করে শিক্ষক রয়েছেন, জেলায় এমন স্কুলের অধিকাংশই আবার জঙ্গলমহলে। এই সমস্যার কথা মানছে সংসদও। চেয়ারম্যান বলেন, “যে-সব স্কুলে এক জন করে শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে শিক্ষক-সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাড়তি শিক্ষক রয়েছেন, এমন স্কুল থেকেই শিক্ষকদের বদলি করা হবে। এ জন্য তালিকাও তৈরি হচ্ছে।” তা হলে কেন ২ জন শিক্ষক ছিলেন, এমন স্কুল থেকেও এক জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে? সদুত্তর মেলেনি চেয়ারম্যানের কাছে।
সংসদ সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪৬৮২টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ১৫ হাজার ২৯৫ জন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সবমিলিয়ে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ৯১ জন। আগে স্কুলে ৪০ জন ছাত্রপিছ এক জন করে শিক্ষক থাকতেন। এখন সেখানে ৩০ জন ছাত্র-পিছু এক জন করে শিক্ষক থাকার কথা। পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, জেলায় শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা যথেষ্টই। তাও কেন এই পরিস্থিতি? কারণ, গ্রামের দিকে অধিকাংশ স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা কম থাকলেও শহর ও শহর সংলগ্ন স্কুলে এই সমস্যা নেই। কোনও কোনও স্কুলে ৮-১০ জন করেও শিক্ষক রয়েছেন! মেদিনীপুরের হাঁসপুকুর প্রাথমিকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ৪৬, শিক্ষক ৪ জন। তালপুকুর প্রাথমিকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৯২, শিক্ষক ৫ জন। সিপিএম প্রভাবিত নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, “আসলে বদলির সময় স্কুলের সুবিধা-অসুবিধা গৌণ হয়ে যাচ্ছে! তাই শহরের অধিকাংশ স্কুলে ছাত্রছাত্রীর তুলনায় শিক্ষক বেশি রয়েছেন। গ্রামের দিকে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।” জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা মৃন্ময় দাসেরও অভিযোগ, “বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সুপারিশে শিক্ষকদের বদলি করা হচ্ছে। যেখানে ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষার স্বার্থ দেখা হচ্ছে না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.