পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
দায় কার
উদ্যানে ‘কাঁটা’
ক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কার্যত ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা ও রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার দু’টি শিশু উদ্যান। পার্কের হাল ফেরানো দূরে থাক, তত্ত্বাবধানের দায় কার, তাই নিয়েই শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে গত বছর ১৩ জানুয়ারি ২১ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানার জ্যাংড়া দক্ষিণ মাঠে রবীন্দ্র শিশু উদ্যানের শিলান্যাস করেন রাজারহাটের তৎকালীন বিধায়ক রবীন মণ্ডল। কাঠা তিনেক খাস জমিতে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ও গ্রিলের দরমা লাগিয়ে উদ্যান নির্মাণ করা হয়। ভিতরে পাঁচিলের গায়ে শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য সিমেন্ট দিয়ে বিভিন্ন মডেলও তৈরি হয়। এ সবের ব্যয়ভার বহনের কথা ছিল বিধায়ক তহবিল ও রাজারহাট পুরসভার তহবিল থেকে। নির্মাণের পর থেকেই এই উদ্যানে এলাকার শিশুরা খেলাধুলো করত বলে জানান বাসিন্দারা। আনুষ্ঠানিক ভাবে আর পার্কটির উদ্বোধন করা হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, শিশু উদ্যানটি নির্মাণের পর থেকে তার রক্ষণাবেক্ষণে আর নজর দেয়নি পুরসভা। নজরদারি করেনি ওয়ার্ড কমিটিও। ফলে শিলান্যাসের বছর দেড়েকের মধ্যেই প্রচুর ঝোপঝাড় ও আগাছার আড়ালে প্রায় গোটা পার্কটিই হারিয়ে যাওয়ার দশা। দেওয়ালের গায়ে মডেলগুলিও আগাছার আড়ালে ঢেকে গিয়েছে। আরও অভিযোগ, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই উদ্যানটি এখন ব্যবসায়ীদের নির্মাণসামগ্রী রাখার ঠেকে পরিণত হয়েছে। উদ্যানের মাঝখানে স্তূপ করে বালি রেখে ব্যবসা করছেন স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী। প্রবেশপথ-সহ চারপাশ ভরে গিয়েছে বড় বড় ঘাসে। মশা, মাছি এবং নানা রকম কীটপতঙ্গের উপদ্রবও বাড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে এলাকার কচিকাঁচারা কেউ এখন আর ওই উদ্যানে যেতে পারে না। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “নির্মাণের পরে বেশ কিছু দিন এলাকার শিশুরা ওই পার্কে খেলেছিল। কিন্তু প্রবেশপথটি এবড়োখেবড়ো হওয়ায় শিশুরা পড়ে গিয়ে জখম হত। তাই ধীরে ধীরে তাদের আসা বন্ধ হয়ে যায়। উদ্যান পরিষ্কার থাকলে, রাস্তা ভাল হলে শিশুরা আবার ওখানে খেলতে যাবে।”
সংশ্লিষ্ট দুই ওয়ার্ড অবশ্য কেউ আঙুল তুলছে অন্যের দিকে, কেউ বা পুরসভার দিকেই। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুজিত মণ্ডল বলেন, “পার্কের নির্মাণে মূল উদ্যোগ ছিল ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের। পার্ক পুরসভার। তত্ত্বাবধানের ভার পুরসভারই। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের নয়।” অন্য দিকে, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর মৌসুমী সাহার বক্তব্য, “আমরা পার্ক নির্মাণে উদ্যোগী হই স্থানীয় একটি সংগঠনের সহযোগিতায়। এই উদ্যানের জন্য পুরসভার টাকা দেওয়ার কথা। সে টাকা আমরা এখনও পাইনি। তাই পার্কটা ভাল করে শুরুই করা যায়নি। এটা পুরসভারই পার্ক। এক সপ্তাহের মধ্যে তা সাফ করে শিশুদের খেলার সরঞ্জাম লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই উদ্যানের ক্ষেত্রে তাঁদের উদ্যোগের বিষয়টিই মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “স্থানীয় এক সংগঠনের উদ্যোগে ওই পার্কের নির্মাণ হয়। তৎকালীন বিধায়ক রবীন মণ্ডল তার শিলান্যাস করেন। বিধায়ক তহবিল থেকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি হেরে যাওয়ায় সে টাকা আর পাওয়ার আশা নেই। এই কাজে পুরসভার কিছু টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সে টাকা আমরা দেবও। তবে ওই পার্ক পুরসভার উদ্যোগে গড়া হয়নি।”
প্রায় একই হাল রাজারহাট-বিষ্ণুপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকার নৈপুকুর গ্রামের সুকান্ত শিশু উদ্যানেরও। রাজারহাটের পুরনো কাঠগোলা বাসস্টপের ২১১ নম্বর বাসরাস্তা থেকে নৈপুকুরগামী রাস্তার ধারে বছর ১৫-২০ আগে প্রায় ১৫ কাঠা খাস জমিতে এই শিশু উদ্যানটি নির্মাণ করে রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতি। শিশুদের খেলার জন্য উদ্যানে লাগানো হয় লোহার ঘূর্ণি, দোলনা। নির্মাণ করা হয় পাকা স্লিপ। এ ছাড়াও একটি কংক্রিটের জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণ করে জলের ব্যবস্থাও করা হয়। উদ্যানে বসানো হয় বেশ কিছু অর্থকরী গাছ। ২০০৭-এ বারাসতের সমাজভিত্তিক বনাঞ্চলের পক্ষ থেকে গাছ বসিয়ে সৌন্দর্যায়নও হয়। এ ক্ষেত্রেও দীর্ঘ দিন আগে উদ্যানটি নির্মাণের পরে সেটির রক্ষণাবেক্ষণে রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতি আর নজর দেয়নি বলে অভিযোগ। ফলে উদ্যানে খেলার উপকরণগুলির এখন বেহাল দশা। মরচে ধরে ভেঙে যাচ্ছে লোহার ঘূর্ণি। দোলনা ভেঙে পড়ে গিয়েছিল। পরে তা চুরিও হয়ে যায় বলে এলাকাবাসীদের বক্তব্য। এ ছাড়াও বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলের ট্যাঙ্কে আগাছা গজিয়েছে। মাঝেমধ্যেই গরু ঢুকে পড়ে পার্কে। ভিতরে মাটি স্তূপ করে রাখা। রাতে উদ্যানের ভিতরে সর্বত্র আলোও পৌঁছয় না। একটু বৃষ্টিতেই জল জমে কাদা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নগরায়ণের দাপটে শিশুদের খেলার জন্য আর কোনও খালি জমি পড়ে থাকছে না। মাটি ফেলে উদ্যানটিকে উঁচু করে এবং পরিকল্পনা মতো সংস্কার করলে এটি শিশুদের জন্য একটি আকর্ষণীয় খেলার মাঠ হতে পারে। তাই এ নিয়ে উদ্যোগী হওয়া উচিত পঞ্চায়েত সমিতির। এ ব্যাপারে রাজারহাট পঞ্চায়েত সমিতির স্থানীয় প্রতিনিধি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি, তৃণমূলের গৌরপদ দাস বললেন, “ওই পার্কে মাটি ফেলা, আলো লাগানো, ঘাস লাগানো এবং শিশুদের নানা খেলার সরঞ্জাম লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে। রক্ষণাবেক্ষণেরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই এলাকায় নতুন পাইপলাইনের কাজ চলছে। এর থেকেই উদ্যানের জলের ট্যাঙ্কে জল সরবরাহ করা হবে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.