ঠিক যেন হলিউডের কোনও শ্যুটিং স্পট!
সবুজ গাছগাছালির মধ্যে প্রকাণ্ড উঁচু টিনের বাড়ি। বহু দূর পর্যন্ত তার শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত। ভিতরে ঢুকলে থমকে যেতে হয়। সারি দিয়ে সাজানো নানা ধরনের হেলিকপ্টার। হরেক রংয়ের, হরেক কায়দার। নামও হরেক কোনওটা চিতা, কোনওটা চিতল, আবার কোনওটার গায়ে লেখা চেতক।
এক জায়গায় এত কপ্টার! শহরের এত কাছে! মডেল নাকি?
কিছু বুঝে ওঠার আগে কান ফাটানো শব্দ। পিছনের রানওয়েতে একটা চেতক মাথার পাখা বনবন করে ঘোরাতে শুরু করেছে! জানা গেল, প্রয়োজন পড়লে হ্যাঙ্গারের ভিতরে লুকিয়ে থাকা এই কপ্টারগুলো উড়ে যায় দেশের প্রান্তে প্রান্তে। |
এমন একটা নয়, দু’-দু’টো হ্যাঙ্গার রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের পলতায়। দু’টোই কেন্দ্রীয় সংস্থা হিন্দুস্থান অ্যারোনোটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)-এর। ব্যারাকপুরের কপ্টার মেরামতি কারখানার সূচনা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, ১৯৪০-এ। তখন নাম ছিল ‘টাটা অ্যাভিয়েশন।’ ২০০৬ সালে ব্যারাকপুরে হ্যালের ইউনিটটিকে সম্পূর্ণ ‘হেলিকপ্টার ডিভিশন’ হিসেবে ঘোষণা করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। হেলিকপ্টার ছাড়াও হ্যালের প্রশিক্ষিত কর্মীরা এখন সামরিক-অসামরিক বিমানের ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
হ্যাল ব্যারাকপুর অবশ্য শুধু রক্ষণাবেক্ষণেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সংস্থা-কর্তৃপক্ষের দাবি, কারখানা উন্নত হওয়ার পরে গত ক’বছরে বিদেশ থেকে নতুন যন্ত্র এনে বিদেশি প্রযুক্তিতে সেগুলো জুড়ে নতুন ১৩টি কপ্টারও তৈরি হয়েছে এখানে। সংস্থার কর্তারা এ-ও জানাচ্ছেন, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে হিমালয় সংলগ্ন বিশাল পাহাড়ি এলাকা এবং দেশের বিস্তীর্ণ সমুদ্র-সীমান্তে নজরদারির জন্য যত হেলিকপ্টার ব্যাবহার করা হচ্ছে, তার সিংহভাগই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে ব্যারাকপুরে আসে মেরামতির জন্য। উপরন্তু ইদানীং এখানে ফৌজি হেলিকপ্টার মেরামতিও শুরু হয়েছে। যেমন, ল্যান্সার। যাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, রকেট লঞ্চারও মজুত। সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্তে নজরদারি, বন্যায় উদ্ধারকাজ, বিভিন্ন সরকারি সমীক্ষা, কিংবা উঁচু পাহাড়িতে কাজ করতে চিতা, চেতক বা চিতলের জুড়ি নেই। এবং এ ভাবেই গত ৭২ বছর ধরে ব্যারাকপুরের হ্যাল কারখানা ভারতীয় বায়ুসেনা, সামরিকবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর স্বার্থে কাজ করে আসছে। কিন্তু সংস্থা-কর্তৃপক্ষের আক্ষেপ, ব্যারাকপুরেরই অধিকাংশ লোক তাঁদের কর্মকাণ্ডের কথা জানেন না! জেনারেল ম্যানেজার সত্যেন্দ্রমোহন শর্মা ও কৃষ্ণচন্দ্র নন্দের কথায়, “এ-ও তো একটি কারখানা। আমরা ব্যবসা করি। আমাদের আয় হয়, লাভও হয়। আবার দেশের জন্য কাজও হয়। আমরা চাই, মানুষ আমাদের কাজকর্মের কথা জানুক।” জিএম-রা জানাচ্ছেন, আরও উন্নত কারখানা গড়তে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ব্যারাকপুরে তাঁদের সাত একর জমি বরাদ্দ করেছে। “ফ্রান্সের প্রযুক্তি নিয়ে বেসিক টার্বো প্রপ ট্রেনার, মিডিয়াম মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফটের মতো নতুন ধরনের কপ্টার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।” বলছেন তাঁরা।পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের স্বার্থে উন্নয়নের বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে হ্যাল ব্যারাকপুর। যেমন, পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহ। সংস্থা-সূত্রের খবর: সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের কয়েকটি ব্লকে তারা গভীর নলকূপ বসিয়েছে। ব্যারাকপুরের বেশ কিছু স্কুলে জোগানো হয়েছে বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল। সঙ্গে আর্থিক সাহায্য। মহকুমার প্রাইমারি ও জুনিয়র স্কুলগুলোকে নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন হচ্ছে। |