সম্পাদক সমীপেষু...
শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ঠিক হলেই সব গোলমাল মিটবে না
সন্দীপ সিংহের ‘সব স্কুলে চাই যথেষ্ট শিক্ষক’ (২২-৫) সম্বন্ধে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক হিসাবে কিছু বলতে চাই। শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৪০ হলেও শিক্ষকের অভাবে এখনও বহু বিদ্যালয় যথার্থই গোয়ালঘরে পরিণত হয়ে আছে। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু মাত্র শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? সরকারি নির্দেশবলে বিদ্যালয়ের ইউনিট সংখ্যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্টাফ প্যাটার্নে শিক্ষক পদ মঞ্জুর করার পদ্ধতি কিছু দিন আগেও সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে চালু ছিল। তবে এ ব্যাপারে বর্তমানে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতের কথাই বেশি শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে কথা বলে মনে হয়েছে, অতিরিক্ত জিলা পরিদর্শক এবং জিলা পরিদর্শকগণও যথেষ্ট দ্বিধাগ্রস্ত। সব দিক দিয়ে ইউনিট সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষক পদ মঞ্জুরের পদ্ধতিটি অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক ও বাস্তবসম্মত।
মনে করুন, পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছয় ইউনিটের কোনও একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতি শ্রেণিতে গড়ে চল্লিশ জন করে মোট দুই শত চল্লিশ জন ছাত্র আছে। শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত (১:৪০) অনুযায়ী ওই বিদ্যালয়ে ছয়টি শিক্ষক পদ মঞ্জুর হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণিতে মোট দশটি পাঠ্য বিষয় ছয় জন শিক্ষকের পক্ষে পাঠদানে মানের অবনমন বা অসুবিধার কথা কি ভাবা হয়েছে? এ ছাড়া এক জন শিক্ষককে সপ্তাহে ক’টি করে ক্লাস করতে হবে, সে কথা কি সন্দীপবাবু ভেবে দেখবেন? সপ্তাহে বিদ্যালয়ে মোট ২৪৪টি ক্লাসের মধ্যে এক জন শিক্ষককে গড়ে ৪১টি করে ক্লাস নিতে হবে, যা বাস্তবে অসম্ভব। সেই কারণেই সরকারি নিয়মানুসারে ছয় ইউনিটের বিদ্যালয়ে সর্বনিম্ন মোট অনুমোদিত শিক্ষক পদের সংখ্যা ছিল ১২, যা সন্দীপবাবুর কথায়, ‘অতিরিক্ত’।
অর্থাৎ কম ইউনিটের ছোট বিদ্যালয়গুলির শিক্ষক পদ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে এই শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতের বিষয়টি প্রয়োগ করা একটি অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব, ছাত্র-স্বার্থের পরিপন্থী পদক্ষেপ। বরং তা গড় স্বাভাবিক ছাত্র সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি ছাত্রের বিদ্যালয়ে শুধু মাত্র অতিরিক্ত শিক্ষক পদ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তা ছাড়া, কম ইউনিটের ছোট বিদ্যালয়গুলির অতিরিক্ত (?) শিক্ষক মাত্রই ‘আসি যাই মাইনে পাই’-এর দলে ফেলা বোধ করি ঠিক হবে না। বরং বেশির ভাগ বড় (বেশি ইউনিটের/ছাত্রের) বিদ্যালয়গুলির শিক্ষক মহাশয়গণের ক্ষেত্রে এই কথাটি বেশি সত্য। কারণ, ছাত্র হ্রাসের দুর্ভাবনাও তাদের নেই। আর নামী বিদ্যালয়ের দামি (প্রাইভেট টিউশনের সৌজন্যে) ছাত্রদের ভাল ফল করানোর দায়বদ্ধতাও তাদের নেই।
তাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ, গ্রামাঞ্চলে ছাত্র অনুপাতে বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম থাকায় অতিরিক্ত ছাত্রদের জন্য শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতে অতিরিক্ত শিক্ষক পদ মঞ্জুর ও তার নিয়োগের আশু ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে শহরাঞ্চলে পুরসভা/ কর্পোরেশন ওই অঞ্চলের ছাত্রদের ওই অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলিতেই পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির ব্যাপারে কোনও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিলে কম ইউনিটের ছোট বিদ্যালয়গুলিতে পরিকাঠামো অনুযায়ী আরও কিছু ছাত্রকে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। আর এই পদ্ধতি চালু থাকলে পাঁচ-ছয় বছর বাদে যে-কোনও সঙ্কটের সমাধানে শুধু মাত্র ছাত্রসংখ্যার তারতম্যের ভিত্তিতে ছোট বিদ্যালয়গুলির গায়ে ‘অপ্রয়োজনীয়’ তকমা লাগিয়ে বিদ্যালয়গুলির সমস্ত অনুভূতি বা অবদান উপেক্ষা করে তাকে হেয় করা বা চিরতরে বন্ধ করার মতো পরামর্শ আসা অনেক কমে যাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.