নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য বামশাসিত ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামল সিটু। আগরতলায় রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রাধীন একটি খাদ্য গুদামে পণ্য ওঠা-নামাকে কেন্দ্র করে বহু দিন যাবৎ সিটু নিয়ন্ত্রিত শ্রমিকদের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বাঁধছিল। শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের ‘ন্যায্য’ দাবিকে আমল দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট পরিবহণ মালিক ও রাজ্য খাদ্য দফতর। আজ অরুদ্ধতিনগরের ওই গুদামের বাইরে প্রায় ১৭৫ জন শ্রমিক বিক্ষোভ দেখায়। সিটুর রাজ্য সম্পাদক পীযূষ নাগ বলেন, ‘‘অরুন্ধতিনগরে শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। ত্রিপাক্ষিক আলোচনা হলে কয়েক দিনের মধ্যেই শ্রমিকদের ‘সমস্যা’ মিটে যাবে।”
অরুন্ধতিনগরে রাজ্যের খাদ্য গুদামের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি জন্য অনেক দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। উল্লেখ্য, মাল বহনকারী বিভিন্ন পরিবহণ মালিক, শ্রমিক সংগঠন এবং রাজ্য খাদ্য দফতরের মধ্যে একটি ‘ত্রিপাক্ষিক চুক্তি’-র ভিত্তিতে এখানকার শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারিত হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস আগেই। সিটুর রাজ্য সম্পাদক জানান, শ্রমিকদের তরফে ‘বিষয়টি’ রাজ্য সরকার এবং পরিবহণ মালিকগোষ্ঠীর নজরেও আনা হয়েছে বহু বার। কিন্তু পরিবহণ মালিকরা নতুন চুক্তি করতে আগ্রহী নয়। ফলে সমস্যা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। ১৮ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বেসরকারি পরিবহণ মালিকরা কোনও রকম আলোচনায় বসতেই রাজি নন।
অরুদ্ধতিনগরের খাদ্য গুদামের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত শ্রমিকই সিটুর সদস্য। অন্য কোনও শ্রমিক সংগঠন এখানে নেই। উল্লেখ্য, এফসিআইয়ের বিভিন্ন খাদ্যশস্য বস্তাবন্দি হয়ে এখানে আসে। তার পর রাজ্যের নানান প্রান্তে তা সরবরাহ করা হয়। শ্রমিক আন্দোলনের ফলে মাল নামানো-ওঠানো বন্ধ। দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধ ট্রাক।
এ দিকে, বাম জমানায়, একটি বাম শ্রমিক সংগঠনের ‘শ্রমিক’-দের বিদ্রোহে বিব্রত রাজ্য সরকার। খাদ্য দফতরের সূত্রে জানা গেল, শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পেয়ে অকুস্থলে যান রাজ্যের খাদ্য অধিকর্তা দেবাশিস বসু। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সরকারের অধীনস্থ ‘সেন্ট্রাল স্টোর ডিস্ট্রিউবিউশন’-এর ভারপ্রাপ্ত শঙ্কর দে। সরকারের অস্বস্তি যে চরমে তা খাদ্য অধিকর্তা ও খাদ্য সচিবের দফতরের টানাপোড়েনেই স্পষ্ট।
দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনও কথা বলার আমার অধিকার নেই। যা বলার খাদ্য দফতরের প্রধান সচিব বলবেন।’” আর খাদ্য সচিবের দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, খাদ্য অধিকর্তার দফতর থেকেই এ বিষয়ে সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে। উদ্ভুত সংকটের কথা স্বীকার করে শঙ্করবাবু অবশ্য বলেন, “শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’’ |