বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সত্যেন্দ্রনাথকে বিনম্র প্রণাম
কাল থেকে অপেক্ষায় ছিলাম, কখন খবরটা পাব।
সার্ন গবেষণাকেন্দ্র জেনিভার কাছেই। আমাদের সময় দেড়টা নাগাদ ওখান থেকে বিজ্ঞানীরা সেই আশ্চর্য ঘোষণাটি করলেন চিহ্ন মিলেছে এমন এক কণার, যা ব্রহ্মাণ্ডের আর সব কণার ভর জোগাতে পারে। তবে এ কি সেই? হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছিল যাকে? লোকের মুখে যার নাম ঈশ্বর কণা? এ কণা সে কণা কি না, বিশেষজ্ঞরা এখনও নিশ্চিত নন। কিন্তু তাতে কী? পদার্থে ভর জোগান দেওয়ার মতো কোনও একটা কণার খোঁজ যে মিলেছে, সেটাই সব চেয়ে বড় কথা। ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে এত বড় একটা ধাপ এগোনো গেল, সেটাই সব চেয়ে বড় কথা।
আমার তো মনে হচ্ছে, আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত এটা। ভারতীয় হিসেবে গর্ব বোধ করছি। সত্যেন্দ্রনাথ বসু যে ধরনের কণার কথা বলে গিয়েছিলেন, অবশেষে সেই জাতের কণারই চিহ্ন মিলেছে যে! আমি মনে করি, সার্ন-এর আবিষ্কার সত্যেন্দ্রনাথের প্রতি বিনম্র প্রণাম।
আমাদের খুশি হওয়ার আরও কারণ আছে। ভারতের আরও কয়েকটি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এবং ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারও কিন্তু সার্ন-এর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরেই যুক্ত। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা যে অন্যদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলছেন, এতে সেটাই প্রমাণিত হয়।
সাংবাদিক বৈঠকে পিটার হিগস, পরীক্ষার মুখপাত্র
ফ্যাবিওলা গিয়ানোত্তি। পিছনে সার্ন-প্রধান রল্ফ হয়ের। ছবি: রয়টার্স।
সকাল থেকে চোখ রাখছিলাম খবরে। দেখলাম সার্ন-এর দু’দল বিজ্ঞানী তাঁদের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে জানালেন, নতুন যে কণাটির অস্তিত্বের ইঙ্গিত ওঁরা পেয়েছেন, তার ভর ১৩৩টি প্রোটন কণার মতো। এ রকমই কিছু পাওয়া যাবে বলে অনুমান ছিল। অথচ যা পাওয়া গেল, তা কিন্তু নতুনই। অনুমানের বাইরে নয়, অথচ নতুন! কণা-পদার্থবিদ্যার জটিলতা এমনই।
এখন বন্ধুবান্ধবরা ফোন করে জানতে চাইছেন, “কিছু একটা পাওয়া তো গেল। এতে লাভ কী?” নতুন কণা দিয়ে কি তৈরি হবে কোনও যন্ত্র? সেই যন্ত্র কি রাতারাতি পাল্টে দেবে দুনিয়া? যাঁরা ফোন করছেন তাঁদের বলছি, না ভাই! সার্ন-এর খবরে সব্জি বাজারে দরদস্তুর এক চুলও নড়বে না। সাধারণ মানুষের দোষ নেই। বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি তাঁদের বোঝার কথা নয়। জীবনযাপনে আরাম-বিরাম নিয়ে তাঁদের কারবার। সার্ন-এর আবিষ্কার থেকে কালই কোনও নতুন যন্ত্র তৈরি হবে না, এ কথা জানিয়েও বলছি, বিজ্ঞানে আবিষ্কার সরাসরি দৈনন্দিন জীবনের লাভের কথা চিন্তা করে না। কিন্তু লাভটা সময়ের সঙ্গে এসেই যায়।
কী রকম? মনে করে দেখুন চুম্বক আর বিদ্যুৎ যে এক, এটা আবিষ্কার করেছেন যে সব বিজ্ঞানী, তাঁরা নিজেরা বৈদ্যুতিন পাখা, টেলিভিশন কিংবা হাজারো যন্ত্রপাতি বানাননি কিন্তু। জগদীশচন্দ্র বসু যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বেতার তরঙ্গ পাঠিয়েছিলেন, তখন কি তিনি এক বারও ভেবেছিলেন মোবাইল ফোনের কথা? অথচ আজকের জীবনে প্রায় অপরিহার্য ওই মুঠোফোনটি এসেছে জগদীশের ওই কৃতিত্ব থেকেই। বিজ্ঞানে এমনটাই হয়। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে আর একটা কথা। বিজ্ঞানের গবেষণায় মোটা অর্থ বরাদ্দের সমালোচনায় মুখর অনেকেই। তাঁদের জন্য বলি, বাড়ি ফিরে টিভির সুইচ অন করলেই আইপিএল দেখা যায় ঠিকই! তাই বলে মনে করবেন না বন্ধু যে, সেটা বেশি জরুরি। দয়া করে একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন, ক্রিকেট-যজ্ঞে আমরা কত কোটি টাকা ঢালছি। বিজ্ঞান গবেষণার খবর আপনার বিনোদনের বিষয় না হতে পারে, কিন্তু সেটা থেকে কোনও না কোনও ভাবে আপনারই উপকার হতে পারে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.