চামড়ার উপরে লাল লাল দানা। সেই দানা বেরোচ্ছে প্রধানত হাত-পায়ের সন্ধিস্থল, পেট এবং গালে। কয়েকটির মধ্যে সাদা দাগ। প্রচণ্ড চুলকানি।
রোগটা শিশুদেরই বেশি হয়। প্রচণ্ড গরমে ফুসকুড়ি ভেবে ভুল করেন অনেকেই। কিন্তু রোগটি আসলে অ্যাটোপিক ডারমাটাইটিস বা এডি। পশ্চিমের দেশগুলিতে শিশুদের মধ্যে এই রোগের হার খুব বেশি। কিন্তু এখন তা চলে এসেছে এ দেশেও। কলকাতার চর্মরোগ চিকিৎসকেরা ওই ত্বকের রোগ নিয়ে বিশেষ ভাবে চিন্তিত।
চর্মরোগ চিকিৎসকদের মতে, ভারতে এখন শিশুদের যে-সব ত্বকের রোগ হচ্ছে, তার ১০ থেকে ২০ শতাংশই এডি। শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ দেখা যাচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও। রোগটি সংক্রামক নয়। এটি এক ধরনের অ্যালার্জি। তাই রোগটি বংশানুক্রমিক হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। যাদের হাঁপানি থাকে, তাঁদের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ফুলের রেণু, ধুলোবালির দূষণ এই রোগটিকে বেশি মাত্রায় সক্রিয় করে তোলে। হঠাৎ হঠাৎ তাপমাত্রা কমলে বা বাড়লেও এই রোগের আশঙ্কা থাকে। শরীরের ক্ষমতা কম থাকলে রোগটি বেশি কষ্ট দেয়। অনেক সময়েই হাঁপানি, কনজাংইটিভাইটিস এবং এডি একসঙ্গে হয় বলে জানাচ্ছেন চর্মরোগ চিকিৎসকেরা।
চর্মরোগ চিকিৎসক সন্দীপন ধর বলেন, “এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এডি বাড়ছে। এই রোগের প্রতিকারের পথ খুঁজতে ওই অঞ্চলের ১১টি দেশের চিকিৎসকেদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসক গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে। ওই গোষ্ঠী এডি চিকিৎসার নির্দেশিকা তৈরির চেষ্টা করছেন।” চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সুব্রত মালাকার জানাচ্ছেন, দূষণের কারণে বা বংশানুক্রমিক ভাবে এই রোগ হতে পারে। ঠিক ওষুধ পড়লে এক সপ্তাহের মধ্যে রোগ কমতে শুরু করে। ‘‘তবে কমে যাওয়ার পরেও রোগ ফিরে আসতে পারে” বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তিনি।
চর্মরোগের চিকিৎসক কথাকলি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ দেশে এডি রোগী এখন অনেক বেড়েছে। এটা কোনও ভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা কম বলেই অনেকে একে ছোঁয়াচে মনে করেন। স্কুল-কলেজ, অফিস, অনুষ্ঠানবাড়ি-সহ বিভিন্ন জায়গায় রোগীকে অপদস্থ হতে হয়।”
চর্মরোগের চিকিৎসকেরা এডি-র ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার উপরে জোর দিয়েছেন। তাঁরা চান, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের বিশেষ ভাবে সচেতন করা হোক। নইলে ওই রোগ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেক চিকিৎসকের আশঙ্কা। |