আর্থিক প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গকে ‘সব রকম’ সাহায্যের আশ্বাস দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল নিজেই। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু ঘোষণা করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নারায়ণন। প্রসঙ্গত, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ইস্তফার পরে অর্থ মন্ত্রকের ভার এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
এক দিকে রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট, অন্য দিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এই দুই বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মনমোহন সিংহ সরকার তথা কংগ্রেসের বিরোধ তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস ও তৃণমূল শিবিরের অনেকের মতে, এই দু’টি বিষয় সম্পর্কযুক্ত। গত এক বছর ধরে কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্য, বিশেষ করে সুদ ও আসল পরিশোধ তিন বছর স্থগিত রাখার অনুমতি না-পাওয়াতেই রাষ্ট্রপতি পদে প্রণববাবুর মনোনয়নের বিরোধিতা করেছেন মমতা।
কিন্তু এই মতবিরোধ সত্ত্বেও মনমোহন বা সনিয়া গাঁধী চান না যে, মমতা ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে যান। কারণ সে ক্ষেত্রে মুলায়ম সিংহ যাদবের উপরে সরকারের নির্ভরতা অনেক বেড়ে যাবে। তখন সমাজবাদী পার্টির প্রধান কী রূপ ধরবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কংগ্রেস শিবিরে।
এই পরিস্থিতিতে মমতা ও কংগ্রেসের মধ্যে ‘সেতুবন্ধনের’ কাজটি করছেন এম কে নারায়ণন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রী যে ভাবে দিল্লি এসে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করেন, ঠিক সেই ভাবে ‘সক্রিয়’ হয়েছেন তিনি। রাজ্যপাল গত কাল চিদম্বরম ও শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। আজ সকালে চিদম্বরমের সঙ্গে আর এক দফা বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যান নারায়ণন। আর্থিক সাহায্য ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। মনমোহন অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পর মন্টেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বৈঠকে তাঁর উপস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করার আগে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর বৈঠক হয়েছিল। নানা খাত থেকে রাজ্যকে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বন্দোবস্ত হয় সেই বৈঠকে। কিন্তু ঋণের আসল ও সুদ মকুব করা নিয়ে জট কাটানো সম্ভব হয়নি। অথচ সেটাই মমতার মূল দাবি। কারণ, কেন্দ্র যে টাকা দিচ্ছে, তার সবই উন্নয়ন খাতে। যা বরাদ্দ করা হবে যোজনা কমিশনের মাধ্যমে এবং সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্যই তা খরচ করা যাবে। কিন্তু মমতার সরকারের বক্তব্য, রাজ্যের আয়ের থেকে আসল ও সুদ পরিশোধের পরিমাণ বেশি। ফলে দৈনন্দিন খরচ চালাতে ফের দেনা করতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বরাদ্দ টাকা কোথায় কোথায় খরচ করা হবে, তা ঠিক করার ক্ষেত্রে রাজ্যকে যতটা সম্ভব স্বাধীনতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আজ নারায়ণনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও মন্টেকের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক প্যাকেজ সংক্রান্ত সমস্ত ফাইল প্রণববাবু মনমোহনের হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছেন। সেই ফাইল ধরেই আজ কথা হয়েছে।
বৈঠক শেষে রাজ্যপাল বলেন, “নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি অবশ্যই তার মধ্যে ছিল।” প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে কি কোনও ইতিবাচক সাড়া মিলেছে? নারায়ণনের জবাব, “প্রধানমন্ত্রী রাজ্যকে সব রকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর আবেদনে সাড়া মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। যদিও কেন্দ্রের নিজেরই কোষাগারের অবস্থা যেখানে সুবিধের নয়, সরকারকে ব্যয়সঙ্কোচের পথে হাঁটতে হচ্ছে, সেখানে তিন বছরের জন্য সুদ-আসল মকুব করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশের প্রশ্ন রয়েছে। |