প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের পরে জ্যোতি বসুর জন্মদিনও দু’দিন আগেই বিধানসভায় পালন করবে রাজ্য সরকার। আগামী ৬ জুলাই, শুক্রবার বিধানসভায় ওই জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিত থাকার কথা। বিধানসভার চলতি অধিবেশন এক দিন বাড়িয়ে শুক্রবার পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত মঙ্গলবারই নেওয়া হয়েছে। সেই বর্ধিত দিনে জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালন করে ‘বিধান-বিতর্কে’র পিঠোপিঠি বিরোধীদের বার্তা দিতে চাইছে সরকার।
বিরোধী বামফ্রন্ট অবশ্য সরকারি ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না। বামফ্রন্ট বিধায়কদের নিয়ে আলোচনার পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী রবিবার ৮ জুলাই জ্যোতিবাবুর জন্মদিনেই তাঁরা বিধানসভায় বসু-স্মরণ করবেন। বিধানচন্দ্রের জন্মদিনের মতোই ৮ তারিখও ছুটির দিন হলেও বিধানসভায় বসুকে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা রাখা হতে পারে বলে বিধানসভার সচিবালয় সূত্রের খবর। তবে সেই অনুষ্ঠান স্বভাবতই ‘সরকারি অনুষ্ঠান’ হবে না।
বিধানচন্দ্রের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে শাসক-বিরোধী যে ‘তিক্ততা’ তৈরি হয়েছিল, জ্যোতিবাবুর জন্মদিন পালনের মাধ্যমে তাতে যবনিকা টানার একটা চেষ্টা রয়েছে সরকারি তরফে। মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন এই বার্তাই দিতে যে, ছুটির দিনে জন্মদিন হলে সকলের ক্ষেত্রেই এক নীতি পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে কোনও ‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ নেই (এ দিনই স্পিকারের তরফে ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্পিকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তিনি বসুর জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন)। তবে বিরোধীরা এই যুক্তি মানতে একেবারেই নারাজ।
এই আবহেই এ দিন বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের দিন বাড়ানো নিয়ে শাসক-বিরোধী বিতর্ক হয়েছে। সভার দিন বাড়ানো নিয়ে বৈঠকে আপত্তি তোলেন বিরোধী সদস্যরা। কাল, বৃহস্পতিবার বিধানসভার অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আরও কিছু বিল আনার কথা বলে সরকার পক্ষ অধিবেশন এক দিন বাড়িয়েছে। বিধানসভার মধ্যেই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান এ দিন প্রশ্ন তোলেন, অধিবেশনের মেয়াদ ১২ দিন কমিয়ে এনে আবার কেন এক দিন বাড়ানো হল? বিধায়কেরা তো নিজেদের কর্মসূচিই ঠিক করতে পারছেন না এত ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের ফলে! স্পিকার তাঁদের বলেন, “অধিবেশন কমিয়ে দিলে আপনারা বলেন, বিরোধীদের বিতর্কের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এখন আবার বলছেন কেন দিন বাড়ানো হচ্ছে? কী যে চাইছেন! আমি কোন দিকে যাব বুঝতে পারছি না!”
সভার দিন বাড়ানোর পাশাপাশিই এ দিন কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৩১ অগস্ট থেকে এক সপ্তাহের স্বল্পকালীন অধিবেশনের প্রস্তাবও দেন স্পিকারের কাছে। তৃণমূল পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, চলতি অধিবেশনে ৮-১০টির বেশি বিল আলোচনার জন্যে পেশ করা যায়নি। অথচ বেশ কিছু ‘প্রয়োজনীয়’ বিল রয়েছে। সেগুলি বিধানসভায় পেশ করার তাগিদেই স্বল্পকালীন অধিবেশনের প্রস্তাব। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবু বলেন, “আমার যা বলার কমিটির বৈঠকে বলেছি। বাইরে কিছু বলব না।” কমিটির বৈঠকেই এ দিন পার্থবাবু জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ঋণের উপরে তিন বছরের জন্য সুদ মকুবের (মোরাটোরিয়ামের) দাবি নিয়ে দিল্লিতে সর্বদল প্রতিনিধি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এই অধিবেশনেই বেসরকারি প্রস্তাব আনা হতে পারে। সূর্যবাবুরা অবশ্য এ দিন বাম পরিষদীয় দলে আলোচনার পরে স্পষ্টই বলেছেন, ‘মোরাটোরিয়াম’ নিয়ে প্রস্তাব সমর্থনে তাঁদের আপত্তি আছে। কারণ, এই দাবির কোনও সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। যে বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনও রাজ্যকে সুদ মকুব করার সুযোগ দেওয়া যায়, তা পশ্চিমবঙ্গের উপরে প্রযোজ্য নয়। বাকি কী কী দাবি নিয়ে রাজ্য সরকার দিল্লিতে দরবার করতে চায়, সেই বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে আগাম আলোচনার দাবিই বহাল রেখেছে ফ্রন্ট। |