পুকুরে মাটি কাটতে গিয়ে ইট পাতা ঢালু ঘাটের সন্ধান মিলল কান্দির খড়গ্রামের পারুলিয়া অঞ্চলে। ওই এলাকায় ওই জলাশয়টি পুরান দিঘি নামেই পরিচিত। জলাশয় থেকে পাওয়া গিয়েছে একটি মস্তকহীন বিগ্রহ ও পুজোর উপচার শাঁখ ও মাটির পাত্র। পুরাতাত্ত্বিকেরা জানাচ্ছেন, ওই প্রত্নবস্তুগুলি সম্ভবত সেন যুগের। সেক্ষেত্রে ওই এলাকায় একাদশ-দ্বাদশ শতকে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রভাব বৌদ্ধ সংস্কৃতির সমতুল্য হয়ে উঠেছিল, এমন মনে করে নেওয়া যেতে পারে।
ইতিহাসবিদ বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পাল আমলে গোটা বাংলা জুড়েই বৌদ্ধদের প্রভাব ছিল। তার মধ্যে রাঢ় বাংলায় প্রভাব ছিল বেশি। খড়গ্রাম, পারুলিয়া এলাকাতেও তাই বৌদ্ধ প্রভাব ছিল। কিন্তু এই এলাকায় বর্ণহিন্দুদের সঙ্গে তাঁদের সহাবস্থান ছিল।” পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ। তার পরে সেন আমলে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রভাব বাড়তে থাকে। সেখানেও সেই সমৃদ্ধির ছাপ পড়েছে। পারুলিয়া থেকে পাওয়া মূর্তিটি সেন যুগের অনুপম শিল্পকলার নিদর্শন। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় বলেন, ‘‘মস্তকহীন মূর্তিটি সূর্য মূর্তি হতে পারে। |
সম্ভবত সেন যুগে নির্মিত। ওই যুগের শিল্পকলার নৈপুণ্য দেখা যাচ্ছে। তবে বিগ্রহটি পারিবারিক উপাস্য দেবতাই ছিল। তখন বাংলায় পঞ্চ উপাসনা চলত। তারই অন্যতম সূর্য। তা ছাড়াও সেই সময়ে সূর্য উপাসকেরা ছিলেন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রচার তখন তুঙ্গে উঠেছিল।”
অমলবাবু জানান, ঘাটের ইটগুলো খাড়া ভাবে রাখা। এটা সুপ্রাচীন ধারা। এখনও অনেক জায়গায় জলাশয় বাঁধাতে গেলে এখনও এমনটাই দেখা যায়। তবে এই পাড় কবে নাগাদ বাঁধানো হয়, সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, ইটগুলো লম্বা, তাই তা প্রাক মুসলিম যুগের বলেই মনে হচ্ছে। তাঁর ধারণা, “খনন করলে ঘাটটির দু’টি পর্যায় পাওয়া যেতে পারে। স্থানীয় শাসক বা বণিক এই ঘাট তৈরি করে দিতে পারেন। তবে যিনিই করুন, তিনি বিত্তশালী ছিলেন।”
এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, ওই পুকুরে বরাবরই জল দেখেছেন তাঁরা। সম্প্রতি জল শুকিয়ে যায়। তারপরেই একশো দিনের কাজে পুকুর খনন করা হচ্ছিল। সেই সময়েই পারুলিয়া ঘাট বরাবর ওই ইট পাওয়া যায়। |
মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে পাওয়া গিয়েছে মস্তকহীন এই বিগ্রহটি। পুরাতাত্ত্বিকদের অনুমান,
এটি সেন যুগে তৈরি কালো পাথরের সূর্য মূর্তি। ছবিটি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক। |
তারপর মেলে অন্য প্রত্নবস্তুগুলি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, মূর্তিটি কোনও কারণে ভেঙে গিয়েছিল বা তা বাঁচাতে পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গেই বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল শাঁখ ও অন্য উপচারও। তাই সে সব পুকুর থেকে পাওয়া যায়। মাটির পাত্রগুলিও পুরনো। অনুমান করা যায় সেগুলিও সেনযুগের। পুজোর জিনিসপত্রই রাখা হত তাতে। অমলবাবু বলেন, “খড়গ্রাম, কান্দি এলাকায় মন্দির বৌদ্ধ বিহার আমরা আগেই পেয়েছি। সদ্যপ্রাপ্ত প্রত্নবস্তুগুলির ভাল করে রেকর্ড করার দরকার রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু ভাল ভাবে সংরক্ষণও করা দরকার।” খড়গ্রামের বিডিও রবিউল ইসলাম বলেন, “আমরা গোটা বিষয়টিই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পুরাতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।” |